E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিশু ইরার ভবিষ্যত শুধুই অন্ধকার!

২০১৭ নভেম্বর ১৬ ১৬:০৮:১৬
শিশু ইরার ভবিষ্যত শুধুই অন্ধকার!

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : তিন বছরের ফুটফুটে শিশু ইরা এখনো জানে না তার জন্মদাত্রী মা আর বেঁচে নেই! মায়ের মত যাকেই দেখছে তাকেই মা ভেবে জড়িয়ে ধরছে। ফুলের মত নিষ্পাপ এই শিশুকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দরিদ্র-অসহায় নানা-নানী, খাল এবং মামা। খালা জেসমিনকে মা মনে করে তাকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিতে চাচ্ছে না। ইরা বর্তমানে নানা-নানীর কাছে রয়েছে।

পরিবারের লোকজনের অভিযোগ যৌতুকের দাবিতে স্বামী-শ্বাশুড়ীসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন নির্যাতনে চালিয়ে তাদের আদরের কন্যা গৃহবধূ শিরিনা খাতুনকে হত্যা করেছে।

পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় চার বছর আগে মিরপুর উপজেলার চারুলিয়া গ্রামের ট্রাক চালক রবিউল ইসলামের সাথে কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সাহাবুদ্দিনের কন্যা শিরিনা খাতুনের (২০)
বিয়ে হয়। রবিউল লেখা পড়া তেমন একটা না জানলেও শিরিনা কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে।

বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্বামী রবিউল, শ্বাশুড়ী, ননদসহ পরিবারের লোকজন যৌতুকের জন্য গৃহবধু শিরিনার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। শিরিনার রং মিস্ত্রি দরিদ্র পিতা মেয়ের সুখের কথা ভেবে কয়েক দফায় জামাই রবিউলের হাতে ২ লাখ টাকা যৌতুক তুলে দেয়। কিন্তু এর পরও আরো টাকার দাবিতে শিরিনার উপর নির্যাতন চলতে থাকে।

এর মধ্যে রবিউল-শিরিনা দম্পতির কোল জুড়ে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধু শিরিনা খাতুন ৭ এপ্রিল ২০১৫ ইং তারিখে কুষ্টিয়া মডেল থানায় শ্বাশুড়ী আছমা খাতুন, ননদ বিউটি ও ননদের স্বামী সাইদুলের নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। জিডি নং-৩১৫। কিন্তু জিডি’র পরও শিরিনার উপর নির্যাতনের খড়গ থামেনি। বরং বেড়ে যায়।

শিরিনার মৃত্যুর চার মাস আগে থেকে রবিউল মিরপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরের পশ্চিম মজমপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি ভাড়া নেয়। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায়
গৃহবধূ শিরিনার মৃত দেহ পুলিশ উদ্ধার করে।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ দুই একদিন পর পরই ওই বাড়ি থেকে চিৎকার, কান্না শোনা যেত। ঘটনার দিন সকালেও চিৎকার, কান্নার আওয়াজ প্রতিবেশীরা শুনেছেন। পুলিশ শিরিনার দেহ মাটিতে নামানোর পর পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা শিরিনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন
দেখতে পান।

শিরিনার মা বেলী খাতুন অভিযোগ করেন তার মেয়েকে তার জামাই, শ্বাশুড়ী, ননদসহ শ্বশুড় বাড়ির লোকজন নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করে।

এ ঘটনায় শিরিনার বড় বোন জেসমিন খাতুন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় শিরিনার স্বামী রবিউল ইসলাম ও শ্বাশুড়ী আসমা খাতুনের নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ঘটনার পরের দিন গত ৭ জুলাই
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী) ০৩ এর ১১ (ক) ৩০ অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ এ ঘটনায় শিরিনার স্বামী রবিউল ইসলাম ও শ্বাশুড়ী আসমা খাতুনকে গ্রেফতার করে। রবিউল এখনো কারাগারে থাকলেও কুষ্টিয়া এলজিইডিতে পিওন হিসেবে কর্মরত শিরিনার শ্বাশুড়ী আসমা
খাতুন অসুস্থ সেজে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আদালত থেকে বের হয়ে শিরিনার স্বামী আসমা খাতুন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শিরিনার পরিবারকে অব্যাহতভাবে হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতোমধ্যে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। ময়না তদন্তে এটি আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু পুলিশি তদন্তে তারা তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন শিরিনাকে তার স্বামী-শ্বাশুড়ীসহ শ্বশুড়
বাড়ির লোকজন প্ররোচনা দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। চলতি মাসেই এ ব্যাপারে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।

(কেকে/এসপি/নভেম্বর ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test