E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁয় প্রতিমা ভাংচুর : ৬ আসামীর জামিন 

২০১৭ নভেম্বর ২০ ১৭:১৬:১৭
নওগাঁয় প্রতিমা ভাংচুর : ৬ আসামীর জামিন 

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত (ভাটোপাড়া) গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালিমন্দিরের কালি প্রতিমাসহ ৫টি প্রতিমা ভাংচুর করে হিন্দু ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানার ঘটনায় অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুল ইসলামসহ ৬ আসামী জামিন লাভ করেছে।

গতকাল রবিবার আত্রাই থানার পুলিশ তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

আসামীদের পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা মামলার বাদী সংখ্যালঘু নিরাঞ্জন প্রামানিককে আদালতে হাজির করিয়ে আসামীদের পক্ষে কথা বলিয়ে নিয়ে তাদের জামিন ত্বরান্বিত করা হয়েছে বলে ওই গ্রামের সংখ্যালঘুরা জানিয়েছে। ফলে স্থানীয় সংখ্যালঘুরা বিব্রত ও চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উক্ত শহীদুল ইসলাম একসময় বিএনপির ক্যাডার ছিল। বিগত ২০০৪ সালে বাংলাভাইয়ের জেএমবির জঙ্গী তৎপরতার সময় সে ছিল জেএমবির সক্রিয় কর্মী। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল নাগাদ সে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়। আওয়ামীলীগে যোগদানের পর থেকে সে যেন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সে স্থানীয় খাস জমি ও জলাশয় জবরদখল, অবৈধ সুতি জাল দিয়ে বে-আইনীভাবে মৎস্য নিধন, চাঁদাবাজি, উচ্চ সুদে দাদন ব্যবসা, মাঠে সেচ প্রকল্পে আধিপত্য বিস্তার, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে হিন্দু ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানাসহ বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাধারনের কাছে বিতর্কিত করে তুলতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এসব কিছুই করছে, আওয়ামীলীগ ও স্থানীয় এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে। এলাকার সাধারন মানুষসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও তৃনমুল নেতাকর্মীরা তার এহেন কর্মকান্ডে অতীষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু প্রভাবশালী নেতার হয়রানীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত এলাকার মানুষ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই বড়কালিকাপুর গ্রামের হিন্দুরা গ্রামের মাঠে একটি সেচ প্রকল্প পরিচালনা করে আসছিল। সেই প্রকল্পের মালিকানা ছিনিয়ে নেয় উক্ত আওয়ামীলীগ নেতা পার্শ্ববর্তী রানীনগরের মেরিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম। এর পর থেকে সে সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কৃষকের কাছে সেচ খরচ বৃদ্ধি করে। কৃষকরা অধিক সেচ খরচ দিতে অপারগতা প্রকাম করলে শহীদুল মরিয়া হয়ে ওঠে। এনিয়ে বড়কালিকাপুর গ্রামের হিন্দুদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে।

এই দ্বন্দ্ব মিমাংসার জন্য শুক্রবার রাতে মন্দিরের পাশেই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক চলাকালে তাদের মাঝে বাক-বিতন্ডার একপর্যায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ফলে রাত ১২টার দিকে বৈঠক পন্ড হয়ে যায়। এরপর সকলে বাড়িতে চলে যাবার পর মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাংচুর করা হয়। শনিবার ভোরে গ্রামের লোকজন মন্দিরের প্রতিমাগুলো ভাঙ্গা দেখে পুলিশে খবর দেয়।

শনিবার বিকেলে ওই মন্দির কমিটির সভাপতি নিরাঞ্জন প্রামানিক বাদী হয়ে আত্রাই থানায় আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক, তার ছেলে রনি ইসলাম, মোঃ পলাশ খান ও মোঃ রতন খন্দকারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওইদিনই এজাহারভুক্ত ৪জনসহ শহিদুলের ভাগ্নে ছাত্রদল নেতা মোঃ স্বপন ও মোঃ কালাম প্রামানিকসহ মোট ৬জনকে গ্রেফতার করে।

অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতারের পর ওই হাইব্রিড নেতাসহ ৬ জনকেই থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা নামধারী কিছু নেতা। এতে খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে মামলার বাদীকে দিয়েই তারা আসামীদের জামিনের পথ সুগম করে। এমনকি তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।

(বিএম/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test