E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাগুরা ১ : আ. লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী দুই, বিএনপিতে একাধিক 

২০১৭ নভেম্বর ২০ ১৭:৫৩:১৫
মাগুরা ১ : আ. লীগে সম্ভাব্য প্রার্থী দুই, বিএনপিতে একাধিক 

মাগুরা প্রতিনিধি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা । ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামলেও, বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিং চালানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের নেতারাও নির্বাচন কে সামনে রেখে তৎপর রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব অ্যাডঃ সাইফুজ্জামান শিখর প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামায় এ আসনটিতে নির্বাচনী হাওয়া বেশ জোরে সরে বইতে শুরু করেছে। এ ছাড়া মাগুরা-১ আসনের এমপি এটিএম আব্দুল ওয়াহ্হাব বিভিন্ন সভাসমাবেশে অংশ নেয়ার পাশাপাশি চালাচ্ছেন নির্বাচনী তৎপরতা।

মাগুরা সদরের ১৩টি ইউনিয়ন ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-১ আসন (সংসদীয় আসন-৯১)। ১৯৯৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আসনটি আওয়ামীলীগের দখলে রয়েছে। ৯৬ থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচন পর্যন্ত পর-পর ৪ টি সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে এমপি ছিলেন প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবর। ২০১৫ সালের ৯ মার্চ সিরাজুল আকবর এমপির আকস্মিক মৃত্যুর পর এ আসনে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুল ওযাহহাব।

এমপি আব্দুল ওয়াহ্হাব আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে মাঝে মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় এসে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তবে জেলা আওয়ামীলীগের কর্মসূচিগুলোতে তার তেমন উপস্থিতি চোখে পড়ছে না। জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে তার ব্যাপক দূরত্ব আছে এমন অভিযোগ অনেকেরই। যা তার প্রার্থীতা ও আগামী নির্বাচনের অংশ গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে অনেকেরই ধারনা।

তবে জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য এটিএম আব্দুল ওয়াহহাব বলেন, এমপি হিসেবে তিনি রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করেছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকার নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাদের কাছে যাচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। তিনি দাবি করেন তৃণমূল জনগন তার সাথে আছে। তিনি আশা করছেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে আবারও বিজয়ী হবেন। দলের সাথে দূরত্বর ব্যাপারে তিনি বলেন, দলের নেতাদের সাথে তার কোন দূরত্ব নেই।

অন্যদিকে এ আসনে আওয়ামীলীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আছাদুজ্জামান এমপি’র ছেলে সাইফুজ্জামান শিখর। বর্তমানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা আওয়ামীলীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কর্মসূচি ও রাজনৈতিক নিয়মিত তৎপরতায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে মাগুরায় আসছেন।

দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের আস্থার নেতা মরহুম আছাদুজ্জামানের ছেলে হিসেবে জেলার রাজনীতিতে সাইফুজ্জামান শিখরের একটি অবস্থান রয়েছে। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক কান্ড থেকে শুরু করে নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশে ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

জেলা, উপজেলা, পৌর সভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামীলীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তার সাথে এ সকল কর্মসূচিতে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। সর্বপরি নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও প্রকাশ্যে কোন গ্রুপিং না থাকায় মাগুরায় ক্ষমতাশীন দলের গোটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে সাইফুজ্জামান শিখরকে ঘিরেই।

অন্যদিকে সাইফুজ্জামান শিখরের পক্ষে তার বড় বোন মহিলা এমপি কামরুন লাইয়া জলিও তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ইতিবাচক ভুমিকা রাখছেন। তিনিও বিভিন্ন সামাজি ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন।

জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতৃবৃন্দের দাবি, সাইফুজ্জামান শিখর মাগুরা-১ আসনের জন্যে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলার রাজনৈতিক সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সহযোগিতা পাচ্ছেন। তার পিতাকে মাগুরার মানুষ বার-বার এমপি নির্বাচিত করেছেন।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে এলাকার মানুষের প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে। মাগুরার রেল লাইন, ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল মিল চালু, নবগঙ্গা ব্রীজ, এলাংখালী সেতুসহ জেলার অন্তত অর্ধশত উন্নয়ন কার্র্যক্রম বাস্তবায়নে তার অবদান রয়েছে । এ ছাড়া জেলার খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি মানুষের ব্যাপক আস্থা তৈরি হয়েছে। যে কারনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে ভোটাররা তাকে সহজে গ্রহন করবেন।

মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হলে জেলার উন্নয়ন আরো বেগবান হবে উল্লেখ করে সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, নির্বাচন কমিশনারের নীতিমালা মেনে এমপি নির্বাচনের লক্ষে তিনি অনেক আগে থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক একান্ত সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। জেলাবাসী চাইলে নির্বাচিত হয়ে তার বাবার মত দেশ ও মানুষের জন্য সব ধরনের আত্মত্যাগে আমি প্রস্তুত। সে লক্ষ্যেই ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমি সব সময় মাগুরার মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তাদের সুখ দুখের অংশিদার হয়েছি।

জেলা অওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ তানজেল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তরুনদের নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন। সেক্ষেত্রে তরুন নেতৃত্ব হিসেবে সাইফুজ্জামান শিখরের এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি দলীয় মনোনয় পেলে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে তাকে সহজে বিজয়ী করিয়ে আনতে সমর্থ হবেন।

অন্যদিকে দলীয় কোন্দল বিভক্তিতে জড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কাদাছুড়াছুড়িতে ব্যস্ত বিএনপি’র প্রায় হাফ ডজন নেতা মাগুরা-১ আসনে দলীয় মনোনয়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা কবীর মুরাদ। জেলা বিএনপি’র প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ও আরাফাত রহমান কোকোর মামা শ্বশুর সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী, মাগুরা পৌর সভার সাবেক মেয়র ও ২০০৮ সালে চারদলী জোটের প্রার্থী বর্তমান জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল আকতার খান কাফুর, জেলা বিএনপির অপর যুগ্ম আহবায়ক আহসান হাবিব কিশোর ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য বহুল অলোচিত ট্রাকে পেট্রোল বোমা হামলায় ৫ শ্রমিক হত্যা মামলার আসামী হয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত মনোয়ার হোসেন খান।

কবীর মুরাদ তার প্রার্থীতার ব্যাপারে বলেন, বিএনপির চরম দুঃসময়ে তিনি ৮ বছর মাগুরা জেলা বিএনপি’র সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জীবনটাই অন্দোলনের মধ্য দিয়ে কেটেছে। আন্দোলন করতে গিয়ে বিভিন্ন অত্যাচার নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন। দলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে দলের জন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপির অপর মনোনয় প্রত্যাশী জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ মুকাদ্দেস আলী।

তিনি বলেন, দলের জন্ম লগ্ন থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দুঃসময়েও দলের সাথে ছিলেন। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে দলকে গোছাতে কাজ করে যাচ্ছি। যে কারনে তিনি মনোনয়ন পেলে দলে কোন বিভেদ থাকবে না।

ইকবাল আকতার খান কাফুর বলেন, তিনি দুই বার মাগুরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিকবার এমপি ইলেকশন করেছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সামান্য ভোটে হারলেও মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মী ভোটাদের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক । যে কারনে তিনি মনোনয়ন পেলে সহজে জয়ী হবেন।

অপর প্রার্থী আহসান হাবিব কিশোর বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে সমপৃক্ত রয়েছি। যুবদলের পর জেলা বিএনপির সর্বশেষ কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জেলা আহবায়ক কমিটির তিনি যুগ্ম আহবায়ক। রাজনীতিতে তার যথেষ্ঠ ত্যাগ রয়েছে। মাগুরায় বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আগামীতে বিএনপির মূল ধারার বাইরে কেউ মনোনয়ন পাবেন না। যে কারনে তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন।

বিএনপির হরতাল অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালে ২১ মার্চ মাগুরার মঘির ঢালে পেট্রোল বোমায় ৫ শ্রমিক হত্যা মামলার মামলার আসামী হয়ে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে নির্বাসিত জীবনে থাকা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন খান মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, তিনি ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী হলেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন। যে কারনে দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তার বিশ্বাস। তিনি দাবী করেন বিগত দিনে মাগুরার মানুষের বিপদে পাশে দাড়িয়েছেন। তৃণমূলের সাথে তার ছিল নিবিড় সম্পর্ক যে কারনে মনোনয়ন পেলে তিনি বিজয়ী হবেন।

এছাড়া শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি বদরুল আলম হিরো দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ আলী করিম জানান, বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, সকল নেতা-কর্মী তার পক্ষেই কাজ করবে।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা হাসান সিরাজ সুজা জানিয়েছেন, পাটির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন বলে ঘোষাণা করেছেন। যে কারনে নির্বাচনে তিনি (হাসান সিরাজ সুজা) জেলা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মাগুরা-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া জেলা জাসদের সভাপতি এটিএম মহব্বত আলী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন।

(ডিসি/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test