E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সিরাজগঞ্জ ৫ : মনোনয়ন পাবার দৌড় প্রতিযোগিতায় আ. লীগ-বিএনপি

২০১৭ নভেম্বর ২১ ১৪:৫৭:৩৩
সিরাজগঞ্জ ৫ : মনোনয়ন পাবার দৌড় প্রতিযোগিতায় আ. লীগ-বিএনপি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি উপজেলা আর যমুনা নদীর করাল থাবায় আক্রান্ত চৌহালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জ ৫ সংসদীয় আসন । আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র ডজন খানেক প্রার্থী রয়েছেন মনোনয়ন পাবার দৌড় প্রতিযোগিতায়। 

তারা মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মীদের পারিবারিক, দলীয় বর্ধিত সভা, সভা-সমাবেশ, ধর্মীয়-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাড়ানো ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা প্রদান আর নেতা নেত্রীদের ছবি সংবলিত পোষ্টার, ব্যনার ফেস্টুন সটিয়ে ইতিমধ্যেই এলাকাজুড়ে নির্বাচনী আবহ তৈরী করছে। অনেকই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দেকে এলাকার এনে ত্রান বিতরন করে এলাকাবাসীর দৃষ্টি আর্কষনের চেষ্ঠা করছেন।

ভুরি ভোজের আয়োজন করে কেউ কেউ জমজমাট নির্বাচনী প্রচারনাও শুরু করেছেন। অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারনায় বসে নেই জামায়াত। তারা হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নিতে সব রকম প্রস্তুতি চুড়ান্ত করেছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে সাধারন ভোটরদের প্রত্যাশা মনোনয়ন দেবার ব্যাপারে সবদলই যেন প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দায়িত্বশীলতা, সততা, ত্যাগ, শিক্ষিত ও রাজনৈতিক ক্যরিয়ারের বিষয়টি গুরুতের সাথে বিবেচনা করে চুড়ান্ত প্রার্থীতা ঘোষনা করেন।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনটি তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচি ও যমুনা বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার মোট ১৩ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বেলকুচির মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭২ ও চৌহালীর মোট ভোটার ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৫৬। প্রচলন রয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন তারাই দেশ পরিচালনা করেছেন। তাই এ আসনটির দিকে সব দলেরই বিশেষ একটি নজর থাকে। তবে ভোটের সংখ্যায় ভারী বেলকুচি উপজেলা থেকেই সাধারনত রাজনৈতীক দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন।

এছাড়া বেলকুচি উপজেলায় রয়েছে কারিগর ও গৃহস্ত সম্প্রদায়ের বাস।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন কারিগর সম্প্রদায়। প্রার্তী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিশেষবিবেচনায় এনে প্রার্থী মনোনয়ন করাও হয়। প্রচলন রয়েছে কারিগর সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক ভিত শক্ত থাকায় এই সম্প্রদায়ের কোন প্রার্থী মনোনয়ন পেলে দলীয় ব্যানারের বাইরে সম্প্রদায় ভিত্তিক ভোট প্রদান করা হয়।

আওয়ামী লীগ

গুরুত্বপূর্ন এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য, মন্ডল গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডলের নাম সোনা য়াচ্ছে। তবে দলের অনেকের মতে তার স্বারীরিক অসুস্থতার কারনে এবারে নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন নাওয় চাইতে পারেন।

তিনি একজন সজ্জন ও সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এনায়েতপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও রাজনীতির মাঠে তিনি নতুন। দলীয় বিভিন্ন কৌশলে তিনি খুব বেশি সফল না হতে পারায় অনেক নেতাকর্মীই তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে রয়েছে। এদিকে আগামী নির্বাচনে তার ছেলে মন্ডল গ্রুপের পরিচালক আব্দুল মমিন মন্ডল নমিনেশন চাইবেন বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। এরই মধ্যে তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি জনসভা ও উন্নয়ন মুলক কাজের অনুষ্ঠান তার আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রচরনা বলে দলীয় নেতাকর্মীদের ধারনা।

বর্তমান এমপির সমর্থকেরাও এরই মধ্যে তাকে নিয়ে দলীয় কর্মকান্ড করে আসছেন। অপরদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সাবেক সফল মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ রাজনৈতীক জীবনে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হয়েছিলেন ক্যবিনেট মন্ত্রী । করেছেন বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ। তবে মন্ত্রী থাকাকালীন তার নিকটতম ব্যাক্তি ও আত্বীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা নির্বাচিত করায় অনেকের কাছেই আবার বিরাগ ভাজন হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী।

গুঞ্জন আছে তারা প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করলেও বর্তমান এমপি ও অপর মনোনয়ন প্রাত্যাশীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন গোপনে। তবে প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সব সময় মাঠে থাকে নেতা কর্মীদের সুখ দুখের ভাগিদার এই নেতা। এদিকে বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ মন্ডল ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের মধ্যে বিরোধ এখন অনেকটাই প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। করছেন একে অন্যের কঠোর সমালোচনা। তারা নিজ নিজ সমর্থক নিয়ে পৃথক পৃথক ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালনসহ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারনা।

সাবেক ছাত্রনেতা মীর মোশারোফ হোসেন, ঢাকার বনানী থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও বেলকুচির বেশ কয়েকটি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এলাকায় নির্বাচনী সভা সমাবেশে নিজের প্রার্থীতা ঘোষনা করে সমর্থক, কর্মী ও ভোটার বৃদ্ধিতে গনসংযোগ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তার সু-সম্পর্ক থাকায় হাইকমান্ডের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং।

মনোনয়ন পাবার ব্যপারে আশাবাদী তিনি। অপরদিকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মোহন বলেন, আমি মনে করি মানুষের জন্য ভাল কিছু করার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। তাই আগামী নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে জনকল্যাণে কাজ করে যাবো।

বিএনপি

এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের কারনে দলটি নানা ভাগে বিভক্ত। কোন্দলের জেরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দলের একটি অংশ অপর অংশকে দোশারফ করে দলীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাকে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়েও অবাঞ্চিত করার ঘটনাও ঘটে। এ আসনে বিএনপির নবীন ও প্রবীন বেশ কয়েক বেশ কয়েক জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ছাত্রদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক, বর্তমান কেন্দ্রিয় বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম এলাকায় দলীয় ও বিভিন্ন কর্মসূচির পালনের মধ্যে দিয়ে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলজুলুমে ক্ষতিগ্রস্থ নেতাকর্মীদের পাশে দাড়ানো সহ বন্যায় ক্ষতি গ্রস্থ্যদের মাঝে ত্রান বিতরন, অসহায়দের পাশে থাকেন সব সময়। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সু সম্পর্ক থাকায় তার মনোনয়ন পেতে তিনি এগিয়ে থাকবেন বলে অনেক তৃনমূল নেতাকর্মীদের ধারনা।

বেলকুচি ডিগ্রি কলেজসহ একাধিক বিদ্যাপিঠের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবু কোরাইশ খানের ছেলে ও সাবেক এমপি শহিদুল্লাহ খানের ভাতিজা গোলাম মওলা খান বাবলু নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং মনোনয়ন পেতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এবং মেজর (অব:) মুঞ্জুর কাদের ২০০৮ সালে এমপি প্রার্থী মনোনিত হলে কেন্দীয় নেতাদের অনুরোধে মুঞ্জুর কাদেরকে ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান।

তবে তিনি এলাকার উন্নয়ন, নেতা কর্মিদের পাশে থেকে সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। এক এগারোর সময় আটক ও মামলার জর্জরিত নেতা কর্মীদের কাছে তার অবদানের কথা এখনও মুখে মুখে। এছাড়া ওরিয়েন্টাল গ্রুপের পরিচালক রকিবুল করিম খান পাপ্পু বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তিনি অল্প দিনের ব্যবধানে জেলা বিএনপি’র সদস্য থেকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে গনভোজ ও গনসংযোগ কার্য় সকলের দৃষ্টিতে আসার চেষ্টা করছেন। তিনি জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কারনে নেত্রী তাকেই মনোনয়ন দিবেন বলে তিনি শতভাগ আশাবাদি।

তিনি নিজেও বিভিন্ন দুর্যোগে এলাকাবাসীর মধ্যে ত্রান ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি অসহায় মানুষের সহয়তা করে এলাকায় উন্নয়নে কাজ করছেন। বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী এবং ধনাট্য ব্যাক্তি হিসাবে তার পরিচয় রয়েছে। তিনি দাবী করেন তিনি এলাকায় মূল ধারার রাজনৈতীক নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে নির্বাচনী করে চলছেন। সাবেক এমপি মেজর (অব:) মুঞ্জুর কাদের নিরবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে দশম নির্বচনের পর থেকে দলীয় কোন কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ এলাকায় নেতাকর্মীর সাথে তার কোন দেখা সাক্ষাত নেই, রাখেন না কোন খোজ খবর। তাই এই প্রার্থীকে নিয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনাসর আলী সিদ্দিকীর ছেলে, চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব:) আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারন সম্পাদক হুময়ুন ইসলাম খান ।

অপর দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে বসে নেই জামায়াত। তারা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নিদের্শনায় দলের প্রার্থী হিসেবে বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আলী আলমকে নিয়ে অনেকটা কৌশলে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের সকল প্রস্তুতি নিয়েছেন বেলকুচি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী আরিফুল ইসলাম সোহেল ।

সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-কামারখন্দ) আসন থেকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল লতিফ বিশ্বাস ৫১ হাজার ৬৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দদ্বী বিএনপির শহীদুল্লাহ খান ৪৮ হাজার ৩৬০ ভোট, জামায়াতের আলী আলম ২৩ হাজার ৮১৫ ভোট এবং জাতীয় পার্টির ওমর ফারুক প্রভাত ১৬ হাজার ৩৯১ ভোট পান।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিচারপতি মোজাম্মেল হক ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দদ্বী আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ বিশ্বাস ৫৪ হাজার ৬৩০ ভোট পান। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমান ১৪ হাজার ১৮১ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনে আবদুল লতিফ বিশ্বাস ১ লাখ ১৯ হাজর ৫৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দদ্বী চারদলীয় জোটের মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩০ ভোট পান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান রতনকে হারিয়ে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল মজিদ মন্ডল বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়।

(এমএসএম/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test