E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় আ. লীগ নেতাকে হত্যার আগে দুইবার বৈঠক : আটক ১

২০১৭ নভেম্বর ২১ ১৫:১৭:২৫
সাতক্ষীরায় আ. লীগ নেতাকে হত্যার আগে দুইবার বৈঠক : আটক ১

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় পুলিশ এজাহারভুক্ত এক আসামীকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে। তাকে জ্ঞিাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার আদালতে ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আমিরুল ইসলাম কালিগঞ্জ উপজেলার চিংড়িখালি গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে।
অভিযোগ, বিরোধপূর্ণ জমির মালিকপক্ষদের নেতৃত্বশূন্য করতে সলেমানকে হত্যার পরিকল্পনার জন্য গত ১৩ নভেম্বর সাতক্ষীরা শহরতলীর বাবলা ডাক্তারের বাগান বাড়িতে ও গত শনিবার বিকেলে ঝায়ামারি গ্রামে ওহাব পেয়াদার বাড়িতে সন্ত্রাসীদের নিয়ে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দেবীশহর সোসাইটির ঝায়ামারির বিলের ১০৭ বিঘা জমি মনোরঞ্জন মুখার্জীর কাছ থেকে কেনেন বসুখালির অমেদ আলী , কালিগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সলেমান গাজী, আব্দুর রশীদ, আশরাফুল পাড়, ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন। জমি ক্রেতাদের নেতৃত্ব দিতেন সলেমান গাজী। এনিয়ে ঝায়ামারির এলাকার ওহাব আলী পেয়াদার সঙ্গে সলেমান গাজীর দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। দু’ বছর আগে দেওয়ানী মামলায় হেরে যাওয়ার পর ওহাব আলী পেয়াদা ভালভাবে মেনে নিতে পারতো না সলেমানকে। ওহাব পেয়াদা হত্যারও হুমকি দেওয়া হয় কয়েকবার। এ কারণে বিশ্বস্ত কোন লোকের মোবাইল ফোন থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর আটক রাখার পর সোমবার ভোর চারটার দিকে সলেমানকে জবাই করে হত্যা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্রটি আরো জানায়, রোববার রাত ৮টার দিকে সলেমান, রশিদসহ কয়েকজন রাঙাশিশা মসজিদ সংলগ্ন ব্রীজের পশ্চিম পাশে সাহেব আলীর বাড়ি সংলগ্ন চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ড খেলছিলেন। এ সময় একটি মোবাইল থেকে কল আসায় তড়িঘড়ি করে সলেমান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত প্রায় ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সলেমানকে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে সোমবার ভোরে কৈখালি পানির ট্যাঙ্কি থেকে ১০০ হাত দূরে অরুন মণ্ডলের বাড়ির সামনে সলেমানের জবাই করা লাশ পড়ে রয়েছে বলে ওহাব পেয়াদার ভাই নরীম পেয়াদা ও সালাম পেয়াদা যেয়ে আব্দুর রশীদকে অবহিত করেন। পুলিশ কালিগঞ্জ উপজেলার ভাঙানমারি গ্রামের আশরাফুল পাড়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার রাত ১১টার দিকে ছেড়ে দেয়।

ঝায়ামারি গ্রামের আয়েশা খাতুন জানান, তার স্বামী ছলেমান গাজী আশাশুনি উপজেলার বসুখালির বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৯৮ সালে কালিগঞ্জের বাবুরাবাদে ভুমিহীন আন্দোলনের সময় থেকে তিনি ঝায়ামারিতে বসবাস শুরু করেন। টুম্পা , তুহীন ও শাহীন নামের তাদের তিন সন্তান রয়েছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে বসুখালি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত ১৩ নভেম্বর দুপুরে শহরতলীর বাঁকালে ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বাবলার বাগান বাড়িতে ওহাব আলী পেয়াদার উপস্থিতিতে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এক সাংসদের ভাই, ফুফাত ভাই, খুলনার দু’জন সন্ত্রাসী, হালিম, জমাত মালীসহ কয়েকজন। তারা বাবলা ডাক্তারের নামীয় পাস দিয়েই এন্ট্রি করে বাগান বাড়িতে ঢুকে বৈঠক করেন। সেখানে আলোচনা শেষে তারা দুপুরের খাওয়া শেষ করেন।

সূত্রটি আরো জানায়, রোববার বিকেলে ঝায়ামারির বাড়িতে এক গোপন বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওহাব আলী পেয়াদা, তার ভাই নরীম পেয়াদা, সেলিম পেয়াদা, হাবিবুল্লাহ, আব্দুল জলিল, ওহাব পেয়াদার ভগ্নিপতি রুহুল আমিন, তাদের ভাগ্নে জামসেদ, বিরোধপূর্ণ ঝামামারির মৌজার ডিএস রেকডীয় মালিক পক্ষের আব্দুল মালেক, ইয়াকুব আলী, মণ্টু ও খালেকসহ কয়েকজন। ওহাব আলী পেয়াদার পরিকল্পনা মত সলেমানকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক নয়ন কুমার চৌধুরী জানান, নিহতের ভাই সামিউল্লাহ বাদি হয়ে ওহাব আলী পেয়াদাকে প্রধান আসামী করে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে আমিরুল ইসলাম (৪০) নামের এক এজাহারভুক্ত আসামীকে কালিগঞ্জের চিংড়িখালি থেকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তার মোবাইল নম্বর থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকালে আদালতে ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test