E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের সিল প্যাড নকল

যেভাবে জালিয়াতির জালে ধরা পড়ে মেহের আলী 

২০১৭ নভেম্বর ২৫ ১৭:৩৮:০৭
যেভাবে জালিয়াতির জালে ধরা পড়ে মেহের আলী 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতারণায় অভ্যস্থ মৌলভীবাজার জেলা সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত আছকর উল্লার ছেলে কুখ্যাত মামলাবাজ মেহের আলী ওরফে মেহের উল্লা। তার প্রতারণার জালে বিভিন্ন সময়ে নানান শ্রেণী পেশার মানুষ স্বীকার হলেও কেউ কখনো প্রতিবাদ করার কোন সাহষ পাননি। দীর্ঘদিন প্রতারণায় অভ্যস্থ হলেও সেগুলো ছিল ধরাছোয়ার বাহিরে।  

সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম সাপ্তাহে মেহের আলী তার প্রতিবেশী মুহিবুর রহমান এর জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষি ভুমির কাগজ জাল করে তা নিজের জায়গা বলে বিক্রির উদ্যেশে মৌলভীবাজার জেলা বারের এক সিনিয়র আইনজীবির কাছে প্রস্তাব করে । ঐ আইনজীবি এর পূর্বেও একবার মেহের আলীর প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন বলে জানান এ প্রতিবেদককে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক সিনিয়র এই আইনজীবি জানান, আমি ছাড়াও এই বারের অনেক আইনজীবির টাকা আত্মসাত সহ নানা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন অনেকে।

তিনি বলেন, মেহের আলী আমার কাছে জমি বিক্রির প্রস্তাব করলে আমি তাঁর জালিয়াতি ধরার উদ্যেশে জায়গা ক্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করি। প্রস্তাব গ্রহনের এক পর্যায়ে মেহের আলী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর স্বাক্ষরযুক্ত ৪টি উত্তারাধিকার সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র আমার কাছে দিলে তা দেখে আমার প্রবল সন্ধেহ হয়।

তিনি বলেন, সদর উপজেলার ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ দীর্ঘদিন যাবত আমার পরিচিত থাকার কারণে তাঁর স্বাক্ষরটি আমার কাছে খুব পরিচিত, সেকারনে বিষয়টি আমার সন্ধেহ হলে তাৎক্ষনিক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর সরনাপন্ন হলে সাথে সাথে তিনি লোক পাঠিয়ে মেহের আলীকে তার বাড়িতে ডেকে আনেন। বাড়িতে ডেকে নিয়ে চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ তাঁকে ইউনিয়নের প্যাড , স্বাক্ষরযুক্ত সিল, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ৪টি উত্তারাধিকার সনদপত্র নকল করছেন কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেহের আলীর পাল্টা প্রশ্ন , এগুলো আমি করেিেছ তা প্রমান কি ? এরপর চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ তাঁকে জালিয়াতির বিষয়ে নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে অকপটে জালিয়াতির বিষয়টি মেহের আলী স্বীকার করে নেয়।

মেহের আলীর দায়ের করা মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলার স্বীকার জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা ও ইলেক্ট্রিশিয়ান নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে আক্ষেপের সুরে বলেন, সম্পুর্ণ অন্যায় ভাবে ২০১৪ সালে আমি ও আমার এক নিরপরাধ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মেহের আলী চাঁদাবাজির একটি মামলা দায়ের করে দীর্ঘদিন হয়রানী করেছে, তিনি বলেন আমার মতো এ গ্রামে অনেক ভুক্তভুগি আছেন, যারা তাঁর মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়ে সর্বশান্ত হাড়িয়েছেন। নুরুল ইসলাম বলেন, মেহের আলীর সিন্ডিকেটে আরো অনেক সহযোগী রয়েছেন আমি তাদের মুখোশ উন্মোচন করার দাবি জানাচ্ছি।

মেহের আলী সাধারণ মানুষের সাথে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করলেও এবার কেন আইনজীবিদের টার্গেট করলো ? এমন প্রশ্ন এখন ভুক্তভুগি সাধারণ মানুষ সহ অনেকের মুখে মুখে । নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক মেহের আলীর নিজ গ্রাম জগন্নাথপুর এলাকার ভুক্তভুগি এক ক্ষেতমজুর উচ্চাস প্রকাশ করে বলেন, সপ্নেও কোন দিন ভাবিনাই এই কুখ্যাত মামলাবাজ জালিয়াতির জালে ধরা পড়বে । তিনি আরো বলেন, একমাত্র আমাদের ন্যায় বিচারক তাজুল ইসলাম তাজ চেয়ারম্যানের সাহসী প্রদক্ষেপের কারণেই তাঁকে বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ এর অফিসিয়াল প্যাড ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরযুক্ত সীল নকল করার ঘটনায় তোলপার শুরু হলেও ভুক্তভুগি গ্রামবাসী সহ অনেকের ধারণা ছিল ভয়্কংর জালিয়াতির এই খলনায়ককে আইনশৃঙখলাবাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হবে। কিন্তু তা না করে রাতে তার ভাই ফিড ব্যবসায়ী আরাফাত আলীর জিম্মায় ছেড়ে দেয়ার কারণে হতাশ হয়েছেন অনেকেই।

(একে/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test