E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাসপাতালের বারান্দায় তিন বৃদ্ধা, স্বজনের খবর নাই!

২০১৭ নভেম্বর ২৬ ১৪:০৫:২০
হাসপাতালের বারান্দায় তিন বৃদ্ধা, স্বজনের খবর নাই!

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : বছরের পর বছর পাথরঘাটা হাসপাতালের বারান্দায় মানবেতর জীবন তাদের। বয়বৃদ্ধ মানষিক ভারসাম্যহীন তিন রোগী। যেখানে খাওয়া সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ।  

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫বছর পূর্বে পাথরঘাটা শহরে ষাটোর্দ্ধ ১মানষিক বৃদ্ধা রোগীকে লোকজন দেখতে পান। স্থানীয়রা তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানায় খবরটি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করান। কয়েক মাস পরে একই ভাবে সত্তরোর্ধ্ব আরও এক মানষিক রোগীকে স্থানীয়রা ধরাধরি করে হাসপাতালে ভর্তি করান।

এ বছরের গোড়ার দিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন অপর এক বৃদ্ধা মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তিকে শহরের রাস্তাথেকে তুলে এনে হাসপাতালে ভর্তি করান। এ সকল মানষিক ভারসাম্যহীন রোগীদেরকে হাসপাতালের জেনারেল বেডে রাখা কোনোক্রমেই সম্ভব হচ্ছেনা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন ওইসকল বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদের জেনারেল বেডে শীফ্ট করলে গোটা রুম মলমূত্রে নষ্ট হবে।নিয়মিত ভর্তি হওয়া রোগীরা রোগের উপশমের জন্য এসে উল্টো আরও নতুন রোগে আক্রান্ত হবে। আমরা বাধ্য হয়ে তাদেরকে হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় রেখেছি।

এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা মাসুমুল হক বলেন, উল্লেখিত তিন ব্যক্তিদেরকে প্রথমে হাসপাতালের বেডে থাকতে দেওয়া হলে তারা বেডে মলমূত্র ত্যাগ করে বেড নষ্ট করে। পরে ফ্লোরে থাকতে দিলে সেখানেও একই ভাবে পরিবেশ নষ্ট করে। অবশেষে বাধ্য হয়ে তাদেরকে হাসপাতালের নিচতলার বারান্দায় থাকতে দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসুমুল হক আরো বলেন, যে উল্লেখিত ব্যাক্তিদের বেডে থাকতে দেওয়ার পরে বেডসহ গোটা রুম এমন ভাবে নষ্ট করে আসছিল যে অন্যান্য প্রায় ৫০জন রোগী ওই ব্যক্তিদের রুম থেকে সরানোর জন্য লিখিত দরখাস্ত করে, পরে বাধ্য হয়ে তাদেরকে বারান্দায় রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন উল্লেখিত ব্যক্তিদের সরকারি তহবিল থেকে শীতের কাপড়সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করলেও তাদের পরিচর্যা করার জন্য কোন লোক না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, যে উল্লেখিত ব্যক্তিদের যদি কোন ব্যক্তি পরিচর্যা করার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন তা হলে আমরা তাকে সকল ধরণের সহযোগিতা করতাম। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আমরা জানি। এই হাসপাতালে কার গর্ভধারীনি মা কিংবা কার বাবা এইভাবে পরে আছে। আর ধুকে ধুকে মরছে। সেই নির্বোধদের বোধোদয় নাঘটলেও খানিকটা বিবেকতাড়িত হলেন এই উপজেলার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আর জনপ্রতিনিধি কিংবা স্বহৃদয়বান কতিপয় পরোপকারি মানুষ। কখনও কখনও এমনসব দৃশ্য এই মানব সভ্যতার মুখেই চুনকালি লেপ্টে দেয়।


(এটি/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test