E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালুয়াঘাটে কোটি টাকার বেদখল সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার

২০১৭ ডিসেম্বর ০৯ ১৫:৩১:১১
হালুয়াঘাটে কোটি টাকার বেদখল সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় ৮ ডিসেম্বার অপরাহ্নে দিন দুপুরে জাফর আলী খান নামক ব্যক্তি উপজেলা ডাক বাংলার সামনে প্রায় কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেদখল করে নেয়। ঘটনার পরদিনই উপজেলা প্রশাসন অবৈধ দখলকারীকে উচ্ছেদ করে পুনরায় পরিষদের ভুমি দখলে নেয়।

সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সনের ৩ মার্চ হাসমত আলী গং এর অভিযোগের ভিত্তিত্বে সহকারী কমিশনার ভূমি ৩৮১ নং পত্রের তদন্ত প্রতিবেদনে তৎকালীন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ভজন বিহারী সরকার ৮১ নং স্মারকে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সরকারী ডাক বাংলার সামনের জায়গা উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের মৃত লালু খান এর পুত্র জাফর আলী খাঁন অবৈধ ভাবে সরকারি সম্পত্তি দখল করে দোকান নির্মানের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছেন।

১৯৮৬ সনের ২২ জুন ৪১১৬ নং সাবকাওলা দলিল মূলে জাফর আলী খান বি,আর,এস ৪৫২ নং খতিয়ান ভূক্ত সাবেক ৩৩২ হাল ৪৬২-৮২৭ নং নামা দাগের ০.০৩ একর ভূমির রেকর্ডীয় মালিক মৃত এরশাদ আলীর পুত্র খোরশেদ আলম এর নিকট হতে ক্রয় করে ৩৩২ দাগে ০.০৩ একর ভূমি ৭৫(ওঢ-ও)৮৮-৮৯ নং জমা খারিজ মূলে ৭৩০ নং হোল্ডিং খোলে বাংলা ১৪১২ সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন।
এস.এ ২০২ নং খতিয়ানের ৩৩২ নং সাবেক দাগে ৩.৬৭ একর ভূমি অন্যান্য দাগসহ ১১.৬৪ একর ভূমি মধুসুদন সাহা এর পুত্র যাদব চন্দ্র সাহা ও মাদব চন্দ্র সাহা এবং হরে কৃষ্ণ সাহা এর পুত্র গনেশ নারায়ন সাহার নামে রেকর্ড ভূক্ত হয়।

পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে হালুয়াঘাট থানা নির্বাহী অফিসারে নামে এল,এ কেইছ নং-০৯/৮৩-৮৪ ও ২২/৮৩-৮৪ মূূলে এস,এ ২০২ নং খতিয়ানের ৩৩২ নং সাবেক দাগের ২.৯৬ একর ভূমিসহ অন্যান্য দাগের মোট ১৩.২৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। যার ভূমি উন্নয়ন কর ০২(ওঢ-ও)৯৮-৯৯ নং জমা খারিজা মূলে উত্তর খয়রাকুড়ি মৌজায় ৯৯৭ নং হোল্ডিং খোলে বাংলা ১৪১৭ সাল পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হয় ।

প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন সরকারী ডাক বাংলা ভবনটি হাল ৪৬২ নং দাগের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির উপর অবস্থিত। যার সন্মূখে জাফর আলী খান অবৈধ ভাবে ঘর উত্তোলন করে ব্যবসা করে আসছেন। অবৈধ দখলকারীর ক্রয়কৃত সাবেক দাগ নং ৩৩২ এর হাল দাগ ৪৬২-৮২৭ দাগটি ডাক বাংলার উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। বি আর এস নকশাদৃষ্টে দেখা যায় হাল দাগের ৪৬২-৮২৭ দাগে পাকা রাস্তা সংলগ্ন পূর্ব দিকে ১০ ফূট প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্য ১৩১ ফুট দখলকারীর ক্রয়কৃত সম্পত্তি।

পুনরায় গত ২০১৫ সনের ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ খাইরুল ইসলাম সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনিও প্রতিবেদনে অবৈধ ভাবে ডাক বাংলার সামনে ভূমি দখলের বিষয়টি উল্লেখ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান।

তৎপরি প্রেক্ষিতে গত ২০১৫ সনের ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ খান ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল স্মারক নং-উপ:জেলা পরি:/হালু/শুনানি/২০১৫/১২ মূলে যৌথ স্বাক্ষরে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ ২০১৫ সনের ১১ ফেব্রয়ারি সকাল ১১.৩০ ঘটিকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে শুনানিতে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে জাফর আলী খানকে নোটিশ প্রদান করেন।

উক্ত শুনানিতে জাফর আলী খান উপস্থিত না থাকার কারণে গত ২০১৫ সনের ৩০ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় রেজুলেশানের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলা পরিষদের আওতায় বেদখল হওয়া ভূমিটি ফিরিয়ে আনার সিদান্ত গৃহীত হয়।

পরবর্তিতে কয়লা আমদানি কারক গ্রুপের সাথে বালি মিশ্রিত ভেজাল কয়লা বিক্রির জের দরে পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে উক্ত জাফর আলী খান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে হালুয়াঘাটের যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়। পাশাপাশি কয়লা শ্রমিকসহ সাংবাদিক,সুধীজন ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সাধারণ জনগনের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলাদায়ের পর বিক্ষুব্দ শ্রমিক জনতা ২০১৫ সনের ২৬ এপ্রিল অবৈধ ভাবে দখলকৃত স্থাপনা ভাংচুর করেন।

দীর্ঘদিন পর পূনরায় জাফর আলী খান অবৈধ ভাবে দিন দুপুরে ডাক বাংলার সন্মুখের জমিটি দখল করে উক্ত সম্পত্তি সোনালী ব্যাংক হালুয়াঘাট শাখায় দ্বায়বদ্ধ লিখা সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়। ডাক বাংলার জমি বেদখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, উক্ত সম্পত্তিতে সোনালী ব্যাংকের পূর্বের ব্যবস্থাপক লতিফ ৩৫ লক্ষ টাকা সিসি ঋণ বিতরণ করেন। ঋণ গ্রহীতা জাফর আলী খান সম্প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেছেন। ২০ লক্ষ টাকা ঋণ চলমান রয়েছে। মর্গেজকৃত সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি কিনা তার জানা নেই বলে জানান।

এ বিষয়ে মাহমুদুল হক সায়েম সাংবাদিকদের বলেন, জমি বেদখলের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরির্দশনে আসেন। দখলকারীকে আগামী রবিবার দিন সকাল ১১টায় ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। কাগজ পত্রাদি পর্যালোচনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে দখলকারী জাফর আলী খান বলেন, তিনি অবৈধ ভাবে জমি দখল করেন নি দখলকৃত জমির সাবকাওয়া দলিল ও জমা খারিজ রয়েছে। অবৈধ ভাবে ডাক বাংলার জমি দখলের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, অবৈধ ভাবে জমি দখলকারীর কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় দখলকৃত সম্পত্তি উপজেলা পরিষদের তাই তাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

(জেসিজি/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test