E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটায় যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সংখ্যালঘুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল

২০১৭ ডিসেম্বর ২০ ১৩:২৪:৫৪
দেবহাটায় যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সংখ্যালঘুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : হাইকোর্টের আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জায়গা রাতের আঁধারে দখল করে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। প্রতিবাদ করায় জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটার উপজেলার পারুলিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটার পর পুলিশ প্রশাসনকে জানানোর পর ও তাদের ভূমিকা রহস্যজনক বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের লালু বিশ্বাসের ছেলে তপন বিশ্বাস জানান, পারুলিয়া মৌজার এসএ ৩৭৬৪ ও ৩৭৬৩ খতিয়ানের ৩৬৫২ দাগে এস এ রেকডীয় মালিকদের কাছ থেকে সাত শতক জমি কিনে নামপত্তন ও খাজনা দিয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ শান্তিপূর্ণ ভোগদখল করে বাড়ি ও গুদামঘর বানিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন তিনি। গুদামঘরটি ২০০৪ সালে সাতক্ষীরার জনৈক মাহাবুব বিশ্বাস ভাড়া নিয়ে অদ্যাবধি ‘এমআর ফিস’ নামে মাছের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

একইভাবে ওই জমি সংলগ্ন এসএ ৩৭০৭ ও ৩৭৯২ নং খতিয়ানে ৩৬৫১/৫১৮৭ দাগের ১৯৮৮ সালে নুরুল হোসেন, আব্দুর রহিম মোল্লা ও আব্দুল আজিজের কাছ থেকে কেনা চার শতক জমি ১৯৯৭ সালে এনায়েতুল্লা শেখের ছেলে শেখ আবুল হোসেনের কাছে বিক্রি করেন তিনি। ওই জমি বর্তমান মাঠজরিপে নিজ ডিপি ১৮০০ খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত করে তার (তপন) রেকডীয় প্রায় এক শতক জমি জবরদখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন শেখ আবুল হোসেন । এরপরও নতুন করে তার (তপন) গুদামসহ চার শতক জমি জবরদখলের পায়তারা করতে থাকেন আবুল হোসেন।

এরই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ২৩ জুন শেখ আবুল হোসেন, তার ছলে পলাশ, পলাশের মামা মেহেদী হাসান ওরফে উত্তম, পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান প্রিন্সসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী নূর আমিনের ইন্ধনে এমআর ফিসের ঘরে তালা ঝুলিয়ে সামনে পলাশ এন্টারপ্রাইজ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। ঘরের সামনে ও পিছনে পিলার পোতে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ জবরদখল মুক্ত করে জায়গা তাকে (তপন) বুঝিয়ে দেয়। পরে বর্তমান উপজলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নু শালিসের নামে উভয়ক্ষকে ডেকে মধ্যস্ততার নামে তার (তপনের) কাছ থেকে চারটি সাদা অলিখিত কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেন।

এ ঘটনা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানালে মিজানুর রহমান মিন্নুর ভাই পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামন প্রিন্স তার(তপন) ও তার ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা করেন। যা পুলিশের হস্তক্ষেপে খারিজ হয়ে যায়। একইভাবে কক্সবাজার থানার একটি ভুয়ো গ্রেফতারি পরোয়ানার মাধ্যমে তৎকালিন দেবহাটা থানার সহকারি উপপরিদর্শক বর্তমানে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক রোকনুজ্জামানের মাধ্যমে তার (তপনের) ছেলে অনুপ কুমার বিশ্বাসকে গ্রেফতার করিয়ে জেল খাটানো হয়। এরপরও ওই গুদামসহ জমি দখল করতে না পেরে নুর আমিন, সাইফুজ্জামান প্রিন্স, পলাশ শেখ মেহেদী হাসানসহ একটি মহল তাদের চক্রান্ত অব্যহত রাখে।

তপন বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, তার কাছ থেকে কেনা জমি বুঝে পাওয়ার পরও কাল্পনিক অভিযোগ এনে শেখ আবুল হোসেন সাতক্ষীরার যুগ্ম জজ -২য় আদালতে দেঃ-৯৩/১৫ মামলা করেন। গত ১৫ নভেম্বর আদালত ওই জমির উপর অস্থায়ী নিষোধাজ্ঞা দিলে তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই গুদামঘর ও জমি জবরদখল করা হতে পারে মর্মে গত ২৩ নভেম্বর তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।

তিনি দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বললেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে ৩০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে নুর আমিন, তাজুল ইসলাম, শেখ আবুল হোসেন, তার শ্যালক মেহেদী হাসান উত্তম, এনায়তুল্লাহ, খায়রুল ইসলাম, রুবেল, আফছার আলী, দীন ইসলামের নেতৃত্বে পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন রাস্তার কাজে নিয়োজিত ২৫/৩০ জন নারী ওই গুদাম ঘর দখল করে নেন।

বিষয়টি দেবহাটা থানাকে অবহিত করলে উপপরিদর্শক আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে পুলিশ সন্ধ্যায় জবরদখলকারিদের সরিয়ে দিয়ে তার (তপন) কেনা নতুন তালা শার্টারে মেরে চাবি বাজার কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে আবুল হোসেনের পক্ষের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মাহাবুব বিশ্বাসের কথিত কেয়ারটেকার নূর আমিনের কাছে দিয়ে দেন। এরপরপরই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে দোকন দিয়ে দিয়েছেন মর্মে ঘোষণা দিয়ে নূর আমিন ওই গুদাম ঘর দখলে নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন।

১৩ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকার্ট গত ১৫ নভেম্বর সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ-২য় আদালতের রায়ের উপর স্থিতাবস্থা জারির( মামলা নং -এফএমএটি-৯০৭/১৭) নির্দেশ দেয়। এ খবর জানতে পেরে ১৪ ডিসেম্বর ভোর চারটার দিকে নূর আমিন, শেখ আবুল হোসেন, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেল, খায়রুলসহ সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা ওই গুদাম ঘরের সামনে লাগানো ‘এনসিসি ব্যাংক পারুলিয়া শাখায় দায়বদ্ধ’ সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দিয়ে তার পাশে পলাশ এন্টারপ্রাইজের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়।

একই সাথে ওই গুদামের মালিক আবুল হোসেন বলে দেয়ালে লিখে দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাকে (তপন) ও তার পরিবারের সদস্যদের। এ ঘটনায় তিনি ১৪ ডিসেম্বর থানার কর্তব্যরত অফিসার সহকারি উপপরিদর্শক ইমাদুলের কাছে জবরদখলের চেষ্টা ও জীবননাশের হুমকির ঘটনায় আট জনের বিরুদ্ধে ৫৫৪ নং সাধারণ ডায়েরী করলেও বিকেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে ডাকিয়ে শুধুমাত্র হুমকির ঘটনা উল্লেখ করে খায়রুল, মেহেদী হাসান, আফছার আলী ও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী (৫৬৫নং)করান।

এর আগে পূর্বের ডায়েরির কাগজটি তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। এরপরও পুলিশের সহায়তায় আবুল হোসেন ও তার লোকজন ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে গুদাম ঘরের পাশের কিছু খালি জায়গা দখল করে রুবেলকে দিয়ে চায়ের দোকান বসায়। বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা হলে তিনি উপপরিদর্শক আব্দুল কাদেরকে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পাঠালে হাইকোর্টের আদেশটি সঠিক নয় বলে দাবি করে এ মুহুর্তে তার কিছু করার নেই বলে সাংবাদিকদের সামনে তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শেখ আবুল হোসেনের পক্ষে তার শ্যালক মেহেদী হাসান উত্তম জানান, তার ভগ্নিপতির কেনা জমি হিসেবে গুদামঘরসহ পাশের খালি জায়গায় চায়ের দোকান বানিয়ে তারা দখলে নিয়েছেন। এতে বাজার কমিটির সভাপতির কোন সম্পৃক্ততা নেই।

নূর আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সড়ক ও জনপথ থেকে গুদামের জমি তিনি ডিসিআর নিয়েছেন। তবে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

দেবহাটা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নু জানান, আবুল হোসেন তার কেনা জায়গা দখলে নিয়েছেন। তবে এর সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন জানান, তিনি কারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দিয়ে চাবি নিজে রাখতে পারেন না । তাই তিনি বাজার কমিটির সভাপতির মাধ্যমে ভাড়াটিয়া মাহবুব বিশ্বাসের তত্বাবধায়ক নূর আমিনকে দিয়েছেন। পারলে মাহাবুব বিশ্বাসকে ডেকে এনে তপন বিশ্বাস গুদামের দায়িত্ব বুঝে নিক।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test