E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্যামনগরে নারী অপহরণ-ধর্ষণ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

২০১৭ ডিসেম্বর ২০ ১৫:৩০:২৪
শ্যামনগরে নারী অপহরণ-ধর্ষণ মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটির আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক বহুল আলোচিত লিটন মিঞা গত রবিবার আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

অভিযোগ, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডাক্তারি সনদ ও আসামীদের দারা প্রভাবিত হওয়া তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য সংবাদ সম্মেলন উপেক্ষা করে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি এফিডেফিড ও আসামীদের কললিষ্ট যাঁচাই না করে ভিন্ন নামে রেজিষ্ট্রেনকৃত একটি বাংলা লিঙ্কের কাল্পনিক কললিষ্ট ভিকটিমের দেখিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। একইসাথে বাদির বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের এক তালাকপ্রাপ্ত নারীকে পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি গ্রামের শেখ আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক পরিকল্পিতভাবে গত ৩ ফেব্র“য়ারি ব্যবসায়িক পার্টনার সুকুমার মণ্ডল ও গোলাম রসুলের মাধ্যমে তার মাছের ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। ছিদ্দিক হুজুর ডেকে তাদের কাল্পনিক বিয়ে পড়িয়ে তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরবর্তীতে ছিদ্দিক তার বাপের বাড়িতে এসে জামাতা পরিচয়ে যাতায়াত ও তার সঙ্গে অবস্থান করতো।

একপর্যায়ে ওই নারী দু’ মাসের অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি ছিদ্দিককে অবহিত করেন। গত ১১ জুন ছিদ্দিক তাকে ভোটার আইডি কার্ডসহ সাতক্ষীরা কোর্টে বিয়ের এফিডেফিড করার কথা বলে মোটর সাইকেল ও মাইক্রোবাসে অপহরণ করে খুলনায় নিয়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে আটক রাখে। সেখানে পাঁচদিন ধরে ছিদ্দিক, সুকুমার (৩৬) ও গোলাম রসুল (৩৬) তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

গত ১৬ জুন খুলনার রাইসা ক্লিনিকে জোরপূর্বক তার গর্ভপাত ঘটিয়ে ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় ২৫ জুন রোজিনা তাকে বাপের বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায়। তাকে খুঁজে না পেয়ে ভাই সাব্বির হোসেন শ্যামনগর থানায় গত ১৫ জুন সাধারণ ডায়েরী করে। থানা মামলা না নেওয়ায় গত ২৬ জুলাই ওই নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছিদ্দিক, সুকুমার ও গোলাম রসুলের নামে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করে মামলার তদন্তভার শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক লিটন মিঞার উপর ন্যস্ত করা হয়।

ডাক্তারি সনদে ধর্ষণের সত্যতা থাকলেও তদন্তকারি কর্মকর্তা আসামীদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ করেন ওই নারী। বাদি ও সাক্ষীদের মামলা তুলে নেওয়া জন্য হুমকির ঘটনায় গত ৮ আগষ্ট বাদি আদালতে ১০৭ ধারায় ধর্ষণ মামলার তিন আসামীর বিরুদ্ধে মামলা ও গত ১৬ অক্টোবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী(৬৫১নং) করেন। পুলিশ আসামীদের না ধরায় ও মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করায় ২৮ আগষ্ট ও ২৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন বাদি। মামলা তুলে নিতে চাপসৃষ্টি করার জন্য ওই নারীর ভাই সাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ ও একটি পাচার মামলা দেওয়া হয়।

এফিডেফিড করে না দিলে সাক্ষীদের সাব্বিরের মত মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি, মামলার তদন্তকরি কর্মকর্তার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, আসামী ও তাদের পক্ষের লোকজনের অব্যহত হুমকি, নোটারী পাবলিক অ্যাড. রেজা উদ দৌলার জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ৭১৭/১৭ নং এফিডেফিডের প্রতিবাদে গত ১২ নভেম্বর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। পরদিন খবর প্রকাশের পরপরই থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তদন্তকারি কর্মকর্তা গোপালপুর গ্রামে যেয়ে ভিকটিমকে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

১৪ নভেম্বর মামলার প্রধান আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিক তাকে ও তার দু’ সহযোগিকে এ মামলার জড়ানোর কাল্পনিক কিছু গল্প উল্লেখ করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন। গত ৮ ডিসেম্বর কালিগঞ্জে সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাউদ্দিন বাদিকে তার অফিসে ডেকে পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে না- রাজি দেওয়ার পরামর্শ দেন।

নোটারী পাবলিক রেজা উদ দৌলা বাচ্চুর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে জানতে চাইলে শ্যামনগর থানার উপপপরিদর্শক লিটন মিঞা বলেন, যথাযথ তদন্ত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test