E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরগুনার রাজনীতিতে হঠাৎ কেন্দ্রীয় নেতা

কার হাতে যাচ্ছ নৌকার বৈঠা?

২০১৭ ডিসেম্বর ২১ ১৫:১২:০০
কার হাতে যাচ্ছ নৌকার বৈঠা?

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : হঠাৎ করেই আলোচনায় কেন্দ্রীয় নেতা। বরগুনার রাজনীতিতে  যোগ হওয়া এই নেতার নাম সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার। বাংলাদেশ আওয়ামীযুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক তিনি। বরগুনা-২ সংসদীয় আসনের মেঘেঢাকা আকাশে এযেনো ধ্রুবতারা। সারা এলাকা জুড়ে যার ব্যানার আর ফেস্টুন। এই মানুষটিকে চিনেন না এমন লোক খুজে পাওয়া ভার।

দেশের দক্ষিণ জনপদের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত যার প্রাণ। বরগুনার বামনা উপজেলার অখ্যাত এক গ্রাম অযোধ্যা। এই গ্রামের সখানাথ চন্দ্র হাওলাদার আর সুশিলা রানীর কোল উজ্জ্বল করে ১৯৬৮ সালে কোনএক মাহেন্দ্রক্ষনে জন্মেছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করছেন ছাত্রজীবন থেকে। মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজে জীবনের প্রথম ছাত্রলীগের সদস্যপদ পান সুভাষ। এরপর বামনা উপজেলা আ.লীগের ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদ অলংকৃত করেন তিনি। স্নাতক পর্যন্ত পাঠ চুকিয়ে রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারী পেশায় নাম লেখান। ব্যবসার পাশাপাশি চলতে থাকে রাজনীতি । একসময় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। কেন্দ্রীয়নেতাদের কাছে সুভাষ হয়ে ওঠেন এক আস্থা ও বিশ্বাসভাজন সাহসীকর্মীর প্রতীক। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। বর্তমানে তিনি-ই বাংলাদেশ আওমীযুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক। বিএনপি-জামাত আর হেফাজতের সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে যুবলীগের কর্মী হিসাবে যিনি আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন সক্রিয়।

অজোপাড়া গায়ে বেড়েওঠা এই কেন্দ্রীয়নেতা বরগুনা-২ সংসদীয় এলাকার আওয়ামী রাজনীতিতে এখন নতুনমাত্রা । অপরদিকে সাবেক বরগুনা জেলা বিএনপির সভাপতি এবং বরগুনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ নূরুল ইসলাম মণিকে নিয়ে ভোটারদের অগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে বিএনপির রাজনীতিতেও এখানে রয়েছে নতুন রূপরেখা (!) সকলের-ই প্রশ্ন তবেকি ঘরের ছেলে আবার ফিরছে ঘরে? কী আছে পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগীবাসীর ভাগ্যে।

বিতর্ক আছে ক্ষমাতাসীন দলের বর্তমান সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনকে নিয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতাকারীর সন্তান। ইতিমধ্যে সহযোগী বেশ ক’টি দৈনিক রিমনকে নিয়ে লিখে তুলোধুনা করেছেন। কিচ্ছুটি যায়আসেনা তার ওই লেখালেখিতে। পাথরঘাটা রায়হানপুর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান রিমন। ওই ইউনিয়নের বুকথেকে একটি সভায় যোগদিতে যাওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতধরে আ.লীগে যোগ দেন তিনি। রিমন বিশ্বাস করেন শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি সেদিন থেকেই রয়েছে তারপ্রতি।এই আসনের সাবেক সাংসদ গোলাম সবুর টুলু সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রথমে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রিমনের বাবার মুক্তিযুুেদ্ধ বিরোধীতা ইস্যু ছড়া আর কোনো বড় ইস্যু নিয়ে স্থানীয় আ.লীগের সুবিদাবাদীরা মাঠ গরম করতে পারছেন না বলেই মনে হচ্ছে।

আ.লীগের হয়ে এখানে আরও যারা শেখ হাসিনার আশির্বাদ পেতে চাইছেন তাদের মধ্যে অন্যতম বরগুনা-ঝালকাঠী সংরক্ষিত আসনের সাংসদ পাথরঘাটার এতিহ্যবাহী হাজীবাড়ির মেয়ে নাসিমা ফেরদৌসি। বাংলাদেশ মহিলা আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি তিনি। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় স্পিন্টার বিদ্ধ শরীর নিয়ে একধরনের হামাগুড়ি দিয়ে রাজনীতির মাঠে আগাচ্ছেন তিনি।

গ্রেনেড হামলার পর মৃতভেবে লাশের গাড়িতে তোলা এই রাজনীতিবিদেরও দলের জন্য ত্যাগ অনেক। অনেকে মনে করেন সেই ত্যাগের-ই পুরস্কার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাকে এম.পি বানিয়ে। কাজ করে যাচ্ছেন তিনি বিরামহীন গতিতে। ইতিমধ্যে অসংখ্য দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহ নানা ত্রানসামগ্রী সহায়তা দিয়ে তাদের প্রাণের মানুষ হয়ে উঠেছেন তিনি। বাবার কর্মের ফিরিস্তি ডিজিটাল ব্যানার-ফেস্টুনে তুলে ধরে এবং নিজের ছবি-পোষ্টার দিয়ে মানুষের মধ্যে জায়গা পেতে চাইছেন মরহুম সাবেক সাংসদ টুলুকন্যা ফারজানা সবুর রুমকিও। কিন্তু সময় গেলে সাধন মেলে না অবস্থা তার। তার বাবার মৃত্যুর পর এই আসনের মানুষ তার পরিবারকেই কাছে পেতে চাইছিলেন বলে জানালেন অনেকেই।

পরিবারের কেউ আসেননি এগিয়ে। নাম নাপ্রকাশের শর্তে আ.লীগের বেশ ক’জন কর্মী বললেন সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী মামা আমীর হোসেন আমু’র সুনজরে থাকলে রুমকিকেও হিসাবের খাতা থেকে ছুড়ে ফেলা সহজ হবেনা। আ.লীগের নৌকার বৈঠা হাতে নেয়ার দাফাদাফিতে নতুন মুখের তালিকায় বরগুনা পৌরমেয়র বিশিষ্ট ঠিকাদার পাথরঘাটার সন্তান শাহাদৎ হোসেন।তিনিও ফেস্টুন দিয়ে এলাকাবাসীর নজরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপনকে নিয়েও আছে আলোচনা।

তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের সন্তান। বাবার মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন মায়ের গর্ভে। সেই রক্তাক্ত একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের স্বীকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিপনও চাইবেন নৌকার টিকিট। এমনটাই বললেন এই তরুণ রাজনীতিবিদ।

আ.লীগের বিরোধী শক্তি এখানে একমাত্র বিএনপি । বিএনপিকে শক্তি যোগায় পেছন থেকে জামাত এবং সমমনা গোষ্ঠী। সেই বিএনপিও দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে এখানে এক্যবদ্ধ নেই। প্রবীন রাজনীতিবিদ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন কেন্দ্রেই থাকেন । যারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় তারা স্বপ্ন দেখেন সাবেক বিএনপির প্রভাবশালী সাংসদ নূরুল ইসলাম মণিকে নিয়ে। ওয়ানইলেভেনের প্রেক্ষাপটে নূরুল ইসলাম মণিও অন্যান্য সংস্কারপন্থীদের মত বিএনপির রাজনীতি থেকে ছিটকে পরেন। বিএনপিতে চলছে সুদ্ধি অভিযান। সেই অভিযানে ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরাতে পুনরায় মণিকে বরগুনা-২ আসনে প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিতও হতে পারে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবী। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন হবে এখানে বাঘে-মোষে’র লড়াই। সে লড়াইয়ে জয়লাভ করতে হলে আ. লীগ তথা মহাজোটকে অবশ্যই দলীয় কোন্দল মেটাতে হবে।

বিগত নির্বাচনগুলোতে এখানকার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে বিএনপি প্রার্থী মণির বিরুদ্ধে। এখানকার সহজ-সরল ভোটারদেরকে বুঝানো হয়েছিল আ.লীগ মানেই হিন্দুত্ববাদী দল। আ.লীগ মানেই দেশ ভারতের দখলে চলে যাবে। আ.লীগকে ভোটদিলে ইসলাম থাকবেনা । আ.লীগ প্রার্থীকে ভোট দিলে মসজিদে আযানের বদলে উলুব্ধনী হবে। এছাড়াও গ্রামে-গ্রামে গিয়ে নানাভাবে সাধারন ভোটারদের ধর্মীয় উগ্রবাদী অপব্যাক্ষা দেয়া হয়েছিল বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

এখানকার ৩ উপজেলার মধ্যে পাথরঘাটা বিএনপির পুজি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।আগামী জাতীয় নির্বাচনে ওই পুজিতে আর প্রভাব পরবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিলেন নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপিরই এক নেতা। তার দাবী আ.লীগের বর্তমান সাংসদ রিমন মসজিদে-মসজিদে তাবলীগে অংশগ্রহন এবং তার নিয়মিত নামাজ-রোজা ছাড়াও মুসল্লীদের সন্মানীত করার বিষয়টি শেখ হাসিনার রাজনীতিকে প্রসংশিত করেছে। যে কারণে ভুল ব্যাক্ষা এবারে আর কাজে আসবেনা।প্রশ্ন হল যদি বিএনপি সাবেক এই সাংসদকে দলে ফিরিয়ে নেয় এবং এখানে প্রার্থীতা নিশ্চিত করে তাহলে মহাজোটের হয়ে কে লড়বেন তার সাথে। পারবেন কি বর্তমান সাংসদ রিমন এবং সাংসদ নাসিমা ফেরদৌসী অথবা হঠাৎ আলোচনায় আসা এই কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সুভাষ দলের মান রাখতে? কীঘটতে যাচ্ছে বরগুনা-২ আসনের রাজনীতিতে? রাজনৈতিক বিশ্লেকদের দাবী প্রধানমন্ত্রীর নখদর্পনে রয়েছে সারাদেশের সাংসদদের আমলনামা। অতএব কোথায় কাকে নৌকার মাঝী করলে নৌকার ভরাডুবি ঘটবে না তা তিনি-ই ভাল জানেন।


(এটি/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test