E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কালিগঞ্জে কালী প্রতিমা ভাঙচুর, আতঙ্কিত হিন্দুরা

২০১৭ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:১০:২০
কালিগঞ্জে কালী প্রতিমা ভাঙচুর, আতঙ্কিত হিন্দুরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : দুর্বৃত্তরা একটি কালী প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।  আনুমানিক শনিবার রাত ১০ টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার শীতলপুর সার্বজনীন কৃষ্ণ ও গোবিন্দ মন্দির সংলগ্ন কালী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের কঠোর ভূমিকার কারণে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

শীতলপুর সার্বজনীন কৃষ্ণ ও গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুব্রত সরকার জানান, গ্রামের অজিত সরকারের ছেলে আনন্দ সরকার চার বছর আগে তার পৈতৃক দু’ বিঘা বিলান জমি একই গ্রামের ভোলা নাথ সরকারের কাছে ও প্রায় এক বিঘা জমি বিক্রি প্রতিবেশি মাধাই ও অর্জুনের কাছে বিক্রি করে যান।

প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ব্যবহৃত পুকুরসহ তিন বিঘা জমি আনন্দ সরকার প্রায় দেড় বছর আগে একই এলাকার আরশাদ গাজীর কাছে বিক্রির প্রস্তুতি নিলে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল পাড় ও ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এক শালিসি সভায় ওই জমি আরশাদ গাজীর কাছে বিক্রি না করে ন্যয্য মূল্যে প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে বিক্রির জন্য বলে যান।

প্রতিবেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জমি বিক্রির টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে আনন্দ সরকারকে দিয়ে জমি লিখে নেওয়ার কথা শালিসে বলেন। অথচ আনন্দ ওই জমি আরশাদ আলীর কাছে বিক্রি করে দেন শালিসের এক সপ্তাহ পর। জমি বিক্রির পরও বাড়ি ও মন্দিরসহ ছোট শীতলপুর মৌজার হাল ২৫৪ খতিয়ানের ও হাল ২৬৯ ও ২৭০ দাগের ১৬ শতক জমি কারো কাছে বিক্রি না করে ভারতে চলে যান আনন্দ সরকার। আনন্দ সরকারের জমির সঙ্গে জয়কৃষ্ণ সরকার, অনাথ সরকার ও নয়ন সরকারের এক শতক জমি রয়েছে। ১৬ শতক জমি না বিক্রি হলেও গত জুলাই মাসে আরশাদ আলী ও তার পরিবারের লোকজন আনন্দ সরকারের বাড়ি ঘর ভেঙে নিয়ে চলে যান। একইসাথে বাড়ি ও মন্দিরের সামনের খালি জায়গা পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেন।

তিনি আরো জানান, আনন্দ সরকারের জমি সংলগ্ন জয়কৃষ্ণ সরকার, অনাথ সরকার ও নয়ন সরকারের নাদাবিকৃত তিন শতক জমিতে ১০ বছর আগে থেকে সার্বজনীন কৃষ্ণমন্দির ও গোবিন্দ মন্দির রয়েছে। প্রায় এক মাস আগে (রাস পূর্ণিমার পরবর্তী পূর্ণিমায়) ওই মন্দিরের পাশেই তারা টিনের চাল দিয়ে একটি মন্দির নির্মাণ করে কালি প্রতিমা স্থাপন করেন। ওইসব মন্দিরের পিছন দিয়ে একটি ঘরোয়া রাস্তা রয়েছে। কালী প্রতিমা স্থাপনের পর থেকেই তারা সেখানে পুজা করে আসছেন। শুক্রবার তারা ওই রাস্তাসহ মন্দিরের এলাকা ঘিরে দিয়ে যাতায়াতের জন্য মন্দিরের সামনে দিয়ে রাস্তা বের করে দেন। এ নিয়ে আরশাদ গাজীসহ তার ছেলে রেজাউল, আরিজুল ও হাফিজুল ইসলামের বচসা হয়।

সুব্রত সরকার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁকড়া ব্যবসায়ি ঝুনু সরকার প্রতিদিনের ন্যয় বাড়ি ফেরার পথে মন্দিরে প্রণাম করতে যেয়ে কালী ঠাকুরের চারটি হাতসহ কিছু অংশ পিছনের দিক থেকে ভাঙা দেখতে পেয়ে তাদেরকে অবহিত করেন। তারা আতঙ্কিত হয়ে বিষয়টি কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমছের আলী, ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান ও ইউপি চেয়ারম্যান আরিজুল পাড়কে অবহিত করেন। সমছের আলী নতুন প্রতিমা বানানোর জন্য টাকা দেবেন বলে মন্দির কর্তৃপক্ষকে জানান।

মন্দির কমিটির কয়েকজন সদস্যের অভিযোগ, আনন্দ সরকারের ফেলে রেখে যাওয়া সম্পত্তি জবরদখল করতে না পেরে আরশাদ গাজী ও তার ছেলেরা কালী প্রতিমা ভাঙচুর করতে পারে।

তবে স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, শালিসি সভায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বরের কথামত আনন্দ তার জমি আরাশাদের কাছে বিক্রি না করে তার সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে বিক্রি করতে চাইলে তাকে হুমকির মুখে পড়তে হয়। একপর্যায়ে শ্বশুর পাইকাড়া- গোবিন্দপুরের বনমালী সরকারের সহায়তা তাকে আরশাদের কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে দেশ ছাড়া করা হয়েছে। যার ফলে সে বাড়ি সংলগ্ন জমি বিক্রি করতে পারেনি। এ সুযোগে আরশাদ গাজী ও তার ছেলেরা ওই জমি জবরদখলের পায়তারা করছে।

জানতে চাইলে ভারতের পশ্চিমপঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার নাকুয়াদহ গ্রামে বসবাসরত আনন্দ সরকার এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে জানান, আরশাদ গাজীর কাছে জমি বিক্রি করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিল না। নইলে জীবনে বেঁচে থাকা কঠিন হতো। তবে বাড়িসহ ১৬ শতক জমি তিনি কারো কাছে বন্ধক, বায়নাপত্র বা বিক্রি করেননি।

নলতা ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের আমলে প্রতিমা ভাঙচুরের প্রতিকার না হলে আগামিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের এ দেশে বসবাস উঠে যাবে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

আরশাদ গাজীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম জানান, তারা প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত নন। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলে দাবি করেন তিনি।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সুধাংশু শেখর হালদার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে তিনি ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবীর দত্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। আপত্তিকর আচরণ করায় আরশাদ আলীর ছেলে হাফিজুরকে সতর্ক করা হয়েছে। জমি লিখে না নিলে মন্দির ও বাড়ি সংলগ্ন আনন্দের জমিতে আরশাদ গাজী ও পরিবারের সদস্যদের যেতে মানা করা হয়েছে। এর ব্যত্তয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test