E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রামকুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত পারুল বেগমের শরীর 

২০১৭ ডিসেম্বর ২৫ ১৪:৪১:৩৩
রামকুকুরের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত পারুল বেগমের শরীর 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : পারুল বেগম, বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি, পেশায় মধ্যবিত্ত্ব পরিবারের একজন গৃহীনি। পরিবারের রান্না বান্নার কাজের জন্য তাঁকে প্রয়োজনে সবসমই জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যেতে হয় পাহাড়ের জঙ্গলের ভিতরে। 

গত শনিবার (২৩ডিসেম্বর ) বিকেল তিনটার দিকে প্রতিদিনে ধারাবাহিকতায় বাড়ির পার্শের বনে পারুল বেগম শুকনো গাছের পাতা সংগ্রহের জন্য গিয়েছিলেন, ঠিক এমন সময় কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই ইকোপার্ক থেকে ছুটে আসা রামকুকুর (প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী) তাঁর শরীরের পিছন দিক থেকে ঝাপটে ধরলে সাথে সাথে তিনি শরীরের সমস্থ শক্তি হাড়িয়ে ফেলেন , লুটিয়ে পরেন মাটিতে, রামকুকুরটি তাকে টেনে হেচরে নিয়ে যায় পাশের কাটা তারের বেড়ার পাশে। সেখানে তার আর্তচিৎকার শুনে পাশের ঘরের স্কুল পড়–য়া কিশোর তাওহিদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারুল বেগমকে উদ্ধারের প্রানান্তর চেষ্টা চালায়, উদ্ধারের সময় তাওহিদও রামকুকুরের আক্রমনে কিছুটা আহত হয়। এসময় পারুল বেগমকে বাঁচাতে লাঠি দিয়ে রামকুকুরের শরীরে আঘাত করলে পালিয়ে যায় সে। ঘটনার খবর আশে পাশের বাড়ি এবং গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে তাতে আতংক তৈরি হয়ে যায়।

কিশোর তাওহিদ বলেন, প্রাণীটির ধূসর রঙের হওয়ায় তা শিয়াল না মেছবাঘ তা বুঝা যায়নি , তবে এর লেজ অনেক বড় এবং লম্বা । মুখের দিকটা অনেক কালছে থাকায় আমাদের ধারনা এটি বন্য রামকুকুর হবে। তাওহিদ সহ গ্রামের আরো অনেকের সাথে কথা বলে এর মিলও পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে দিনে-রাতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ লাটি হাতে পাহাড়া দিচ্ছেন।

এদিকে প্রানীটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বর্ষিজোড়া ইকোপর্কের বন্যপ্রাণী গবেষক ও সংরক্ষক তানিয়া খান এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাণীটিকে ধরতে আমি সহ বন বিভাগের লোকজন অনেক চেষ্টা করেও ধরা সম্ভব হয়নি । তিনি বলেন, একটি অসুস্থ প্রাণীটির কারনে বনের সমস্থ প্রাণীকুল এখন মারাতœক আতংকে আছে। তিনি আরো বলেন, প্রাণীটি চিহ্নিত করতে গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী অনেককে আমরা ছবি দেখিয়েছি কিন্তু তাদের দেয়া তথ্যমতে ছবির সাথে ঐ প্রাণীটির কোন মিল পাওয়া যায়নি , তবে রামকুকুর অথবা শিয়াল জাতিয় কিছু হবে বলে জানান তিনি।

সোমবার (২৫ডিসেম্বর) সকাল দশটার দিকে সরেজমিনে পারুল বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার শরীরের একদম পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব জায়গা জুরে আক্রমনাতœক হিংস্র প্রাণীটির থাবায় ক্ষতবিক্ষত পুরো শরীর। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পারুল বেগম গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন এখন। তাঁকে দেখতে তার বাড়িতে গ্রামের সাধারণ মানুষের জটলা দেখা যায় এসময়। সাংবাদিক পরিচয় শুনে মুখের দিখে ফেল ফেল করে তাঁকিয়ে তাখেন দীর্ঘক্ষণ।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২৩ডিসেম্বর) দিনের বেলা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা ও দিঘলগজি গ্রামে রামকুকুরের আক্রমনে নয়জন আহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়েছেন পারুল বেগম নামের এক মহিলা। আহতদের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদের অনেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে আছেন। এদিকে হিংস্রপ্রাণী রামকুকুরটি স্থানীয় ইকোপার্ক থেকে ছুটে এসে কালেঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে দিনে-দুপুরে গরু ,মহিষ , ছাগল , কুকুর সহ সাধারণ মানুষের উপর আক্রমন করে আহত করে পালিয়ে যায়।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test