E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঘের দখল লুটপাট ও জালিয়াতি চলছেই

সাতক্ষীরায় হত্যা ও জালিয়াতি মামলার আসামি গনেশ মণ্ডল বেপরোয়া : পর্ব ১

২০১৭ ডিসেম্বর ২৭ ১৫:৪৬:৫৯
সাতক্ষীরায় হত্যা ও জালিয়াতি মামলার আসামি গনেশ মণ্ডল বেপরোয়া : পর্ব ১

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙা গ্রামের ঘনশ্যাম মণ্ডলের ছেলে গনেশ চন্দ্র মণ্ডল বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রামের কমপক্ষে ৫০ ব্যক্তির মাছের ঘের জবরদখল, লুটপাট ,চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা , নারী নির্যাতন, খাস জমি দেওয়া, চাকুরি দেওয়ার নামে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেড় ডজনের বেশি মামলা হলেও তিনি স্থানীয় খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিমের নাম ভাঙিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগকারিকেই লকআপে ভরে দেওয়ার হুমকি শুনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

খাজরা ইউপির সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন সাবেক ইউপি সদস্য জানান, তুয়ারডাঙা গ্রামের ভোলা নাথ পাঁড়–ই এর কাছ থেকে চক তুয়ারডাঙা মৌজার এসএ ৮৯ এর ১৩টি দাগের ১৬ বিঘা জমি কালিপদ ধানুকীর নামে রেজিষ্ট্রি করে নেন রনজিত ধানুকির ঠাকুৃরদাদা যতীন্দ্রনাথ ধানুকী। একই
খতিয়ানের একই দাগে যতীন্দ্রনাথ ধানুকির অবশিষ্ট তিন বিঘা ১০ শতক জমি যতীন্দ্র ধানুকীর ছেলে নিরঞ্জন ধানুকীর নামে রেকর্ড হয়। ২০১০ সালের ২০ মে রনজিতের নামে এফিডেফিট মুলে চার বিঘা জমি পাওয়ারনামা করে দেয় শুভঙ্কর ধানুকী।

এর মধ্যে মোকাররমের নামে ১১ বিঘা, গনেশের নামে পাঁচ বিঘা। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ভোলা নাথ পাঁড়–ই মারা গেলেও ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি ২৬১ নং জাল পাওয়ারনামা মাধ্যমে দু’ বিঘা জমি লিখে নেয় গনেশ মণ্ডল। জে এল নং-১০৫ বাকী এক বিঘা ১০ শতক জমি গনেশ গায়ের জোরে দখলে রেখেছে। ।

পাওয়ারনামা মুলে দাবিকৃত দু’ বিঘা থেকে ১০ কাঠা জমি গনেশ মাজেদের ছেলে মফিজুলের নামে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল রিজিষ্ট্রি দলিল মূলে লিখে দেয় ৪১ হাজার টাকায়। এ দলিলের(১৪৮৬ নং দলিল) সনাক্তকারি হিসেবে রনজিত ধানুকীর সাক্ষর জাল দেখানো হয় দলিলে।

রনজিত ধানুকীর ঠাকুর মা জঞ্জালী দাসীর পক্ষে ভারতে বসবাসকারি পৌত্র বিমল ধানুকী সাজিয়ে জমি জালিয়াতি করে ৩৯ শতক জমি নিজের নামে লিখে নিয়ে পরে আইয়ুব আলী গাজীর কাছে(২৪৮৭/১৫নং দলিল) বিক্রি করে গনেশ। দলিলে বুনিয়াদ হিসেবে দাতা গনেশ ওই জমি ৪০৩০ নং দলিল মূলে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

যদিও পরে জানা যায় যে ওই দলিল গ্রহীতা গুনাকারকাটি গ্রামের আব্দুর রশিদ সরদার, গোদাড়ার মিজানুর
রহমানসহ কয়েকজন। তাতে জমির পরিমান সোয়া ১০ শতক। ওই জমির নামপত্তন গনেশের নামে দেখানো হলেও পরে তা গুনাকারকাটির সোনাই মোল্লার নামে বলে দেখা যায়। ওই দলিলে গনেশ ১২৫/১ খণ্ড খতিয়ান উল্লেখ করলেও কাগজপত্রে দেখা যায় ওই খতিয়ান তুয়ারডাঙার মুরারী মুখার্জীর স্ত্রী রীতা রানী মুখার্জীর নামে। ডিপি খতিয়ানে ওই জমি গনেশ নিজের নামে বলে দলিলে উল্লেখ করলেও কাগজপত্রে দেখা যায় ওই জমি মাঠ জরিপে জঞ্জালী দাসীর নামে।

১৯৫৭ সালে ভারতে চলে যাওয়া বিমল ধানুকীর ছবি যোগাড় করে ২০১০ সালের ৫ এপ্রিল নোটারী পাবলিক অ্যাড.এটিএম আলী আকবরের কাছে জাল চুক্তিপত্র পাওয়ারনামা হিসেবে তৈরি করে। এই চুক্তিপত্র অনুযায়ি জঞ্জালী ধানুকীর ৩৯ শতক জমি গনেশ দখল করে নেয়। এ জন্য কালিপদ ধানুকীর ওয়ারেশ হিসেবে জালিয়াতির মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমের কাছ থেকে কৃষ্ণপদ ধানুকী ও বিমল ধানুকীর ওয়ারেশকাম সনদ গ্রহণ করে। এটা ঠিক নয় বলে ওয়ারেশকাম দেন সাবেক চেয়ারম্যান মোবারেক আলী ও রুহুল কুদ্দুস মোল্লা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাদের ভোটার তালিকায় নাম নেই বা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রত্যয়ন দেন তারা। শুভঙ্কর ধানুকী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে চার বিঘা জমি স্বত্ব হিসেবে লিখে দেয়। ওই জমি গনেশ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে রওশান আলী সরদার তার এক সহোদর ও এক চাচাত ভাই এর কাছে ওই জমি
কোবালা দলিল মুলে লিখে দেয়।

সন্তোষ মণ্ডলের নয় বিঘা জমি গণেশ মণ্ডল তার স্ত্রী পুষ্প রানী মণ্ডলের নামে আমমোক্তার নামা করিয়ে নেয়। জানতে পারায় সাব রেজিষ্ট্রার গোলাম এলাহীর বিরুদ্ধে এডিসি রেভিনিউ অফিসে মামলা করায় তদন্ত শেষে অরুন কুমার মণ্ডল ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ওই জমি ফিরিয়ে দিতে দলিল বাতিল করেন।

নিজের ছেলে অনুপকে মাদিয়া গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য তার ছেলেকে পুলিশে চাকুরির জন্য ঘুষ বাবদ মেয়ের বাবা তারক মণ্ডরের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আদায় করে গনেশ। পরবর্তীতে ওই মেয়ের সঙ্গে গনেশের ছেলে বিয়েও হয়নি, টাকাও ফেরৎ পাননি তারক । একই গ্রামের ভজহরিকে ধরে রেখে মারপিট করে গনেশ। সুযোগ বুঝে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাজপড়ে ভজহরি মারা যায় বিমল ঢালীর ঘেরের পাশে।

রণজিত ধানুকী পুলিশ সুপার বরাবর ২০১৬ সালের ৬ জুন অভিযোগ করলে তিনি আশাশুনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। সে অনুযায়ি উপপরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ১২ আগষ্ট উভয়পক্ষকে নোটিশ করে ৮ সেপ্টেম্বর থানায় ডাকলেও গনেশ আসেনি। অদ্যাবধি পুলিশ তার টিকি স্পর্শ করতে পারেনি।

(৮) বিমল ধানুকীর ছবি যোগাড় করে এটিএম আলী আকবর জাল নোটারীর মাধ্যমে পাওয়ারনামা করার ঘটনায় জেলা প্রশাসক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের মাধ্যমে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতির উপর দায়িত্ব দেন।সভাপতি অ্যাড. কুদরত-ই- মজিদের উপর তদন্তের দায়িত্ব দেন।

তিনি তা না করে অ্যাড. সালাউদ্দিন (কালিগঞ্জ) এর উপর ন্যস্ত করেন। সম্প্রতি এ ঘটনায় উভয়পক্ষের শুনানী হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। জমি ডিসিআর করিয়ে দেওয়ার নামে গৌরপদ বিশ্বাসের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে স্ট্যাাম্প করে দেয় গনেশ। পরে গৌর ডিসিআরও টাকা কোনটাই পাননি। নিরঞ্জন কুমার ধানুকী এসএ রেকডীয় মালিক হয়ে চার বিঘা জমি ছেলে শুভঙ্কর ধানুকীকে দলিল করে দেওয়ার স্বর্তে এফিডেফিড করে দেয়।

বাকী নয় বিঘা জমি কোবালা মুলে একই গ্রামের সন্তোষ মণ্ডলের কাছে বিক্রি করে। পরে ওই চার বিঘা জমি গৌরবিশ্বাসকে ডিসিআর ও নয় বিঘা জমি ভগ্নিপতি কালিপদ মণ্ডলের নামে ডিসআর কাটতে হয়। অথচ কালিপদ ধানুকীর ৮৯ খতিয়ানের ১৬ বিঘা জমি ডিসিআর কাটতে হয়নি। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিরঞ্জন ধানুকীর স্ত্রী ও দু’ মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন, পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মারা ও লুটপাটের ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ওই জমি থেকে পাঁচ বিঘা জমি গনেশ মণ্ডলের নামে লিখে দিতে বাধ্য হন।

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে গনেশ মণ্ডল তার বিরুদ্ধে আনীত হত্যা, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, নারী নির্যাতনসহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেই বলেন, কৃষ্ণপদ ধানুকীসহ কয়েকজনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। রণজিত ধানুকীর পৈতৃক কোন জমি না থাকার পরও তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে নামপত্তন করে অন্যের জমি দখলে রাখতে চান। যারা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে মুখোমুখি করলে ত্র“টি থাকলে মাথা পেতে নেবেন। চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে কোন কিছু সুবিধা আদায় করার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test