E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনির ত্রাস গনেশ মণ্ডলের হিরো হওয়ার নেপথ্য কাহিনী : পর্ব ২

২০১৭ ডিসেম্বর ২৮ ১৬:২৩:৩৮
আশাশুনির ত্রাস গনেশ মণ্ডলের হিরো হওয়ার নেপথ্য কাহিনী : পর্ব ২

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : অন্যের জমি দখল করতে যেয়ে দলিল জালিয়াতি, নামপত্তন জালিয়াতি, এফিিেডফিড জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙা গ্রামের গণেশ মণ্ডল এখন হিরো বে গেছেন। তিনি কখনো ব্যবহার করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিমকে আবার কখনো থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সহকারি পুলিশ সুপারকে।

আদালত ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ৯ মে প্রকাশ্য দিবালোকে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গোয়ালডাঙা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিমকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে নিহতের ভাই আব্দুল মজিদ গনেশমণ্ডলসহ ২৫ জনের নামে থানায় জিআর- ১৪৪/০১ নং হত্যা মামলা করেন। গনেশসহ এজাহারভুক্তদের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ার পর ওই মামলা বর্তমানে জজ কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

এ মামলা গনেশ দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিল। ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তুয়ারডাঙা গ্রামের মোকছেদ আলী সরদারের কাছে চাঁদা দাবি ও ঘেরে মাছ লুটপটের অভিযোগে ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি থানায় গনেশ মণ্ডলস ১০ জনের নামে মামলা(জিআর- ৩৫/০৭ নং) হয় । ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বিকিলে চক তুয়ারডাঙা ঘেরে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা মাছ লুটপাটের অভিযোগে ওই দিন রণজিৎ ধানুকী বাদি হয়ে থানায় গনেশ মণ্ডলসহ ২০ জনের নামে জিআর- ২৯০/১৬ নং মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর সকাল সাতটায় ঘেরে লুটপাট করার অভিযোগে আশাশুনি উপজেলার তুয়ারডাঙা গ্রামের কৃষ্ণপদ ধানুকী বাদি হয়ে গনেশ মণ্ডলসহ ১৭ জনের নামে আশাশুনি থানায় জিআর-৫৭০/৯৮ নং মামলা করেন। মামলার খবর পেয়ে গণেশ মণ্ডল ও তার সহযোগিরা পরদিন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ডুমুরপোতা নামক স্থানে কৃষ্ণপদ ধানুকীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারপিটের পর মোটর সাইকেল ও ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয় ।

এ ঘটনায় কৃষ্ণপদ ধানুকী বাদি হয়ে গনেশ মণ্ডলসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় জিআর-৫৭১/৯৮ মামলা করেন। ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর আশাশুনি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে নয় একর ৭৪ শতক জমি দখলে নিতে সৃষ্ট ৭৫২৩ নং কোবালা দলিল ২০০১ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারি দেওয়ানী আদালতে জাল বলে প্রমাণিত হওয়ায় নিরঞ্জন ধানুকী বাদি হয়ে থানায় গনেশ মণ্ডলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে থানায় ২২১/২০০৫ নং মামলা করেন।

কালিপদ ধানুকীর ছেলে ভারতের বাসিন্দা বিমল ধানুকীর ছবি সংগ্রহ করে অ্যাড. এটিএম আলী আকবর জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি ৪৬১ নং এফিডেফিডে পাওয়ারনামা দেখিয়ে ২০১২ সালের ২০ জুলাই রাত ১০টায় জমি জবরদখল করে ঘেরে মাছ লুটপাট করার অভিযোগে কমলা ধানুকী বাদি হয়ে গনেশ মণ্ডলসহ দু’জনের নামে আশাশুনি থানায় জিআর- ২১০/১২ নং মামলা করেন।

উপজেলার ধর্মতলা মাছের ডিপোতে যেয়ে দাবিকৃত এক লাখ টাকা চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে মারপিট ও লুটপাট করায় বামনডাঙা গ্রামের চন্দ্রশেখর ঢালী বাদি হয়ে গণেশসহ ১৬ জনের নামে ২০০৭ সালের ৫ ফেব্র“য়ারি থানায় জিআর-১৪/২০০৭ নং মামলা করেন।

এ ছাড়া কালিপদ ধানুকীর জমি জালিয়াতির অভিযোগে রনজিৎ ধানুকি বাদি হয়ে গনেশ মণ্ডলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে সিআরপি ১১৪১/২০০২ নং মামলা করেন। একইভাবে জমি জবরদখলের চেষ্টার ঘটনায় ২০০২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রণজিৎ ধানুকী পিটিশন ৪৮৩/২০০২ মামলা করেন। ৩৯ শতক জমি জাল দলিল করার অভিযোগে রণজিৎ ধানুকী ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর গনেশসহ তিন জনের বিরুদ্ধে পিটিশন ১৯২/১৬ নং মামলা করেন। দু’ লাখ ৮০ হাজার টাকার মাছ লুট ও ঘেরের বেড়িবাঁধ ভাঙচুরের অভিযোগে তুয়ারডাঙা গ্রামের সন্তোষ মণ্ডল বাদি হয়ে চলতি বছরের ১৫ মার্চ আদালতে গনেশ মণ্ডলসহ তিনজনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এ ছাড়াও গনেশের বিরুদ্ধে ঘের দখল, লুটপাট, চাঁদাদাবি ও মারপিটের অভিযোগে ২০১২ সালের ৬ জুন, ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি ২০১২ সালের ১৪ মে, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর, ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর, ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর, ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর, ২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর, ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি , ২০০৬ সালের ১৭ নভেম্বর ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর, চলতি বছরের ১৪ মার্চ,রণজিৎ ধানুকী বাদি, ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি শুভঙ্কর ধানুকী, ২০০৬ সালের ১৭ নভেম্বর ও ২০১২ সালের ৬ জুন কমলা ধানুকী, ২০১২ সালের ২০ আগষ্ট হেতালবুনিয়া গ্রামের সুশীল গাইন বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে গনেশ মণ্ডল তার বিরুদ্ধে আনীত হত্যা, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, নারী নির্যাতনসহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেই বলেন, কৃষ্ণপদ ধানুকীসহ কয়েকজনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে। রণজিৎ ধানুকীর পৈতৃক কোন জমি না থাকার পরও তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখলে রাখতে চান। যারা অভিযোগ করেছেন তাদেরকে মুখোমুখি করলে ত্র“টি থাকলে মাথা পেতে নেবেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test