E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝালকাঠির বেগম চাঁনবরু মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়

কাগজে কলমে শতাধিক শিক্ষার্থী হলেও উপস্থিত ১৬, শিক্ষক ৫ 

২০১৮ জানুয়ারি ০৬ ১৬:৪২:০৯
কাগজে কলমে শতাধিক শিক্ষার্থী হলেও উপস্থিত ১৬, শিক্ষক ৫ 

সুতীর্থ বড়াল, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির প্রত্যন্ত ধারাখানা গ্রামের বেগম চাঁনবরু মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেখার যেন কেউ নেই। সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের ধারাখানা গ্রামে ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত অযত্ন অবহেলায় চলছে শিক্ষা পাঠ্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা এতাটাই করুণ ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কাগজে কলমে মাত্র শতাধিক হলেও বুধবার উপস্থিত ছিলো মাত্র ১৬ জন এবং অষ্টম শ্রেণির উপস্থিতি নেই। শিক্ষক রয়েছে মোট ৫ জন।

এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক সংকটের কারণে তারা তাদের ছাত্রছাত্রীদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করছে না তাদের শিক্ষার্থীদের । বাড়ির কাছাকাছি হলেও দূরের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে ছেলে মেয়েদের এতে করে তাদের অনেক আর্থিকসহ সময় অপচয় হচ্ছে তাতে ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ।

তাছাড়াও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির অব্যবস্থাপনায় নানা অসংগতিতে চলছে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কার্যক্রম । প্রায় এক যুগ ধরে ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতির দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বিদ্যালয়ের কোন কার্যক্রমে । শিক্ষকরা কারো কাছে বলতে পারছে না সমস্যার কথা। সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগে তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও কোন লাভ হয়নি । বিভিন্ন সমস্যার কারণে যোগদান করছে না কোন শিক্ষক । পাশের হার শূণ্যের কোঠায়। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই মূলত থমকে আছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড ।

বিগত দিনে ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ , মোটা অংকের টাকা নিয়ে শিক্ষক, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও তিনি কিছুদিন আগে ছাত্রী ধর্ষন চেষ্টা মামলায় কারাবাস করেছে বলে জানা গেছে । এ সব অনিয়ম আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে কোন এক অজানা কারণে মুখ খুলছেনা এলাকাবাসী।

জানা গেছে, বাসন্ডা ইউপির ৮ বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন মল্লিক এর বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে অসামান্য অবদান রয়েছে। নিজস্ব অর্থাায়নে তিনি বিদ্যালয়ের চেয়ার টেবিল, স্টিলের আলমারী, পাঠাগারের বিভিন্ন বই, খেলাধুলার সরঞ্জাম কিনে শিক্ষার মান উন্নয়ন করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশ ফটকটি তিনি লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মান করে দিয়েছিলেন।

বিদ্যালয়ের সংলগ্ন রাস্তা পাকা করণ, আসবাবপত্র ক্রয়, বিভিন্ন সময়ে সরকারী ও ব্যক্তিগত অনুদান, অভিভাবকদেরকে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করতে সে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি । কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুরাগের অভাবে চেয়ারম্যানের এ উন্নয়ন কর্মকান্ডও থমকে দাড়ায়। কর্তৃপক্ষ একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে একাধিক মহল থেকে ।

এ যাবৎ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা বেতন নিয়ে যেতে পারলেই বাচেঁ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কতটুকু উন্নত হয়েছে তার দিকে কারো কোন খেয়ালই নেই। মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখানে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ করা হচ্ছে শিক্ষক।

ব্যপস্থাপনা পরিষদের সভাপতি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন বিধায় বিদ্যালয়ের কোন খোজ খবর রাখা তার পক্ষে অসম্ভব। এসব অনিয়ম দূনীর্তির নিয়ন্ত্রন না থাকলে বর্তমান সরকারের শিক্ষার উন্নয়ন ধারা ব্যাহত হবে বলে একাধিক সুধী জনের অভিমত। এ অনিয়মের দ্রুত তদন্ত ও বিচার দাবি করছে এলাকাবাসী। উন্নয়নের স্বার্থে এই আসনের সাংসদ শিল্পমন্ত্রী জননেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু এমপি ও শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছে এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. জয়নূল আবেদীন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বিদ্যালয়টি উন্নত করতে। আমার ভাই মো.ফরিদ খান এলাকায় থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রধান শিক্ষক ইতিমধ্যে পত্রিকায় দিয়েছেন। আর তাছাড়া এনটিসিআর এর নিকট শিক্ষকের ব্যাপারে বলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অন্যের অধিনে চাকরি করি। বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। সবকিছু একতরফা নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে। আমাদের হাতে কিছু নেই।

(এসবি/এসপি/জানুয়ারি ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test