E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ইঞ্জিনভ্যান উল্টে জখম

অবশেষে হার মানলেন দেবহাটার যুবলীগ কর্মী আল আমিন

২০১৮ জানুয়ারি ০৮ ১৭:২২:৪৭
অবশেষে হার মানলেন দেবহাটার যুবলীগ কর্মী আল আমিন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে সোমবার ভোরে হার মানলেন যুবলীগ কর্মী আল আমিন। গত ১৯ অক্টোবর দলীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে যাওয়ার পথে ইঞ্জিনভ্যান উল্টে দুর্ঘটনায় জখম হয় সে।

আল আমিন (২৩) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের জামায়াত আলী মোড়লের ছেলে।

দেবহাটা উপজেলার খাসখামার গ্রামের ফার্জিনা খাতুন জানান, নয় মাস আগে আল আমিনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আল আমিন তার বাবা জামাত মোড়লের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। আওয়ামী যুবলীগের সে একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। সংসার স্বচ্ছল ছিল।

তিনি জানান,গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে পারুলিয়া বাসস্ট্যাণ্ডে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে যাচ্ছিল আল আমিন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক। পথিমধ্যে ইঞ্জিনভ্যান উল্টে কুমোরমারির শামীমের ঘেরের পাশে পড়ে যাওয়ায় মারাত্মক জখম হয় সে। দুর্ঘটনার পরপরই আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ ফরহাদ জামিল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা জেনারেল হাসপাতাল বা ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।

তিনি আরো জানান, আল আমিনকে ২০ অক্টোবর দুপুরে সাতক্ষীরার ফারজানা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ডাঃ মনোয়র হোসেন রাতেই তার পেটের ক্ষত বিক্ষত নাড়ী অপারেশন করেন। অপারেশনের পর ডাঃ
মনোয়র হোসেন ভারতে সরকারি প্রশিক্ষণে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তাকে ৩ নভেম্বর খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ মেহরাব হোসেন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে তাকে ২৩ নভেম্বর খুলনার সিটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক ডাঃ প্রশান্ত বিশ্বাসের পরামর্শ মত আল আমিনকে গত ২ ডিসেম্বর ডক্টরস প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব আল আমিন যতক্ষন মুখ দিয়ে খেতে না পারবে ততক্ষণ দ্বিতীয় বার অপারেশন করা যাবে না বলে পরামর্শ দেন।

একপর্যায়ে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২৫ ডিসেম্বর বাড়িতে আনা হয়। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি পাসপোর্ট তৈরির জন্য ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগেই
বাড়িতে কঙ্কালসার শরীর নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে সোমবার ভোর ৫টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আল আমিন।

শিক্ষক এশার মোড়ল জানান, তার ভাইপো আল আমিন সহজ সরল মানুষ ছিল। আওয়ামী লীগ বলতেই ছিল নিবেদিত প্রাণ। আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গ সংগঠণের কোন সভা সমাবেশ হলে কাজ বাদ দিয়েই ছুঁটে যেতো সেখানে। এরপরও যুবলীগের সমাবেশে যাওয়ার পথে আহত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হলো তাকে।

তবে যে বিপুল পরিমান টাকা খরচ হয়েছে তার একটি বড় অংশ বহন করেছেন জেলা পরিষদ সদস্য আল ফেরদৌস আলফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সাংগঠণিক সম্পাদক সখীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন রতন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর স্থানীয় বিজয় ঘোষ ও দীলিপ মণ্ডলসহ অনেকেই।

তবে আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, ডাঃ রুহুল হকের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে হয়তো বা তাকে আরো কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা যেতো।

মৃতের বাবা জামায়াত আলী জানান, সোমবার বাদ জোহর স্থানীয় টিকেট পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের পাশে নামাজে জানাযা শষে পারিবারিক গোরস্থানে আল আমিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test