E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেবহাটায় সংখ্যালঘুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা

হাইকোর্ট-পুলিশের নির্দেশ মানেন না নুর আমিন 

২০১৮ জানুয়ারি ০৮ ১৮:৩৩:৫৭
হাইকোর্ট-পুলিশের নির্দেশ মানেন না নুর আমিন 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : হাইকোর্ট ও পুলিশের নির্দেশ  উপেক্ষা করে দেবহাটার বহুল আলোচিত নূর আমিন সাতক্ষীরার দেবহাটার দক্ষিণ পারুলিয়ায় এক সংখ্যালঘুর ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জায়গা দখলের চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন। সোবার সকালে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে তার নির্দেশে ওই গুদামঘর সংস্কার করছেন বলে দেবহাটা সহকারি পুলিশ সুপারকে প্রতারণা করেছেন তিনি।

দক্ষিণ পারুলিয়া গ্রামের লালু বিশ্বাসের ছেলে তপন বিশ্বাস জানান,সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসায়ি মাহাবুব বিশ্বাসকে ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তার গুদামঘরটি ভাড়া দেন তিনি। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘর ছেড়ে দেবেন বলে তাকে লিখিতভাবে জানান মাহবুব বিশ্বাস। আমিন ফিস এর মালিক নুরুল আমিন পাইকারি ব্যবসায়ি হিসেবে মাহাবুব বিশ্বাসের ব্যবসা তদারকি করে থাকেন।

১৯৯৭ সালে তার কাছ থেকে চার শতক জমি কেনার পর তাতে ভবন তৈরি করে ব্যবসা করে আসছেন একই গ্রামের এনায়েতুল্লা শেখের ছেলে শেখ আবুল হোসেন। এরপরও ওই জমি আবারো দাবি করে মাহাবুব বিশ্বাসের কাছে ভাড়া দেওয়া ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের ২৩ জুন জবরদখল করার চেষ্টা চালান আবুল হোসেন, তার শ্যালক মেহেদী হাসান উত্তম, নূর আমিন, তাজুল ইসলামসহ একটি মহল। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ তিনি সে যাত্রায় রেহাই পান। এরপরও গুদামঘর দখল করার পায়তারার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে সাতক্ষীরা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ -২য় আদালতে মামলা করেন আবুল হোসেন।

ওই আদালতের গত ১৫ নভেম্বরের একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশের উপর গত ১৩ ডিসেম্বর স্থগিতাদেশ দিয়ে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিষয়টি সাংসদ ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, দেবহাটা সহকারি পুলিশ সুপার, দেবহাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর নূর আমিন, শেখ আবুল হোসেন, মেহেদী হাসান উত্তম, রুবেল, খায়রুলসহ সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা ওই গুদাম ঘরের সামনে লাগানো ‘এনসিসি ব্যাংক পারুলিয়া শাখায় দায়বদ্ধ’ সাইনবোর্ডটি তুলে ফেলে দিয়ে তার পাশে পলাশ এন্টারপ্রাইজের সাইন বোর্ড লাগিয়ে দেয়।

একই সাথে ওই গুদামের মালিক আবুল হোসেন বলে দেয়ালে লিখে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে নতুন তালা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে লাগিয়ে দেওয়ার পর চাবি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে মাহাবুব বিশ্বাসের তত্বাবধায়ক হিসেবে নূর আমিনের কাছে চাবি দিয়ে দেন। প্রতিবাদ করায় হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাকে (তপন) ও তার পরিবারের সদস্যদের।

এ ঘটনায় তিনি ১৪ ডিসেম্বর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপরও উপপরিদর্শক আব্দুল কাদেরের উস্থতিতে আবুল হোসেন ও তার লোকজন ১৬ ডিসেম্বর দুপুরে গুদাম ঘরের পাশের কিছু খালি জায়গা দখল করে রুবেলকে দিয়ে চায়ের দোকান বসায়। প্রতিবাদে তিনি ২০ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পরদিন বিকেল দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে এসে মাহাবুব বিশ্বাসের কাছ থেকে দোকান বুঝে নেওয়ার সময় তাকে (তপন) সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। গত ২৫ ডিসেম্বর একইভাবে তাকে আশ্বস্ত করেন সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান ও সাংসদ ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নুর আমিন প্রতিপক্ষ আবুল হোসেনের পক্ষ নিয়ে গত শনিবার তার ভাড়া দেওয়া গুদামঘর দখলের চেষ্টা চালালে সার্কেল অফিসার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিনের পরামর্শে তা বন্ধ হয়। সোমবার সকালে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নির্দেশে মাছ প্রসেসিং কারখানা হিসেবে সংস্কার করার মিথ্যা কথা বলে গোডাউনে রঙ এর কাজ ও নেট লাগানো শুরু করেন নূর আমিন। পরে বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম আরিফুল হক, সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিনের হস্তক্ষেপে কাজ বন্ধ করে দেন উপপরিদর্শক উজ্জ্বল রায়। এরপরও পুলিশের উপস্থিতিতে যে কোন মূল্যে ওই ঘর দখল করার হুমকি দেন নুর আমিন।

জানতে চাইলে নুর আমিন বলেন, তিনি আবুল হোসেনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ওই গুদাম সংস্কার করছিলেন।

মাহাবুব বিশ্বাস বলেন, তিনি ওই ঘর তপন বিশ্বাসকে বুঝিয়ে দিতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। তপন বিশ্বাসের সময় হলে তিনি তাকে ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেবেন।
দেবহাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুদ্দিন বলেন, তিনি আবুল হোসেন বা নূর আলমকে ঘর সংস্কার কথা বলেছেন এটা সঠিক নয়।

দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন জানান, দেবহাটা উপজেলা মৎস্য কর্মতা নূর আমিনকে ঘর সংস্কার করার কথ বলেছেন এমন কথা যাঁচাই করে সত্যতা না পেয়ে তাকে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। যেখানে হাইরকোর্টের আদেশ রয়েছে তা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে নুর আমিন বা আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক মোখিক অভিযোগ পাওয়ার পর লিখিতভাবে দিতে বলা হয়েছে তপন বিশ্বাসকে। সে অনুযায়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test