E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বনানী-গুলশানে হাঁটারও জায়গা নেই

২০১৮ জানুয়ারি ২২ ১৬:৫৭:১৮
বনানী-গুলশানে হাঁটারও জায়গা নেই

স্টাফ রিপোর্টার: এই শহরের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর আড়ম্বরপূর্ণ স্থানের নাম বললে এক কথায়ই যে কেউ বনানী, গুলশান আর বারিধারার নাম বলবেন। সে কারণেই হয়তো বিদেশি দূতাবাস থেকে শুরু করে বহুজাতিক সব কোম্পানির কার্যালয় এখানে।

কিন্তু বর্তমানে এই প্রায় দেড়শ বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাঁটার কোনো পথ নেই বললে চলে। উন্নয়ন কাজ চলছে ফুটপাতে, আর তার ধুলোয় সয়লাব পুরো এলাকা। পাঁচ মিনিট পথে হাঁটলেই মাথার কালো চুল ধূসর হয়ে যাবে নিমিষে।

গত আড়াই মাস ধরেই উন্নয়ন কাজ চলছে এ এলাকাজুড়ে। উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে রাস্তা, ড্রেন এবং ফুটপাত নির্মাণ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাভুক্ত এই এলাকার মানুষ ধুলো-বালি আতঙ্কে এখন পথেই বের হতে চান না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ চলছে। ফুটপাতগুলো ভেঙে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন যাওয়া-আসা করছি এ পথে। এতো ধীরগতির কাজ!

তিনি বলেন, মাঝে অনেকদিন কোনো কাজ চোখে পড়েনি। আবার কিছুদিন ধরে দেখছি ভাঙার কাজ চলছে। ভেঙে ইট-সুড়কি রাস্তায়ই ফেলে রাখা হচ্ছে। বিকল্প হাঁটার পথ তৈরি না করেই ফুটপাতের কাজ ধরা চরম অপেশাদারিত্ব। আবার গাড়ি চলার পথেই ইট-সুরকি রাখায়, সেখানেও হাঁটার উপায় নেই। হাঁটলে রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটতে হবে।

একটি বেসরকারি ব্যংকের কর্মকর্তা রাসেল খান বলেন, পথে হাঁটার কোনো উপায় নেই। ডিভাইডারের কাজ করায় মূল সড়কও সংকুচিত হয়ে গিয়েছে। আর এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। সে কারণে গাড়িগুলোও দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফুটপাত ভেঙে ফেলায় পথচারীদের চলতে হয় রাস্তার মাঝ দিয়ে।
রাসেল বলেন, মূল সড়ক ছাড়াও গলিগুলোরও একই অবস্থা। একটি এলাকার ফুটপাত আর ডিভাইডারের কাজ করতেই যদি আড়াই মাসের বেশি সময় লাগে, এদের অন্য কাজ দিলে কী হবে। আর ধুলায় এখন গুলশান-বনানী এলাকায় অফিস বা ঘর থেকে বের হওয়া দুষ্কর। এদের ব্যবস্থাপনা খুবই বাজে।

বিদেশের অভিজ্ঞতা থেকে রাসেল বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এখনকোনো সড়ক বা ফুটপাত তৈরির আগে বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়। যে নির্মাণ কাজই করুক, বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকে না ভেতরে কী কাজ হচ্ছে। আর এটা যেন মগের মুল্লুক! যেভাবে ইচ্ছে, সেভাবেই ফেলে রাখা হচ্ছে মালামাল।

সিএনজি চালক রশিদ বলেন, এখানে সড়কগুলো এখন চেপে গিয়েছে। পথের ডিভাইডারগুলো যেমন নতুন করে বানানো হচ্ছে, তেমনি ফুটপাতও ভেঙে রাখা হয়েছে। মানুষ গাড়ি চলার পথ দিয়ে হাঁটছে। দিন-রাত যানজট লেগে আছে। এদিকের ভাড়া নিতে ইচ্ছে হয় না। আর ধুলো-বালিতেও অবস্থাও খারাপ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এখন গুলশানের রাস্তায় কয়েকশ’ মিটার দূরেও আর দেখা যায় না, ধুলোয় ছেয়ে থাকে পথ।ফুটপাত ভেঙে ফেলায় পথচারীদের চলারও জায়গা নেই। ছবি: মাজেদুল হকসোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে গুলশান ১ নম্বর থেকে শুটিং ক্লাব পর্যন্ত সড়কে দেখা যায়, হাঁটার সব ফুটপাত ভেঙে রাখা হয়েছে। অথচ সকালে কোনো ধরনের কাজ চোখে পড়েনি। মূল সড়ক থেকে ১৩৮ নং রোডে ঢুকলেও একই অবস্থা। ফুটপাত না থাকায় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে মূল সড়কে।

চার চাকার গাড়ি নয় শুধু, মোটরসাইকেল গেলেও ধুলো উড়ে যায় পথে। পথচারীদের নাকে-মুখে হাত চেপে রাখতে হয়।

এই তিনটি এলাকায় উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে ডিএনসিসি। তাদের গুলশান, বনানী এবং বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার রাস্তা, ড্রেন এবং ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।

২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর থেকে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন সূত্র। আর প্রকল্পের শেষ তারিখ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল।

ফুটপাত ভেঙে ফেলায় পথচারীদের চলতে হয় রাস্তার মাঝ দিয়ে। এলাকাবাসী বলছেন, এই কাজ ৭ নভেম্বরের অনেক পরে শুরু হয়েছে। আর ৫ এপ্রিলের মধ্যে যে এই কাজ শেষ হবে, তার কোনো লক্ষণই দেখতে পারছেন না গুলশান, বনানী ও বারিধারাবাসী।

(ওএস/পিএস/জানুয়ারি ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test