E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের কার্যক্রম 

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৮:০৯:৪৭
খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্টের কার্যক্রম 

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমতা ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামে জিয়া মেমোরিয়াল আরফানেজ ট্রাষ্ট এখন বেহাল অবস্থায়। ফাটলে ভরা দেয়াল ও খসে পড়া প্লাস্তারা নিয়ে রিতিমত করুন অবস্থায় দাড়িয়ে আছে এই এতিমখানাটি। আর বর্তমানে মাত্র ৩ জন এতিমসহ ১৫জন শিশুকে দর্জি প্রশিক্ষন ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত জিয়া মেমোরিয়াল আরফানেজ ট্রাষ্টের কার্যক্রম বাগেরহাটে চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। শনিবার সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য মিলেছে। 

দেশের ১০ থেকে ১৮ বছরের এতিম অসহায় দুস্থ্যদের পূর্নবাসন ও স্বাবলম্বি করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে ৩.৯০ একর জমির উপর নির্মিত জিয়া মেমোরিয়াল আরফানেজ ট্রাষ্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমান।

এরপর ২০০০ সালে ভবন নির্মিত হলে ৩০ জন এতিম শিশু নিয়ে যাত্র শুরু হয়। সে সময় ভনটিতে ৫ কক্ষের অফিস, এতিম-দুস্থ্যদের থাকার জন্য ৩০ শয্যা বিশিষ্ট্য ২ তলা আবাসিক ভবন, ১৮ কক্ষের ২তলা প্রশিক্ষন ভবন, এক তলা ক্লিনিক ভবন, মসজিদ, পুকুর, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষন উপকরণ এবং ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় সবই ছিল। এরপর থেকে গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন এতিম ও দুস্থ্য শিশু নিয়ে ২০১১ পর্যন্ত চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে কোনদিনই চালু হয়নি প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র ক্লিনিকটি। তবে ২০১০ সালে ওমান সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির সৌন্দয্য বর্ধনের কাজ করা হয়।

বিগত বছরগুলোর মধ্য ২০১২ সালে ১২ জন, ২০১৩ সালে ১০ জন, ২০১৪ সোলে ৬ জন, ২০১৫ সালে ৬ জন, ২০১৬ সালে ৫ জন ও ২০১৭ সালে ১৮ জন এতিম বাগেরহাটের ফতেপুরে জিয়া মেমোরিয়াল আরফানেজ ট্রাষ্টে থেকে শিক্ষা গ্রহন ও প্রশিক্ষন নিযেছে। এখন এই এতিমখানায় আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে মাত্র ৩ জনে । তবে প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখতে ২০০৯ সালে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও ২০১২ সালে মহিলাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষন কোর্স চালু করা হয়। আর বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিকে ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী ২২ জন শিশু আছে আর দর্জি বিজ্ঞান কোর্সে আছে ১৫ জন শিক্ষার্থী।

এই প্রতিষ্ঠানটিতে থাকা ১০ বছর বয়েসী বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার পিংগুড়িয়া গ্রামের মুরাদ মল্লিক বলেন,এক বছর আগে বাবা বেলা মল্লিক মাকে ছেড়ে চলে গেলে আমার মা এখানে দিয়ে যায়। এখানে ভালোই আছি। কাজ শিখতাছি। বাগেরহাট সদর উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের অলিয়ার রহমানের ছেলে মিলন শেখ (১১) বলেন, আব্বা খোঁজ নেয় না। মা মানুষের বাড়ি কাজ করে। তাই আমি এখানে থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি কাজ শিখছি।

প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আফতাব আলম বলেন, ২০০০ সালে আমি দায়িত্বে এসেছি। তারপর থেকে প্রতিমাসে যে খরচ হয় তা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.এম মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে এই প্রতিষ্ঠানের ট্রেষ্টি রিয়াজ রহমান চঞ্চু পাঠিয়ে থাকে। তিনি এখন আমেরিকায় বসবাস করেন। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে স্যারের একাউন্টেট হাসান সাহেব প্রতিমাসে খরচের টাকা পাঠান। বর্তমানে প্রতিমাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।

বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে অধ্যক্ষ আফতাব আলম আরও বলেন, বর্তমানে একজন অধ্যক্ষ, ১জন শিক্ষক, দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষক, ইমাম, বাবুর্চি ও ২ জন গার্ড আছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২শ ৬২ জন এতিম ও দুস্থ্য এখান থেকে পড়াশুনা ও প্রশিক্ষন নিয়েছেন। বর্তমানে ৩জন এতিম রয়েছে। যাদেরকে দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু আছে সেখানে ২২ জন শিশু পড়াশুনা করছে। মহিলাদের দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষনে ১৫ জন প্রশিক্ষানার্থী আছে। সকালে মসজিদে স্থানীয় শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এতিম ও দুস্থদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।

বাগেরহাট সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কানিজ মোস্তফা বলেন, জিয়া ট্রাস্ট এতিমখানা সমাজ সেবা কার্যালয়ে নিবন্ধিত নয়। সেকারনে আমাদের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানের কোন তথ্য নাই।

(এসএকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test