E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

উপকূলের শিক্ষা- শেষ পর্ব

চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক শিক্ষিকার ‘শিক্ষা যুদ্ধ’

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৪:৪১:৩৮
চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক শিক্ষিকার ‘শিক্ষা যুদ্ধ’

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : শুরুটা হয়েছিলো পাঁচ বছর আগে। সাগরের বুকে জেগে ওঠা চরে আশ্রয় নেয়া ভূমিহীন শতশত পরিবার তখন প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আয়লার তান্ডবে সর্বস্ব হারিয়ে জীবন বাঁচাতে লড়ছিলো প্রকৃতির সঙ্গে। দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে পাঁচ-দশ বছর বয়সী শিশুদেরও তখন শ্রম বিক্রি করতে হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সমুদ্রের বুকে জেগে ওঠা সেই কাউয়ার চরে পাঁচ বছরে এক শিক্ষিকার শিক্ষা যুদ্ধে এখন ‘শিক্ষা বিপ্লব’ ঘটেছে। শ্রম বিক্রি নয়, এই চরের শিশুরা এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন চরে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছে প্রতিটি ঘর।

প্রায় ১২’শ পরিবারের আশ্রয় এই কাউয়ার চরে। এদের মধ্যে আশি ভাগ পরিবার ছিন্নমূল। সরকারি খাস জমিতে ঝুপড়ি, টিনসেড ঘর করে বসবাস করছে। এখনও অর্ধেক মানুষ স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানির সেবা বঞ্চিত। উপার্জণ বলতে সাগরে মাছ ধরা ট্রলার, নৌকায় বদলা জেলে ও চরের জমি বন্দোবস্ত নিয়ে কৃষি কাজ। শতকরা ৩০ ভাগ পরিবারের নারী-পুরুষের যৌথ শ্রম বিক্রির টাকায় এখনও সংসার চলে।

উচ্চ শিক্ষা তো দূরের কথা একসময় শিশুদের স্কুলে পাঠানোই যে অভিভাবকদের কল্পনার অতীত ছিলো, সেই সব পরিবারের শিশুরা এখন স্কুলে পড়ছে। এরাই একদিন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চরের বুকে শিক্ষার আলো ছড়াবে এই স্বপ্ন দেখছে এই কাউয়ার চরের প্রকৃতি ও ক্ষুধার সাথে যুদ্ধ করা পরিবারগুলো।
২০১৪ সালের কথা। কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিনে সাগর ঘেষা চর ‘দক্ষিণ কাউয়ার চর’। এই চরের পিছিয়ে পড়া পরিবারের ৩০ শিশু নিয়ে একটি উন্নয়ন সংস্থা চালু করে একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডশীপ প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এ ৩০ শিশুকে প্রাথমিক গন্ডি পার করাতে নিয়োগ করেন শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বেগমকে।

সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্টেণ এ প্রতিবছর প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষা বর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করলেও ব্যতিক্রম ফ্রেন্ডশীপ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরাই এখন চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। এরাই ভর্তি হয়েছিলো প্রাক প্রাথমিকে। সেখান থেকে প্রতিবছর ক্লাস ওয়ান, টু ও থ্রি পাশ করে এবছর তারা চতুর্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বিদ্যালয়ের লক্ষ্য একসাথে একশ জনকে শিক্ষিত করা সম্ভব নয়, ছয় বছর মেয়াদী ভর্তি প্রক্রিয়ায় যারা প্রাক প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিলো সেই শিক্ষার্থীরাই পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর দ্বিতীয় ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে ২০২০ সালে। আর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষিা হোসনেয়ারা বেগম।

মঙ্গলবার সকাল ১১টা। কাউয়ারচরের মেঠোপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো জাতীয় পতাকা উড়ছে। একটু এগুতেই শোনা গেলো শিশুরা ছন্দ মিলিয়ে ছড়া আবৃত্তি করছে। কাছে যেতেই দেখা গেলো একটি টিনসেট স্কুল। বিস্তীর্ন বালুচরে এই বিদ্যালয়টিই এখন জ্ঞানের আলো বিতরন কেন্দ্র।

২০০৭ সালের কথা। ঘূর্নিঝড় সিডরের জলোচ্ছাসে কলাপাড়ার সবচেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিলো এই গ্রামটি। প্রানহানীর সাথে অন্তত ৮’শ বসত ঘর মুহুর্তের মধ্যে ভাসিয়ে নিয়ে গোটা গ্রামটিকে মরুভূমিতে পরিনত করেছিলো। সেই কাউয়ারচরের এখন সবুজের সমারোহ। সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো ঘুরে দাড়িয়েছে বেঁচে থাকার সংগ্রামে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে। কিন্তু কিভাবে এ তথ্য জানালেন ফ্রেন্ডশীপ দক্ষিন কাউয়ারচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বেগম।

হোসনেয়ারা বেগম বলেন, একটি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টানো সত্যিই কষ্টকর। তাই তাদের পরিকল্পনা ছিলো বয়স্কদের সচেতন না করে শিশুদের সচেতন করতে হবে। শিশুরা সচেতন হলে তারাই সচেতন করে তুলবে বাবা-মাকে। কারন বাবা-মায়ের এখন শেখার আগ্রহের চেয়ে অর্থ উপার্জনের আগ্রহ বেশি। তাই এই চরের বালুচরে ২০১৪ সালে এই বিদ্যালয় নির্মান করেন এবং সফলও হন।

এ শিক্ষিকা যখন এ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন স্কুলের ভিতর শিক্ষার্থীরা একমনে বসে কেউ অংক কষছে, কেউবা ছবি অংকন করছে। কেউবা গুনগুনিয়ে ছড়া,গল্প পড়ছে। যেন সবাই শৃঙ্খলাবদ্ধ। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের মুখায়বব দেখা বোঝা গেল কেন তারা এই শিক্ষা যুদ্ধে নেমেছে।

লক্ষ্য করা গেল-এই শিক্ষার্থীদের কারো কারো পায়ে জুতা নেই। ছেড়া জামা, স্কুল ব্যাগও নেই। আর্থিক দৈন্যতায় এই শিশুদের অভিভাবকরা খাতা-কলমও কিনে দিতে পারেন না। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে এই বিদ্যালয় থেকে দেয়া হয় ছয়টি করে খাতা, কলম, পেন্সিল ও জ্যামিতি বক্স। সরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলমুখী করতে বিস্কুট বিতরন করা হয়। তাদের থাকে স্কুলের পোষাক। কিন্তু এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থী উপস্থিত প্রায় শতভাগ।

শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বেগম টিনসেড স্কুল ঘর ঘুড়িয়ে দেখাতে দেখাতে বললেন, শুধু বই পড়েই শিক্ষিত হওয়া যায়না তাই শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তাদের দিয়ে স্কুলের পাশে বিভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়েছেন। স্কুলের সামনের মাঠে ছেলেদের জন্য ফুটবল খেলা, মেয়েদের জন্য দড়ি লাফসহ ছবি আঁকা, আবৃত্তিসহ না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় ক্লাস রুমেই।

দূর্গম এই চরের যুবক সাফিজুল ইসলাম (১৮)। স্কুলের বাড়ান্দায় পা রাখা হয়নি। তার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে তার ভাষায়, ‘যেইবার বইন্যা হইছে তহন আমি মার কোলে আছিলাম। যহন থেইক্যা বোঝতে শেখছি হ্যাই থেইক্যাই মাছ ধরছি। আর আমাগো বয়সীরা সবাই কিছু না কিছু করে। আমিতো দশ বছর ধইর‌্যা মাছ ধরছি, ল্যাহাপড়া করার সময় কই। আর যহন আমাগো গ্রামে স্কুল হইছে তহন আর আমাগো পড়ার বয়স নাই।’ এই সাফিজুলের বয়সী শতশত যুবক আর্থিক সংকট, পারিবারিক দৈন্যদশায় সংসারের হাল শ্রম পেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেললেও বিপরীত এই প্রজম্মের শিশুরা।

এ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী লাভনী। দক্ষিণ কাউয়ার চরের জেলে লোকমান হোসেনের ছোট মেয়ে। তার চার বোন রুমা, রুবি, সীমা ও রিনা। এদের কারোরই স্কুলে যাওয়া হয়নি। আর তার একমাত্র ভাই রেজাউল করিম মাদ্রাসায় পড়ে।

লাবনীর ভাষায়, ‘আব্বায় কইছে আমার আপুরা যহন বড় হইছে তহন এই গ্রামে স্কুল আছিলো না। হেইয়ার লাইগ্যা কেউ স্কুলে পড়ে নায়। আমাগো নাকি আগে ঘর বাড়ি আছিলো না। বইন্যায় ভাষাইয়া লইয়া গ্যাছিলো। গ্রামে স্কুল হওয়ার পর আমারে এইহানে ভর্তি কইর‌্যা দেছে। এই লাবনীর মতো তার বয়সী গ্রামের সব শিশুই এখন সকাল হলেই স্কুলে যাচ্ছে।’

স্বামী রাজ্জাক তালুকদারের মৃত্যুর পর সন্তানকে ‘শিক্ষা যুদ্ধ’ থেকে সরিয়ে নেননি মা শেফালী বেগম। মৃত স্বামীর স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে নিজের ভবিষত বিসর্জণ দিয়ে সন্তানের ভবিষত গড়তে দিনরাত শ্রমের কাজ করছেন তিনি। তার স্বপ্নের সারথী সিয়াম (রোল নং ৮) এখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।

সিয়াম জানায়, ‘মায় (মা) খুব কস্ট কইর‌্যা আমারে পড়ায়। মোরতো বাপ নাই। মায় কইছে আমারে বেশি কইর‌্যা ল্যাহাপড়া করতে হইবে। সাহেব হমু। একদিন আমি গ্রামের বাচ্চাগো পড়ামু। এ কথাগুলো যখন সে বলছিলো তার চোখেমুখে এখন জয় করার ইচ্ছা শক্তি ভেসে উঠছিলো।’

একই ক্লাসের ছাত্রী শান্তা (রোল নং ২৩)। দিনমজুর মো. সাজাহান মিয়ার পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে দ্বিতিয় শান্তাই এ পরিবারে প্রথম যে স্কুলে যায়। তার বোন সাথীর বিয়ে হয়ে গেছে পুতুল খেলার বয়সেই। ছোট ভাই আমিনুল এ বছর ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছে। অপর ছোট দুই ভাই-বোন আমিনুল ও সুমাইয়া এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি।

শান্তা জানায়, ‘আপুর বিয়া হইছে ছোডকালে। হেতো স্কুলে পড়েই নায়। আমি কলেজে পড়মু। ছোট ভাই-বোনগোও পড়ামু। টিভিতে দেখছি যে পোলাপান স্কুলে না পড়ে হ্যাগো কি কষ্ট। মাইনষের লগে কাম করতে হয়। মোরা কাম করমু না, চাকরী করমু।’ মেয়ের এ কথা স্কুলের পাশে দাড়িয়ে জানালা দিয়ে শুনছিলেন পিতা সাজাহান। মেয়ের কথা শুনে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে ত্রা।

তিনি বললেন, ‘মাইয়াডা তো ছোট হেইয়ার লাইগ্যা বোজে না ল্যাহাপড়া করা আমাগো লইগ্যা না। কলেজে পড়তে কতো টাহা খরচ হয় হেইয়া বোজে না। আমি মাইনষের লগে কাজ কইর‌্যা কোনদিন তিনশ, কোনদিন চাইরশ টাহা পাই। হেইয়া দিয়া অগো খাওয়ামু না, ল্যাহাপড়া করামু কন।’ তবে তারও ইচ্ছা শরীরে যতোদিন শক্তি আছে ততদিন এই চার সন্তানকে লেখাপড়া শিখাবেন।

এই বিদ্যালয়ের ছাত্র সানাউল্লাহ’র স্বপ্ন বড় হয়ে পাইলট হবেন। প্লেন চালাবেন। এজন্য তাকে অনেক পড়ালেখা করতে হবে এটাও বুঝতে পারেন। তার বাবা ক্ষুদ্র জেলে আতাহার ভূইয়া ছেলের স্বপ্নপূরন করার চেষ্টা করবেন বলে জানালেন।

তিনি বলেন, ‘পাঁচটা পোলা-মাইয়া। আমাগো সময়তো এইহানে স্কুল আছিলো না। হেইয়ার লাইগ্যা একটা পোলা ছাড়া দুই মাইয়ারে ল্যাহাপড়া করাইতে পারি নাই। আল্লার ইচ্ছায় ছোড পোলাডা (সানাউল্লাহ) অনেক ভালো হইছে (মেধাবী)। অরে চেষ্টা করমু ল্যাহাপড়া করাইন্নার।’ এ অভিভাবকের মতো এই চরের শতশত অভিভাবক এখন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন। ৩-৪ মাইল পায়ে হেঁটেও এখন চরের শিশু-কিশোর-কিশোরীরা স্কুলে যাচ্ছে স্বপ্নপূরনের জন্য।

গৃহবধূ লাকী বেগম বলেন, ‘ক্লাস ফোরে পড়া অবস্থায় মোর বিয়া হইয়া গ্যাছে। একদিন ইসকুল দিয়া আইয়া হুনি মোর বিয়া। আমাগো বয়সী মাইয়াগো আগে ফোর-ফাইভেই বিয়া হইয়া যাইতো। কিন্তু এ্যাহন আর বাইল্যোবিয়া (বাল্যবিবাহ) অতো হয়না। এইহানে স্কুল হওয়ার পর সবাইরে হ্যারা বুঝাইছে বাইল্যো বিয়ার কুফল। আমরাও আমাগো মাইয়াগো অল্প বয়সে বিয়া দিমুনা।’

গোটা চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে যে শিশুরা সকাল হলেই মাঠে-ঘাটে, বালুচরে খেলাধুলা কিংবা কোন কোন শিশু মাছ ধরা নৌকায় কাজ করতে যেতো সেই সব শিশুরা এখন স্কুলগামী হয়েছে। ৫-৭ বছর বয়সী কোন শিশুই এখন সকাল হলে খেলার সামগ্রী নিয়ে না নেমে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের এই ফ্রেন্ডশীপ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানকার শিক্ষিকার আন্তরিকতায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার গ্রহনযোগ্যতা অভিভাবকরা জানতে পারায় এই চরের ফ্রেন্ডশীপ পরিচালিত আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর চাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানকে ভর্তি করছে।

অভিভাবক উজ্জল সরদার বলেন, এই চরে স্কুলডা না হইলে আমরা বোজতামই না ল্যাহাপড়া না কইর‌্যা আমরা কি ভুল করছি। আমরা টিপসই দেই। কিন্তু আমাগো পোলাপান টিপসই না তারা সাক্ষর দিবে। মাইয়াডা ( চাদনী চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। রোল নং ১) স্কুলে পড়ে। আর এক বছর পর বড় স্কুলে ( মাধ্যমিক বিদ্যালয়) যাইবে। আল্লায় রহম করলে কলেজেও পড়ামু। আপায় যদি আমার মাইয়ারে এই স্কুলে ভর্তি না করতো তাহলে অর হয়তো ল্যাহাপড়াই হইতো না।

শিক্ষিকা হোসেনেয়ারা বেগম বলেন, তারা এ বিদ্যালয়ে ক্লাস চালুর পর থেকে একজনের দেখা দেখি অন্যজন তাদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করছে। তাঁরা গ্রামের প্রতিটি ঘরে গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করতে। প্রথম অনেকে রাজি হয়নি। কিন্তু পড়ে যখন রাজি হয়েছে তখন তাঁদের সীমাবদ্ধতা থাকায় অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর। তাঁদের এখানে ৩০ শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও আর্থিক দৈণ্যতায় পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে পাঁচ শিশু ঝরে গেছে। এখন ২৫ শিক্ষার্থীকে তারা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করাবেন।

একইভাবে কাউয়ার চর বটতলা এলাকায় অণ্যস্কুলে ৩১জন শিক্ষার্থী এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১০ বছর আগে। এ বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে ২৬ শিক্ষার্থী এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

কাউয়ার চর এলাকার ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, কাউয়ার চরে প্রায় আটশ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। এসব পরিবার এতোদিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলো। কিন্তু ফ্রেন্ডশীপ স্কুল নির্মাণ হওয়ার পর গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার হার বাড়ছে, মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মলি লাল সিকদার জানান, উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়ে সরকারি বিস্কুট বরাদ্দের নির্দেশনা নেই। তবে এই বিদ্যালয়গুলো গ্রামীন জনপদে শিক্ষার হার যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া হার কমেছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে বলে জানান।

(এমকেআর/এসপি/ফেব্রয়ারি ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test