E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌলভীবাজারে আন্দোলনের মাঠে দাড়াতে পারছে না বিভক্ত বিএনপি 

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৫ ১৬:৩৫:৩৬
মৌলভীবাজারে আন্দোলনের মাঠে দাড়াতে পারছে না বিভক্ত বিএনপি 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দূর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ আদালতের দেয়া সাজার প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনে ঢাকা সহ দেশের মহানগরী, জেলা-উপজেলায় নির্দেশনা থাকলেও মৌলভীবাজারে এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে জেলা বিএনপি। এখানে রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন দলের সাথে যতটুকু বৈরি সম্পর্ক থাকার কথা, তার চেয়ে বেশি বৈরি সম্পর্ক নিজেদের মধ্যে বিদ্ধমান। তিন ধারায় চরম বিভক্তির ফলে কেন্দ্রের দেয়া কর্মসূচি পালনেও চরম ব্যর্থ দলটির জেলার নেতৃত্ব।

একদিকে দলীয় বিভক্তি প্রকট আর অন্যদিকে কর্মসূচী পালনে পুলিশের কঠোর অবস্থান, বাঁধা, বাসায় বাসায় অভিযান আর মামলার কারনে কোনটাসা দলটির নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতে তিনধারার নেতারাই সচেষ্টা নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের মন চাঙ্গা রাখেতে মাঠের খন্ডিত আন্দোলন কর্মসূচী পালনে । দলের চেয়ারপারসনের সাজার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ কোন কর্মসূচী পালন করতে পারেননি তারা।

পুলিশের হয়রানীর ভয়ে ঝটিকা মিছিলে দায় সারানো কার্যক্রম দিয়ে চলে যাচ্ছেন তারা। আন্দোলের নিয়ে নেতাকর্মীরা রাজপথে যতটানা সরব তার চেয়ে বেশি সরব ইন্টারনেট জগতে, কর্মসূচি পালন করে সাথে সাথেই তা পোষ্ট করছেন ফেইসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে। ডিজিটাল আর নাগরীক সাংবাদিকতার যুগে অবশ্য গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কর্মসূচীর তথ্য আর ছবি পেতে খুব একটা অসুবিধা হয়না।

সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত বেগম খালেদা রব্বানী ও নাসের রহমান নেতৃত্বাধিন জেলা বিএনপিতে দুটি ধারা বিদ্ধমান থাকলেও বর্তমানে আরেকটি উপধারা তৈরি হয়েছে। তৃতীয় এই ধারায় নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ূন।

রাজনীতির উত্তপ্ত মাঠে এতদিন তিনি নিরব থাকলেও চেয়ারপারসনের সাজার রায়কে কেন্দ্র করে হটাৎ সরব হয়ে উঠেন মাঠের রাজনীতিতে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে নিজ বলয়ের অবস্থান প্রমানের প্রতিযোগীতায় ছিলেন কমবেশি সবাই। কিন্তু সফল হতে পারেন নি কেউই। পুলিশি বাধায় শহরের মূল কেন্দ্রে কর্মসূচি পালন করতে পারেন নি তারা । পৃথকভাবে উভয় গ্রুপ চেষ্টা করলেও বারবার পুলিশি বাঁধায় পন্ড হয়েছে একাধিক কর্মসূচি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন ভাগে বিভক্ত বিএনপি একাধিক কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও পুলিশের বাঁধায় পড়েছে সবখানে। অনেক ক্ষেত্রে আবার পুলিশ আসার আগেই দায় সারানো ঝটিকা কর্মসূচি পালন করেছেন নেতাকর্মীরা।

বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুন গ্রæপের সমর্থকদের অনশন পালনের চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে টের পেয়ে মিনিট কয়েকের ব্যবধানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে সটকে পরেন নেতাকর্মীরা।

এর আগের দিন মঙ্গলবার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান গ্রুপের নেতাকর্মীরা শহরের সমশের নগর সড়কে অবস্থান ধর্মঘট পালনের চেষ্টা করেন। আধাঘন্টার অবস্থান ধর্মঘট পালন শেষে পুলিশের ভয়ে তারা ধর্মঘট সমাপ্ত করেন।

এদিকে গত সোমবার বিএনপির মানববন্ধন কর্মসূচিতে সকালে এম নাসের রহমান গ্রুপের সমর্থকরা শহরের কুসুমবাগ এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। পুলিশের আগমন বার্তায় কয়েক মিনিটের ব্যবধানে গাঁ ঢাকা দেন নেতাকর্মীরা

এছাড়া গত ৮ ডিসেম্বর খালেদার রায়ের পর শহরের বড়হাট এলাকা ও শাহ মোস্তফা কলেজ এলাকায় কয়েক দফা কর্মসূচি পালনের চেষ্টায় ছিলেন নাসের রহমান ও মিজান গ্রুপের নেতা কর্মীরা। ফয়জুল করিম ময়ুন গ্রুপের নেতাকর্মীদেরও কর্মসূচিতে দেখা গেছে। তবে শহরের কোন জনবহুল স্থানে তাদের দেখা মিলেনি।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজার সদরে অন্তত ১০ টি ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি। তার বেশিরভাগ মিছিল হয়েছে শহরের প্রধান সড়কগুলো এড়িয়ে। এসকল মিছিল ৫ মিনিটের বেশি সময় অবস্থান করতে পারেন নি নেতাকর্মীরা। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করে সামাজিক মাধ্যমে ছবি প্রকাশ ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কার্যক্রম দেখানোর চেষ্টা ছিল নেতাদের। দলের গ্রুপিং বলয়ের কার্যক্রম দেখাতে এসমব মিছিলের চেষ্টা হয়েছে পৃথকভাবে।

কর্মসূচী পালনে সফল না হওয়ার পিছনের কারণ হিসেবে বিএনপি নেতারা জানান, বেগম জিয়ার সিলেট আগমনের দিন মিথ্যা মামলা দিয়ে উভয় গ্রুপের ৪০ জন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। মামলার গ্রেফতার এড়াতে কর্মসূচিতে স্বতঃফুর্তভাবে অংশগ্রহন করতে পারছেন না নেতা কর্মীরা। তার ওপর রয়েছে পুলিশের বাঁধা।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং থাকতেই পারে তবে সবাই এখন আন্দোলনমুখী। কিন্তু পুলিশের ধরপাকড়ে অবস্থান করতে পারছে না কোন পক্ষই। তাই ঝটিকা মিছিল করতে হচ্ছে। আন্দোলন থামাতে শান্তিপূর্ণ জেলা বিএনপির নেতাদের উপর মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।

এদিকে দলের কঠিন ও কন্টকাকির্ন সময়ে গত কয়েকদিনের কেন্দ্র ঘোষিদ কর্মসূচীতে কর্মসূচি পালনে কমবেশি সব নেতাকে রাজপথে দেখা গেলেও দেখা মেলেনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ নাসের রহমানকে।

নেতারা মনে করেন , এই মুহুর্তে মাঠের কর্মসূচীতে নাসের রহমানের উপস্থিতি থাকলে নিজ বলয়ের নেতাকর্মীরা উজ্জিবিত হতেন।

(একে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test