E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শ্যামনগর থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধের ছয়দিন

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৮:২০:২৭
শ্যামনগর থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধের ছয়দিন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ছয়দিন ধরে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর থেকে দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন দেশের কোনো স্থানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে দেশের অন্য স্থান থেকে কোনো যাত্রীবাহি পরিবহন সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরেও আসতে দেওয়া হচ্ছে না।

আন্তঃজেলার যাত্রী ( লোকাল) দূরপাল্লার পরিবহনে নেওয়ার অজুহাতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। ফলে সুন্দরবনগামী পর্যটকসহ দূরপাল্লার যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই।

ইতিমধ্যে প্রতিকার চেয়ে শ্যামনগর দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন কাউন্টার সমিতির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, স্থানীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের জিএম শফিউল আযম লেনিন জানান, শ্যামনগর দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম উপজেলা। এ উপজেলায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসে সুন্দরবনে ভ্রমণে। আবার চিংড়ি আমাদানি-রপ্তানি ছাড়াও মধু চাষের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ এ উপজেলায় যাতায়াত করে। কিন্তু গত বুধবার থেকে শ্যামনগর থেকে কোনো দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন দেশের কোনো স্থানে যাচ্ছে না। আবার সাতক্ষীরা থেকে কোনো দূরপাল্লার শ্যামনগরে আসছে না। কিন্তু হঠাৎ করে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীরা যারপর নেই সমস্যায় পড়েছে।

শ্যামনগর দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন কাউন্টার সমিতির সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম জানান, শ্যামনগরে প্রতিদিন ২৩টি যাত্রীবাহি দূরপাল্লার পরিবহন যাতায়াত করে। এসব পরিবহনের ৫৪টি টিপে মানুষ ঢাকা, পাবনা, রাজশাহী, সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়ায় চলাচল করে থাকে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কালিগঞ্জ বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন মালিকদের বলা হয় ১৩ ফেব্র“য়ারি মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর সড়কের (ভায়া কালিগঞ্জ) চলাচলের অনুমতিপত্র তাদের কাছে জমা দিতে । নাহলে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর সড়কে দূলপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

মালিকরা অনুমতিপত্র না দেখানোয় ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে শ্যামনগর থেকে সাতক্ষীরাগামী ও সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরগামী সকল পরিবহনের যাত্রী কালিগঞ্জে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ফেরত পাঠানো হয়। তারপর থেকে সকল দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীদের সমস্যার পাশাপাশি দুই শতাধিক শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছে। এমনকি ঢাকা, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা শ্যামনগরে বা কালিগঞ্জে আসতে পারছে না।

একে ট্রভেসের মালিক তহমিন সায়েদ ও এসপি গোল্ডেন লাইনের মালিক জুনায়েত হোসেন লস্কর জানান, তাদের সাতক্ষীরা যাত্রীবাহি পরিবহন চলাচলের অনুমতি রয়েছে। অনুমতিপত্র আছে কি নেই তা দেখার দায়িত্ব বিআরটিএ এর। মালিক সমিতির নয়। তাছাড়া তাদের বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির চিঠি দিতেও পারেন না। ওই সড়কে গাড়ি চালাচলে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কে নেবে দায়িত্ব। ফলে সাতক্ষীরা-শ্যামনগর ও শ্যামনগর-সাতক্ষীরায় গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

কালিগঞ্জ বাস, মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, শ্যামনগর থেকে দূরপাল্লার গাড়িতে আন্তঃজেলা ( লোকাল যাত্রী) যাত্রী বহন করা হয়। ফলে তাদের আন্তঃজেলা বাসে যাত্রী কম হয়। তাদের পড়তে হয় লোকসানে । লোকাল যাত্রী না নেওয়ায় জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা যাত্রী নেওয়া বন্ধ না করায় দূলপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা বিআরটিএ এর সহকারী পরিচালক তানভীর হোসেন জানান, কালিগঞ্জ বাস, মালিক সমিতি কোনো অবস্থায় দূরপাল্লার যাত্রীবাহি পরিবহন বন্ধ করে দিতে পারেন না। কোনো সমস্যা থাকলে তাদের জানতে পারে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো: মহিউদ্দিন জানান, যাত্রীদের হয়রানি করতে কেউ পারবে না, কিম্বা গাড়ি বন্ধ রাখতে বাধ্য করা যাবে না। তিনি কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেবেন।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test