E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আদালত চত্ত্বরে মুক্তি পাওয়া আসামি জেলগেটে আটক 

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৬:৩৩:২৮
আদালত চত্ত্বরে মুক্তি পাওয়া আসামি জেলগেটে আটক 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আদালত চত্বর থেকে বিচারপ্রার্থী ও জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামিদের কারাফটক থেকে  আটক করা হচ্ছে। পরে তাদেরকে নতুন নাশকতার মামলা বা পুরাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। আবার অনেককেই মোটা অংকের টাকা দিয়ে মুক্তি পাচ্ছেন। এ ধরণের হয়রানি নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা মুখ না খোলায় বিচারপ্রার্থী, তাদের স্বজন, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কোন প্রকার অঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কালেক্টরেট চত্বরে বেশ কিছু পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। দুপুর ১২টা থেকে নতুন জুডিশিয়াল কোর্ট চত্ত্বর এলাকায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাদের সঙ্গে পুলিশের দালাল হিসেবে পরিচিত আশাশুনির কামালকাটি গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে এক সময়কার সক্রিয় জামায়াত কর্মী সাংবাদিক পরিচয়দানকারি শাজাহান গাজীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিল।

সাদা পোশাকে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আদালতের মধ্যেও ঘুরতে দেখা যায়। দালালরা মোবাইল ফোনে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন কোন বিচারপ্রার্থীকে ধরতে হবে, তাদের উচ্চতা, গায়ের রং ও পরনের পোশাক সম্পর্কে। দুপুর একটার পর থেকে বিকেল চারটার মধ্যে সদর থানার উপপরিদর্শক হারুন, উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান(১), উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমানসহ (২) কয়েকজন সহকারী উপপরিদর্শক ও সিপাহীকে বিচারপ্রার্থীদের আদালত ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তার দিকে কয়েক গজ না যেতেই কৌশলে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে মোটর সাইকেলে বসিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১২ সালের ৩১ মার্চ ও পহেলা এপ্রিল দেশের বহুল আলোচিত ফতেপুর ও চাকদহের সহিংসতার মামলার আসামী (জিআর-৮৫/১২ কালি) কালিগঞ্জের কৃষ্ণগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের জিয়াদ আলী কাগুচির ছেলে রওশান আলী কাগুচী(৪৮), একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মিয়ারাজ হোসেন (২৯), মোহাম্মদ আলী গাজীর ছেলে আইয়ুব হোসেন (৫৩), সদর উপজেলার চেলারডাঙা গ্রামের নাজের আলী সরদারের ছেলে সদর থানার জিআর-১৬০/১৩ নং মামলার আসামী হারুন সরদার (৩৮), দহকুলা গ্রামের কেরামতুল্লার ছেলে একই মামলার আসামী আবুল হোসেন (৪৫)সহ পুলিশের হাতে আটককৃত এমন বিচারপ্রার্থীর সংখ্যা ২০ এর অধিক বলে তারা জানান। প্রথমাক্ত তিনজনের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুর সাত্তার, হারুণ সরদারের আইনজীবী অ্যাড. জহুরুল ইসলাম ও আবুল হোসেনের আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু।

পুলিশ বিচারপ্রার্থী ভেবে কয়েকজন আইনজীবী সহকারিকেও সার্চ করার নামে হয়রানি করেছে।
আটক হওয়া বিচারপ্রার্থীদের আইনজীবী, আইনজীবী সহকারি ও স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে হারুন সরদার ও আবুল হোসেনকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সদর থানার ৫০ নং নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যেমে মোটা অংকের টাকা নিয়ে সোমবার ভোর চারটার দিকে রওশন, মিয়ারাজ ও আইয়ুবকে সদর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকী আটককৃতদের অনেককেই নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কয়েকজনকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে হাইকোর্ট, জজ কোর্ট বা বিচারিক হাকিম আদালত থেকে মুক্তি পাওয়া আসামীদের আটক করে সুবিধা নিয়ে মুক্তি দেওয়া, সুবিধা নেওয়ার পরও নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দেওয়া বা একাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে চালান দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন গড়ে ৯/১০ জন ধরা পড়ছে পুলিশের জালে। এসবের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিবি পুলিশ জড়িত বলে ভুক্তভোগী সদরের তুজুলপুরের ডিউক, কালিগঞ্জের ফতেপুরের মোমিন হুজুরসহ কয়েকজনের স্বজনা এ প্রদিবেদককে জানিয়েছেন। ফলে বিচারপ্রার্থীদের স্বজন ও তাদের আইনজীবীরা আসামীদের জামিন না করে কারাগারে রেখে দেওয়াটাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন।

তবে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে সমস্ত বিচারপ্রার্থীরা আদালত চত্বর বা জেলগেট থেকে আটক হচ্ছেন তাদের আইনজীবীদের অনেকেই বিএনপি পন্থী। তাই তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিরোধ বাঁধাতে চান না।

তারা আরো জানান, এ ধরণের হয়রানির ফলে সোমবার অনেকের দিন থাকলেও অনেকে হাজিরা না দিয়ে সময়ের আবেদন করেছেন। তাতে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিলেও কিছু করার নেই বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে আশাশুনির কামালকাটি গ্রামের শাজাহান গাজী কখনো জামায়ত কর্মী ছিলেন না উল্লেখ করে বলেন, পুলিশের সঙ্গে থেকে তাদের কাজে সহযোগিতা করলে ক্ষতি কি!

জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি জানান, আদালত চত্বর ও জেলগেট থেকে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা বিচারপ্রার্থী বা জামিনে মুক্তি পাওয়া লোকজনদের ধরে নিয়ে নতুন মামলায় চালান দেওয়া বা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে বার বার অবহিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রবিবারের ২০ জনেরও বেশি বিচারপ্রার্থীকে সদর থানার পুলিশ ধরেছে বলে কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে জেনেছেন।

আইনজীবী সহকারিদের হেনস্তা করার খবরও পেয়েছেন তিনি। এতে বিচারপ্রার্থী, তাদের আত্মীয়, আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারিদের উৎকণ্ঠা বেড়েছে। আটক হতে পারেন এমন আশঙ্কা থাকলে অনেককেই আদালতে না আসার জন্য তাদের আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি সভাপতিসহ সমিতির অন্যান্য সদসদের সঙ্গে পরামর্শ করে করণীয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।

তবে ইতিপূর্বে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আলী আহম্মেদ হাশেমী জেলগেট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামীদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

তবে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মারুফ আহম্মদের সরকারি মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

(আরকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test