E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নানা সংকটে খুলনা বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট 

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৮:৩৪:৫২
নানা সংকটে খুলনা বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট 

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার তুলাতলায় খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট এখন নানা সংকটে। পিছিয়ে পড়া গ্রামীন জনপদের নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০০০সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার দৈবঞ্জহাটী ইউনিয়নের তুলাতলা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট। সম্পূর্ণ আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটির ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে গত ১৪ বছর ধরে। ১৪টি পদের মধ্যে প্রশিক্ষক, হোস্টেল সুপার, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার মত গুরুত্বপূর্ণ পদও রয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সকল প্রক্রিয়া শেষে ২০০৫ সালে কৃষি, পশু পালন, পল্টি ও মৎস্য চাষ এ ৪টি ট্রেড নিয়ে প্রশিক্ষন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে তৎকালিন জোট সরকার প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

৫ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালে জুলাইতে মৌ চাষ বিষয়ে সাতক্ষিরার ২০জন উপজাতি নিয়ে প্রশিক্ষন কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন করে ২০১১ সাল থেকে কম্পিউটার, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলরিং প্রশিক্ষন শুরু হয়। প্রতিবছর ৪টি ব্যাচে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৬০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। যা এখনও চলমান।

প্রতিষ্ঠানের শুরুতে যে চারটি ট্রেড ও মৌচাষ কোনটিই বর্তমান চালু নাই। এসব ট্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্ত্বেও প্রশিক্ষন কার্যক্রম নাই। যে ৪টি ট্রেডে প্রশিক্ষন চালু আছে সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নাই। হোস্টেলে নিন্ম মানের খাবার, ল্যাবে কম্পিউটার, বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বিদ্যুৎতের সমস্যায় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না প্রশিক্ষণার্থীরা।

প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার প্রশিক্ষানার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কম্পিউটার শিখতে এসেছি। এখানে এসে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ত্রিশ জন প্রশিক্ষনার্থী, মাত্র ৬টি কম্পিউটারে প্রশিক্ষন গ্রহণ করি। এর মধ্যে দু-একটি কম্পিউটার প্রায়ই নষ্ট থাকে। যার কারণে আমরা পর্যাপ্ত ব্যবহারিক করতে পারি না।

জোসনা আক্তারসহ একাধিক প্রশিক্ষানার্থীরা বলেন, এখানে যারা আছেন তারা খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাদের প্রশিক্ষন দেয়। এখানে নিরাপত্তা জনিত কোন সমস্যা নাই। তবে হোস্টেলে খুবই নিম্ন মানের খাবার খাওয়ানো হয়। হোস্টেলে স্থায়ী কোন বাবুর্চি নাই। অস্থায়ী ভাবে নিয়োগকৃত যে আছে তাকে রান্নার কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে হয়। যে কারণে প্রশিক্ষনের ক্ষতি হয়। এছাড়াও খাবার পানির জন্য একটি পুকুর আছে, যা শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়। খাবার পনির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেণ শিক্ষার্থীরা।

প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক প্রশিক্ষন ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোখলেছুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রশিক্ষানার্থীদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিতে পারছি না। প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় যে উপকরণ ছিল এখনও সেই উপকরণে চলছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোন প্রশিক্ষন উপকরণ পাইনি। প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশু, হাস-মুরগি পালন ও মৎস্য চাষ প্রশিক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্তেও আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় অনেক পদই শুন্য রয়েছে এখানে। এ ধরণের একটা ইনস্টিটিউটে হোস্টেল সুপার নাই, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাসহ অনেক পদই শুন্য রয়েছে। যার কারণে মূল কাজ ব্যহত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর ৯০টাকায় একদিন খেতে হয় এটা কষ্টকর। ১৭ বছরের আগের বাজেট এখনও চলমান। ১৭ বছরের আগের বাজার দর আর এখনের বাজার দর এখন আকাশ পাতাল ব্যবধান। যার কারণে প্রশিক্ষনার্থীদের মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব সমস্যার মধ্যেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৮০০ জন নারী প্রশিক্ষন গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে অনেকেই নিজে প্রতিষ্ঠান করে কাজ করছে। আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলে সংকটের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সমস্য সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।

(এসএকে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test