E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিপাকে মোজাম্মেলের পরিবার

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৪:৪৮:৩০
পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিপাকে মোজাম্মেলের পরিবার

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচ প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে একটি পরিবার। চরম দুঃখ কষ্টে দিনাতিপাত করছে তারা। 

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৪ নং আটগাঁও ইউনিয়নের লোহাগাঁও গ্রাম। গ্রামের মৃত এমারউদ্দীনের ছেলে মোজাম্মেল হক ওরফে বুধু। আর বুধু’র পরিবারে ৫ প্রতিবন্ধী ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হক ওরফে বুধু ১৯৯৬ সালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বলরামপুর গ্রামে আবেদ আলীর মেয়ে বিউটি আরা খাতুনকে বিয়ে করে। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের ঘরে এক এক করে ৬টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। একমাত্র তৃতীয় ছেলে রিয়াদ (১৪) ছাড়া বাকী ৫টি ছেলে সন্তানই শারিরীক প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধীরা হলেন-সবচেয়ে বড় ছেলে বিপ্লব (১৮), মিরাজ ওরফে রাসেল (১৫), রাজু (৯), রিশাত (৭) ও জীবন (৪)। একই পরিবারের ৫টি সন্তান শারিরীক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নেওয়ায় গ্রামের কিছু কুসংস্কার মনের মানুষ ভালো চোখে দেখেনা তাদের। সমাজে তারা ভালভাবে খেলাধুলা ও মেলামেশাও এবং চলতে পারে না অনেকের সাথে। অধিকাংশই সময় বাড়ীতেই থেকে সময় কাটাতে হয় তাদের। প্রতিবন্ধী হওয়ায় পিতা মাতাকেই দেখা শুনা করতে হয় তাদের।

এদিকে সংসারের ৮ জন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে অসহায় পিতা মোজাম্মেল হক বুধুকে কাজ করতে হয় চায়ের দোকানে। প্রতিদিনি দিন হাজিরা ২’শত টাকা দিয়ে তার সংসার চালাতে হয়। মাত্র ২’শত টাকা দিয়ে ৮ জন মানুষকে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত দেয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে মোজাম্মেলের। চাষাবাদের জন্য বিঘে খানিক জমি বর্গা চুক্তি দিয়ে চাষও করেন তিনি । জীর্নশীর্ন একমাত্র কুড়ে ঘড়ে একত্রে স্বামী স্ত্রী ও ৬ সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন তারা।

একই পরিবারের ৫ জন প্রতিবন্ধী মানুষ থাকার পরও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিমূখ আচরণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার থেকে কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি তারা। অবশেষে বোচাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ফরহাদ হাসান চৌধুরী ইগলুর প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে মিরজা ওরফে রাসেল মাসিক ৫’শত টাকা ও ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে বিপ্লব মাসিক ৬’শত টাকা করে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে। যা থেকে কিছুটা হলেও অভাব লাঘব হয়েছে তাদের।

প্রতিবন্ধীদের মা বিউটি খাতুন জানান, একটি স্বাভাবিক সন্তান মানুষ করতেও খুব কষ্ট করতে হয় কিন্তুু পরপর ৫টি প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে যে কি অমানষিক কষ্ট-দুভোর্গ পোহাতে হয় তা কেউ অনুভব করেনা ! আমার প্রতিবন্ধী ৫ সন্তান যে কি শারিরীক যন্ত্রনায় ভুগেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের সাথে কেউ মিশতে চায় না। খেলাধুলা করেনা।

তিনি জানান, বাড়ীর বাইরে গেলে অন্যরা তাদের দেখে বিরূপ মন্তব্য করে। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও তাদেরকে বোঝা হিসেবে না নিয়ে অন্যান্য স্বাভাবিক সন্তানের মতই মানুষ করতে হচ্ছে তাদের। সমাজের কিছু মানুষের নানা রকম কটুউক্তি করে। সহ্য করেই শত দুঃখ কষ্টের মাঝে দিন পার করতে হচ্চে আমাদের ।

তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্ম নিলেও প্রতিটি সন্তানকেই মায়ের মমতা দিয়ে ভালসাসি আমি। তাদের লেখাপড়া জন্য ভর্তি করে দিয়েছি হাট মাধবপুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে। সপ্তাহে ৫দিন স্কুলের অটোতে করেই নিজেই ৫ সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাই ও নিয়ে আসি। তারা এখন স্কুলে যেতে পেরে খুব খুশি। স্কুলে খেলার সাথী ও শিক্ষকদের সাথে মিশতে পেরে তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। প্রতিদিন বাড়ীতেও পড়াতে বসাই তাদের।

বাবা-মা’র ইচ্ছা যতটুকু সম্ভব লেখাপাড়া করে তারা যেন সমাজের বোঝা না হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বি হতে পারে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা নয় সম্পদ হিসেবে দেখার কারণে এই পরিবারটির মনে আশা জেগেছে তাদের বাকি তিনটি সন্তানরই প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন।

লোহাগাঁও গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবক মিজানুর রশিদ জানান, বর্তমান সরকার যেভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এগিয়ে এসেছে, তাতে আমরা আশাবাদি এই পরিবারটির দীর্ঘদিনের অভাব অনটন দূর হবে। শুধু সরকার নয়, সমাজের বিত্তবান মানুষদের এদের পাশে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

৪ নং আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কফিল উদ্দীন জানান, আমরা এই অসহায় পরিবারটির পাশে আছি এবং থাকবো। এদের জন্য যা করার দকরার আমাদের পরিষদ তা করবে।

বোচাগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আহসান হাবিব জানান, একই পরিবারের ৫জন প্রতিবন্ধী একটি ব্যতিক্রম বিষয়। ইতিমধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তর বোচাগঞ্জ অফিস থেকে দুইজনের ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে বাকী তিন জনকেও ভাতার আওতায় আনা হবে।

‘মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনে জন্য এই উক্তিটি যদি কোন সুহৃদয়বান ব্যক্তি মন থেকে মনে করেন তাহলে সামজের অবেহেলিত এই অসহায় প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়াবেন এটাই কাম্য প্রতিবন্ধী পরিবার ও সচেতন মহলের।

(এসএএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test