E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মিরসরাইয়ে অজ্ঞাত রোগে দুই আদিবাসী শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৫  

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২৪ ১৭:১৮:২২
মিরসরাইয়ে অজ্ঞাত রোগে দুই আদিবাসী শিশুর মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৫  

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কমপক্ষে ৩৫ শিশু অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজলো সদর ইউনিয়নের মধ্যম তালবাড়িয়া আদিবাসী পাড়ার প্রায় প্রতিটি ঘরে এ রোগী দেখা দিয়েছে। ওই রোগী আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুলিরাং ত্রিপুরা (৪) গত রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জীবন ত্রিপুরা (৮) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

এদিকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার শিশুদের অনেক চেষ্টা করেও চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেন স্থানীয় স্বাস্থ্য সহকারি হোসনে আরা মীর। স্থানীয় আদিবাসীরা ওই রোগকে জলবসন্ত বললেও স্থানীয় সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাছিমা আক্তার এটিকে হাম রোগ বলে ধারনা করেন।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলা সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাজমা খানম, নাছিমা আক্তার, স্বাস্থ্য সহকারি কাজী সাইফুল ইসলাম, জিয়াউল হক খান, মাতৃকা হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ জামসেদ আলম আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে হামে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আক্রান্ত ১৪ জন আদিবাসী শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থানীয় স্বাস্থ্য সহকারি কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, রোগে আক্রান্ত আদিববাসী শিশুগুলোকে নিয়ে তাদের অভিভাবকরা কোন ভাবে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে রাজি নয়। এরপরও তাদের অনেক বুঝিয়ে ১৪জন শিশুকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ থেকে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে স্বপ্না ত্রিপুরা, যুতীকা ত্রিপুরা, হামিবাল ত্রিপুরা, নির্মল ত্রিপুরা, মুঝিরিং ত্রিপুরা, মনিবালা ত্রিপুরা, রিমলক্ষী ত্রিপুরা, মিলনমালা ত্রিপুরা, মালা ত্রিপুরা, পলি ত্রিপুরা, সুজন ত্রিপুরা, শিল্পী ত্রিপুরা, ঝিনুক ত্রিপুরা, সিমল কুমার ত্রিপুরাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

হামে মৃত্যু হওয়া দুলিরাং ত্রিপুরার মা সুস্মিতা ত্রিপুরা জানান, গত ১৫ দিন আগে তার মেয়ের প্রচন্ড জ্বর ও কাশি শুরু হয়। দুয়েক দিন পর থেকে গায়ে গুটিগুটি হয়ে ঘামাচির মতো দেখা দেয় এবং জ্বর বাড়ার সাথে সাথে বমি ও পাতলা পায়খানা হতে থাকে। এসময় দুলিরাংকে একজন পল্লী চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা করানো হয়। বুধবার সকালে তার অবস্থা বেশি খারাপ হতে থাকলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে সে মারা যায়। একই ভাবে জীবন ত্রিপুরাও মারা যায় বলে জানান তার ভাই লক্ষন ত্রিপুরা।

পাড়া সর্দার সুরেশ ত্রিপুরা জানান, বর্তমানে পাড়ায় প্রকাশ ত্রিপুরা (৮), সত্যবান ত্রিপুরা (১), সংগীতা ত্রিপুরা (৩), মানদরী ত্রিপুরা (৩), আখি ত্রিপুরা (৮), লক্ষণ ত্রিপুরা (৫), শাবানা ত্রিপুরা (৫), পলি ত্রিপুরা (৪),সুজন ত্রিপুরা (১০), মোছারাই ত্রিপুরা (১২), রানী ত্রিপুরা (১২), মনিবালা ত্রিপুরা (৬), মিলন মালা ত্রিপুরাসহ (৫) প্রায় ৩০-৩৫জন শিশু এ রোগী আক্রান্ত রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুদের সারা গায়ে ছোট ছোট ঘামাচির মতো হয়ে আছে। অনেকের ঠোঁট ও কানের কাছে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে গেছে। প্রত্যেক শিশুর গায়ে জ্বর ও কাশি রয়েছে। দুই তিনদিন পর জ্বর বাড়াতে থাকে এবং শিশুদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রোগে আক্রান্ত আখি’র মা নয়নবালা জানান, তার মেয়েকে স্থানীয় ডাক্তার থেকে হোমিও ওষুধ খাওয়াচেছন। সে এখন অনেকাট সুস্থ হয়ে উঠেছে।

স্বাস্থ্য সহকারী সাইফুল ইসলাম জানান, শিশুদের টিকা দিতে আদিবাসী অভিভাবকদের প্রচন্ড অনীহা রয়েছে। তারা অনেকটা জোর করে আদিবাসী শিশুদের টিকা প্রদান করেন। তবে বর্তমানে যারা জ্বরসহ রোগী আক্রান্ত তাদের অনেকেই কোন ধরনের টিকা অতীতে নেয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো.নুরুল আফছার জানান, আদিবাসী শিশুরা কোন ধরণের রোগে আক্রান্ত তা পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তারা শিশুদের রক্তসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

(জেজে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test