E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৮:৪০:২১
স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান

মাগুরা প্রতিনিধি : স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের পিতৃত্ত্বের দাবী নিয়ে শনিবার সকালে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছিলেন গৃহবধূ তন্নী খাতুন। তবে সেখানে তার ঠাই হয়নি। বরং শ্বশুর মনিরুজ্জামান মন্নু তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ১৫ দিনের কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির গেটে অবস্থান করছেন হতভাগা ওই  গৃহবধূ। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আমৃত্যু স্বামীর বাড়ির সামনেই অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ঘটনাটি  ঘটেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাড়ীখালী গ্রামে।

তন্নী খাতুন জানান, ২০১৭ সালে তিনি মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ক্লাস করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সৌদি প্রবাসী প্রতিবেশি চাচাতো ভাই এনামুল কবীর লিটনের সাথে তার দেখা হয়। এ সময় লিটন তাকে বলে পার্শ্ববর্তী ধোয়াইল গ্রামে বিয়ে দেওয়া তার বড় বোন রানী খাতুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। তার বাড়ি লোকেরা দ্রুত তাকে ফরিদপুর যেতে বলেছে।

এ অবস্থায় তিনি লিটনকে বড় ভাই হিসেবে বিশ্বাস করে তার মটর সাইকেলে ওঠেন। পরে ফরিদপুর নেওয়ার কথা বলে তিনি তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এর পর জোর করে তাকে ঢাকা নিয়ে একটি বাসায় আটকে রাখে। এ অবস্থায় একজন নারী হিসেবে তার সব শেষ হয়ে গেছে বলে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আট দিনের মাথায় কাজী অফিসে নিয়ে লিটন তাকে বিয়ে করে। কিছুদিন ঢাকার একটি বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী রুপে বসবাস করেন।

এক পর্যায়ে তিনি গর্ভবতী হলে স্বামী লিটন তার গর্ভের সন্তান নষ্ঠ করা জন্য চাপ দেয়। তবে তিনি এতে রাজি হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী লিটন তার উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন শুরু করেন। এরপর আমার মা অসুস্থ বলে ঢাকা থেকে বাড়ি আসার কথা বলে গত ৬ জানুয়ারি তাকে ঝিনাইদহের আরাপপুর বাস ষ্ট্যান্ডে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় ওই রাতে তিনি ঝিনাইদহের নানা বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাড়িখালী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে আসলে তারা সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়। তার পর থেকে তার স্বামী লিটনও বাড়ি থেকে গা ঠাকা দিয়েছে। অবশেষে তিনি বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যাক্তিরা শ্বশুর মনিরুজ্জামান মন্নুর সাথে একাধিকার সালিশ বৈঠক করলেও তিনি পুত্র বধূকে বাড়িতে ঠাই দেননি। এবস্থায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি তার একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। অবশেষে তিনি এ ঘটনার বিচার চেয়ে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেছেন। একই সাথে কন্যা সন্তানকে নিয়েই আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে তিনি স্বামীর বাড়িতে গেলে শ্বশুর মন্নু মিয়া তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দেন। এর পর থেকে সারাদিন তিনি ১৫ দিনের শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন।

স্বামী, সন্তানের স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আমৃত্যু তিনি সেখানেই অবস্থা করবেন বলে ঘোষনা দেন
তন্নীর বাবা আলাল বিশ্বাস বলেন, মেয়েকে ফেলে রেখে জামাই বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। তিনি মেয়েকে তুলে নেওয়ার জন্য তার শ্বশুর নান্নু মিয়াকে অনেক বার হাতে পায়ে ধরেছেন। কিন্ত তার পাষাণ হৃদয় গলেনি। মান সন্মানের দায়ে এক পর্যায়ে মেয়েকেসহ গোটা পরিবার বিষ খেয়ে মরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবেশিরা মরতে দেয়নি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চান।

স্থানীয় ইউপি মেম্বর খালেক মেম্বর বলেন, তন্নীর অভিযোগ সত্য। বিষয়টি মিমাংসার জন্য তিনিসহ গোটা গ্রামবাসী একাধিকবার শালিশ দরবার করেছেন। কিন্তু লিটনের বাবা মনিরুজ্জামান মন্নু কারো অনুরোধই রাখেননি। যে কারনে গোটা গ্রামবাসী তার উপর ক্ষুব্দ।এখন অসহায় মেয়েটি ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে রাস্তায় অবস্থান করছে।

অভিযুক্ত লিটনকে পাওয়া না যাওয়ায় তার বাবা মনিরুজ্জামান মন্নুর সাথে কথা বলতে তার গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বাড়ির গেট খোলেননি। মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলবে না বলে জানান।

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test