E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তি চরমে

২০১৪ জুলাই ০৭ ১৩:৫০:৩৭
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের ভোগান্তি চরমে

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : সরকারি ডাক্তাররা অর্থবাণিজ্যে ছোটেন ক্লিনিকে। দালালরাও রোগী টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় ক্লিনিকেই। এ অবস্থা রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে বেশির ভাগ সময়ে ওঁৎ পেতে বসে থাকা দালালেরা ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায় রোগীদের।

এদের মধ্যে হাসপাতালের ভিজিটর পারুল বেগম অন্যতম। হাসপাতালের বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী, পানির চরম সংকট, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এনিয়ে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ৮ বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্সটিও ছিড়িয়াখানার পাখির মতো একটি কক্ষে বন্দি।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মোজাম্মেল হক পদোন্নতি নিয়ে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন। যোগদানের পর থেকে তিনি বসেন উপশম জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালে। কর্মকর্তার দেখাদেখি অন্য ডাক্তারও বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চুক্তি বদ্ধ হয়ে অফিস করার রেওয়াজ শুরু করেন। তারা সকালে সরকারী হাসপাতালে উপস্থিতি খাতায় সাক্ষর করেই চলে যান প্রাইভেট হাসপাতালে।
রামগঞ্জ উপজেলায় ৪ লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালে ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে মেশিন ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে রোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি আর বহিরাগত দালাল চক্রের কার্যকলাপে রোগীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়ত ডাক্তার আর দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ডাক্তারদের চেম্বারে, এমনকি ওয়ার্ডগুলোতেও দালালদের আনাগোনা। ডাক্তারদের চেম্বার থেকে রোগীরা বের হতেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি শুরু করে দালালচক্র। তবে ডাক্তাররা সপ্তাহের রোববার ও বুধবার হাসপাতালে কিছু সময় বসেন। ওই দুই দিন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-পরামর্শ করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা ও স্যাম্পল ওষুধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী আক্ষেপ করে বলেন, এ হাসপাতালের গদ বাঁধা সাধারণ ট্যাবলেট ছাড়া আমাদের ভাগ্যে আর কিছু জোটে না। প্রায় ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে করে আনতে হয়। আবার পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো ডাক্তারদের পছন্দের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে থেকে করতে হয়। এতে ডাক্তারদের জন্য রয়েছে ক্ষেত্র বিশেষ ৪০% থেকে ৬০% পর্যন্ত কমিশন।
অ্যাম্বুলেন্সটি দীঘর্দিন নষ্ট থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি অবস্থায় ভাড়া করা গাড়িতে রামগঞ্জ থেকে প্রায় ৩০/৪০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিতে হয়। এতে অনেক রোগী অকালে মারা যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, হাসপাতালে থাকার অনুপযোগী হওয়ায় রোগীরা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়। সরকারী বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় জেনারেটর নিয়মিত চালানো সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হওয়ার পর মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বর্ধিত ভবনের সংযোগের কারণে এক্স-রে কক্ষটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই অত্যাধুনিক মেশিন থাকার সত্ত্বেও রোগীদের এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্ধিত ভবনটি চালু করতে বারবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
(এমআরএস/এএস/জুলাই ০৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test