E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিল্পবর্জ্য দূষণে হবিগঞ্জের সুতাং নদীতীরের মানুষের জীবনযাত্রা দূর্বিসহ 

২০১৮ মার্চ ১৪ ২৩:০০:২৭
শিল্পবর্জ্য দূষণে হবিগঞ্জের সুতাং নদীতীরের মানুষের জীবনযাত্রা দূর্বিসহ 

মঈন উদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জ : আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০১৮ উপলক্ষে হবিগঞ্জের সুতাং নদী পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জের একটি প্রতিনিধিদল। ওই সময় প্রতিনিধিদল নদীর অবস্থা পরিদর্শন এবং নদীতীরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। স্থানীয় ভুক্তভোগী মানুষ বাপা প্রতিনিধিদলের কাছে তাদের পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরেন। 

১৪ মার্চ পরিদর্শনকালে বাপা নেতৃবৃন্দ সুতাং নদীর করাব, রাজিউড়া, ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের নদীপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখেন। এসময় তারা শিল্পবর্জের কারণে নদীর বিপন্ন প্রত্যক্ষ করেন। নেতৃবৃন্দ দূষিত বর্জ্যে আক্রান্ত বিপন্ন মানুষের কথা শোনেন।

করাব ইউনিয়নের ফুলতলি গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ কৃষক আরব আলী ক্ষোভের সাথে জানান, কোম্পানী আসার কারণে তাদের জীবন-জীবিকা দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। একদিকে তীব্র দুর্গন্ধের মধ্যে বসবাস অন্য দিকে ফসল উৎপাদন কমে গেছে। দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাড়ির লোকজন। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানান অসুখবিসুখ দেখা দিচ্ছে। কৃষি কাজের জন্য সুতাং নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রাণ কোম্পানীর ছাড়া বর্জ্যে নদী মরেছে এখন মানুষও মরবে।

একই গ্রামের সুশান্ত পাল (২০) বলেন, সুতাং নদীর থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো জেলেরা। কালো কুচকুচে পানিতে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। শত শত জেলে বেকার হয়ে পড়েছে।

উচাইল গ্রামের কালজ মিয়া (২৫) জানান, সকাল,সন্ধ্যা এবং রাতে গন্ধ বেশি হয়। নদীর বিষাক্ত পানিতে নেমে হাঁস, মোরগ, গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। এলাকার মানুষের শরীর চুলকানি রোগ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে।

পুটিয়া গ্রামের হাবিব মিয়া (৪০) বলেন, সুতাং নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারণে এখন আর মাছ পাই না। আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। একই গ্রামের মোছাঃ আঞ্জুমানা বেগম (৩৫), মোছাঃ জমিলা খাতুন (৫০) এবং রিজিয়া খাতুন (৫৫) বলেন, আমাদের গরীবদের কথা কেউ শুনে না। বাতাসে দুর্গন্ধ। আমাদের আশপাশের গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না।

প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বাপার জেলা সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জের সদর ও মাধবপুর উপজেলায় কৃষিজমির উপর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কলকারখানা। এসব কলকারখানার দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশের খাল ও নদীতে ফেলার ফলে ভয়াবহ শিল্পদূষণ হচ্ছে। এতে করে মানুষ শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ জটিল রোগে ভুগছে। অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

ইতিমধ্যেই জেলার অন্যতম সুতাং নদী দূষণের মাত্রা ছাড়িয়েছে, পানি কালো ও দুর্গন্ধময় হয়েছে। নদীতে আর মাছ পাওয়া যায় না, নদীর পানি ব্যবহারকারীরা পানি সংকটে ভুগছেন। কারখানার অপরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে সুতাং নদী তীরের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন ঐসব গ্রামের মানুষ। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বিধ্বংসী ও ক্রমাগত দূষণের বিরুদ্ধে ঐ এলাকার গ্রামগুলোতে চরম পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।

কারখানা থেকে বিষাক্ত বর্জ্য সুতাং নদীসহ খাল-জলাশয়ে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও কৃষি জমি, অন্যদিকে জনস্বাস্থ্যে ও জীববৈচিত্র্যের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। তাই পরিবেশ সচেতন মানুষ দূষিতবর্জ্য নিষ্কাশন রোধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সুতাং নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বাপার প্রতিনিধিদলে ছিলেন বাপা হবিগঞ্জের নির্বাহী সদস্য ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ, সমাজসেবক প্রকৌশলী এম এ মুমিন চৌধুরী বুলবুল, পরিবেশকর্মী ওসমান গণি রুমি, সাইফুল ইসলাম ও

(এম/এসপি/মার্চ ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test