E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছিল’

২০১৮ মার্চ ২৯ ১৮:১২:২৩
‘পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছিল’

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি বলেছেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা টিকে আছি। যতদিন চন্দ্র, সূর্য, তারা রবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম চির স্বাক্ষর হয়ে থাকবে। বাংলাদেশর স্বাধীনতার ইতিহাস অক্ষুন্ন হয়ে থাকবে।’ 

বৃহস্পতিবার পাবনা ও ঈশ্বরদীর মধ্যবর্তী স্থান পাবনা জেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানে বটতলায় পাকিস্তানের সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ভূমিমন্ত্রী শরীফ বলেন, মাধপুরের বটতলায় শহীদের পবিত্র রক্তে ভেজা মাটি পাবনা জেলার অহংকার। রাজু, রাজ্জাকের পবিত্র রক্ত এ মাটিতে মিশে আছে। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করতে এসে মাধপুরের বটতলায় পাকিস্তানি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় ১৭ জন সহযোদ্ধাকে হারাই। সেইসাথে মাধপুর বটতলায় আরও ৫০ জন সাধারণ নিরীহ বাঙালি প্রাণ হারায়।

ভূমিমন্ত্রী আরও বলেন, ৭১ এর জনযুদ্ধ ছিল বিশ্ব ইতিহাসের একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ বিপ্লবের সূচনা হয়। ২৯শে মার্চ ১৯৭১ সালর স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণ সরাসরি শুনে পাবনা ফিরে সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেশীয় ৪২টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলি।

উল্লেখ্য, ২৮শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাবনা পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত ও হতাহত পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে তাদের ১৩টি ট্রাকের বহর পাবনা থেকে রাজশাহীর দিকে ফিরছে। এই সংবাদ পেয়ে ডিলু বাহিনীর দলটি তাৎক্ষণিক পাকিস্তানি সেনাবহরটিকে প্রতিরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৪২টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও সাধারণ নির্মিত হাতবোমাসহ পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মাধপুর নামক স্থানের বটতলায় প্রতিরোধের জন্য বাঙ্কার করে অবস্থান নেয়।

তৎকালীন ঈশ্বরদী কলেজের ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান রাজু, আবদুর রাজ্জাক, ওহিদুর রহমান, আবদুল গফুর, আলী আহম্মেদ, নবাব আলীসহ ১৭ জন সহযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গোলায় নিহত হয়। পাকিস্তানি সেনাবহরের আনুমানিক তিন চারজন সৈন্যকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি, বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

পরবর্তীতে রাজশাহী ফিরার পূর্বেই নানা স্থানের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ বাহিনীদের আক্রমণে পুরো সেনাবহরটি বিধ্বস্ত ও নিহত হয়। মাধপুর দিবসের এই সভায় শহীদ সহযোদ্ধাদের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মন্ত্রী। ভূমিমন্ত্রী বলেন, ১৭জন সহযোদ্ধাসহ ৭০ জন মানুষের শহীদ হওয়ার দিনটি ছিল আমাদের কাছে এখন স্বপ্নের মতো।

এর আগে মন্ত্রী মাধপুরে বটগাছতলায় স্মৃতিস্তম্ভে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ মার্চ মাধপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পাবনা সদর এম.পি. গোলাম ফারুক প্রিন্স, পুলিশ সুপার জিহাদুল কবীর পিপিএম, পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, পাবনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন, পাবনা সদর উপজেলা প্রকৌশলী ওয়ালিউর রহমান, পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা এমএ বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক, মুক্তিযোদ্ধা চান্না মন্ডল, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হবিবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(এসকেকে/এসপি/মার্চ ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test