E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চলছে আরেকটির নির্মাণ কাজ 

রানীশংকৈলে বিদ্যালয় ঘেঁষে চলছে ইটভাটা

২০১৮ মার্চ ৩১ ১৬:৩০:১২
রানীশংকৈলে বিদ্যালয় ঘেঁষে চলছে ইটভাটা

রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : আইন লঙ্ঘন করে ঠাকুরগায়ের রানীশংকৈল উপজেলার ৫নং বাচোর ইউনিয়নের পূর্ব কালুগাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেষে ইতিপূর্বে একটি ইট ভাটা চলছে। বিদ্যালয় ভবনের ডান দিকে আরেকটি নতুন ইট ভাটা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।এতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হওয়ার আশস্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন,২০১৩-এর ৮ নম্বর ধারার ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে কোন ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি এই উপধারা লঙ্ঘন করে ইটভাটা স্থাপন করেন,তাহলে তিনি অনধিক ১ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ১লাখ টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।

এলাকার একাধিক বাসিন্দা সুত্রে জানা গেছে, পূর্ব কালুগাও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেষে কৃষি জমিতে যৌথ মালিকানায় ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।এ ভাটাটির মালিক পাইলট স্কুলের শিক্ষক ফারুক হোসেন ও আরভি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল জব্বা ভাটাটির নামকরন দেওয়া হয়েছে এম এস এস।

অন্যদিকে বিদ্যালয় ভবনের ডান(উত্তরে) দিকে কৃষি জমির মাঠ এলাকায় যৌথ মালিকানায় নতুন ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে আরেকটি নতুন ইটভাটা।

বিদ্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয় বর্তমানে মোট ১১৭জন শিশু শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করছে । শিক্ষক আছেন ৪ জন।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়ের ভবন ঘেষে চলছে ভাটার কার্যক্রম। এখানে ভাটার শ্রমিকরা কেউ করছে কাচা ইট তৈরী কাজ। কেউ বা করছে ইট বানানোর মাটি সংরক্ষনের কাজ। কেউ আবার ভাটার আগুন জ্বালানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের একশত গজের পশ্চিমে স্থাপন করা হয়েছে ইট পড়ানো চিমনি। ইট তৈরীর পর তা শুকাতে চিমনির চারদিকে থরে থরে সাজানো হয়েছে কাচা ইট। আর শিশুরা ভাটা থেকে এবং রাস্তা দিয়ে ভাটার গাড়ী চলাচলের সময় বিদ্যালয় ভবনের ধুলোবালু ঝাড় দিয়ে পরিস্কার করছে।

এ ব্যাপাওে জানতে চাইলে ভাটা মালিক শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান,বিদ্যালয়ের পাশে এমন আরো অনেক ভাটা রয়েছে তাদের কিছু হয় না আমার কি হবে?

অন্যদিকে বিদ্যালয় ভবনের ডান দিকে(উত্তরে) একশত গজের মধ্যে আরেকটি নতুন ভাটা স্থাপনের কাজ চলছে সেখানে মিস্ত্রিরা ভাটার চিমনি বানানোর কাজ করছে। পাশেই আবার কিছু শ্রমিক ইট বানানোর জন্য মাটি কেটে ভ্যান যোগে চিমনির আরেক পাশে এক জাযগায় মাটি স্তুপ করছে। আশে পাশে গম ভুট্টা ফসলগুলো বাতাসে শেষ বারের মত দোলা দিচ্ছে।

এ ভাটাটি করছেন উপজেলার ৩নং হোসেনগাও ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যাবসায়ী মতিউর রহমান ও আব্দুল লতিফ। ভাটার কাজ চলমান বিধায় এখনও ভাটার নামকরন করা হয় নি। এ ব্যপারে জানতে ভাটা মালিক অংশীদার আব্দুল লতিফের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

একাধিক শিক্ষার্থী বলে,স্কুল ঘরের পাশেই সব সময় ইট কাটার মেশিন চলে। মেশিনের শব্দে পড়ায় মন বসে না। একটু বাতাস উঠলেই ধুলাবালু উড়ে এসে চোখে-মুখে পড়ে। ভাটায় আগুন দেওয়ার পর চিমনির কালি,কালো ধোয়া ও ইট পোড়ানোর গন্ধে স্কুলে টেকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামিন আরা বলেন,বিদ্যালয় ঘেষে ইট ভাটা চললে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হবেই, এটা জেনেও আমরা ভাটার বিপক্ষে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অন্যদিকে আরেকটি নতুন ভাটা স্থাপন হলে পড়ালেখায় অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ব কালুগাও গ্রামের এক যুবক বলেন, চলমান ভাটাটি বন্ধ ছিলো হঠাৎ করে এ বছরে আবার চালু করা হলো। ইট ভাটার মালিকরা অর্থ আর ক্ষমতায় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ভাটা নির্মাণের বিপক্ষে কোন ধরনের প্রতিবাদ করতে পারছি না। বিদ্যালয় ও কৃষি জমির আশ পাশ জুড়ে কাছাকাছি যদি একের পর এক ভাটা নির্মান হয় তাহলে পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অসুখে পড়ার ভয় থাকে এবং এই এলাকায় এক সময় কৃষি আবাদেই আর হবে না। আমাদের ফসলি জুমিগুলো সব নষ্ট হয়ে যাবে বলে তিনি আশংকা করেন।

রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল্লাহেল মাফি বলেন, ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়া ও ধুলাবালুর কারনে শিশুরা হাপানি,সর্দি-কাশি নিউমোনিয়া,অ্যাজমা ও অ্যালার্জি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ভাটার পাশের বিদ্যালয়ের শিশুরা সব সময় ঝুকিতে থাকবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয দেবনাথ নতুন ভাটা নির্মানে কৃষি অফিসে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়নি জানিয়ে বলেন, এভাবে কৃষি জমি জুড়ে ইটভাটা গড়ে তোলা হলে ব্যাপকহারে কৃষি জমি কমে যাবে। ফসলের উৎপাদন কমে যাবে। তারপরও এমনিতেই ভাটার ধোয়া ফসলের জন্য ব্যাধি।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুরের উপ-পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেষে ইটভাটা নির্মাণ করা যাবে না। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন হলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

(কেএএস/এসপি/মার্চ ৩১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test