E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শরীয়তপুরে বর্ষার আগে পদ্মার ডান তীরে বেরিবাঁধ নির্মানের দাবি 

২০১৮ এপ্রিল ০৪ ১৭:৫৩:৩৫
শরীয়তপুরে বর্ষার আগে পদ্মার ডান তীরে বেরিবাঁধ নির্মানের দাবি 

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পদ্মা নদীর অব্যাবহ ভাঙ্গন রোধে পদ্মার দক্ষিণ তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মান করার দাবিতে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে সর্বস্তরের এলাকাবাসী। এতে বুধবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত নড়িয়া থেকে সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। নড়িয়া পৌর এলাকায় সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। নড়িয়া পৌর এলাকায় অবস্থিত সকল সরকারি ও আধা সরকারি দপ্তর সহ ব্যাংক বীমার অফিসগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

বেরি বাঁধ বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহরে মধ্যে বাধ নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে, আমরণ অনশন, স্বেচ্ছায় কারাবরণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন তারা। অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রক্রিয়াগত কারনে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে বাধ নির্মানের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সনের জুন মাস থেকে অব্যাহতভাবে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর থেকে নড়িয়ার চন্ডিপুর পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ভাঙ্গন কবলিত হয়ে পরেছে পদ্মার দক্ষিন তীর। এতে ইতিমধ্যে দুই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের অন্তত ৪ হাজার পরিবারের বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ২০ টিরও অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্তত ১০ হাজার একর জমি, ১৫টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তিনটি হাট-বাজার, কাঁচা-পাকা ২৫ কিলোমিটার সড়ক, ১০ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইনসহ অসংখ্য স্থাপনা গ্রাস করেনেয় সর্বনাশা পদ্মা নদী।

নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা অনুধাবন করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চলমান আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের প্রথম একনেক বৈঠকে গত ২ জানুয়ারি পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো বেরি বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু না করায় আসন্ন বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে উৎকন্ঠিত হয়ে পরছে এলাকাবাসী। তারা ইতমধ্যে কয়েক দফায় নড়িয়া উপজেলা সদর, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকরে কার্যালয় চত্বর, ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ন স্থানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, গণ অনশন পালন ও স্মারকলিপি প্রদান করে আসছিলেন।

কোন কমূসূচিতেই কাজ না হওয়ায়, বুধবার সকাল থেকে গণ বিক্ষোভ ও অবরোধের ডাক দেন নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভাঙ্গন কবলিত এলাকার আতংকিত হাজার হাজার নারী-পুরুষ। এতে অংশগ্রহন করেন সকল শ্রেনি পেশার লোক ও শিক্ষার্থীরা। কাকডাকা ভোর থেকেই নড়িয়া-শরীয়তপুর , নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া-জাজিরা-ঢাকা সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। নড়িয়া বাজার, মুলফৎগঞ্জ বাজার, চাকধ বাজারসহ কয়েটি বাজারের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি দপ্তরগুলোতেও অচলাবস্থা নেমে আসে। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবে দুপুর ১টার সময় অবরোধ তুলে নেন আয়োজকরা।

পদ্মার ডান তীরে বেরিবাঁধ বাস্তায়ন সমন্বয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, শত বছর ধরেই পদ্মার ভাঙ্গা গড়া মোকাবেলা করে টিকে আছে এই জনপদের মানুষ। কিন্তু গত দুই বছরে শতাব্দীর ভয়াবহতম ভাঙ্গনে দুইটি উপজেলার অন্তত ৫টি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের হাজার হাজার পরিবার আমাদের সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথের ভিখেরি বনে গেছি। এখনো আমরা শত শত পরিবার ঠিকমত মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনি। আমাদের দাবির প্রেক্ষিত মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী বেরি বাঁধ নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছেন। চার মাস পার হলেও কবে নাগাদ কাজ শুরু করা হবে তা আমরা এখনো জানতে পািনরি। পানি উন্নয় বোর্ড থেকে সন্তোষজনক কোন আশ্বাস না মেলায় আমাদের একের পর এক আন্দোলন করতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হতে আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই, আগামী বর্ষার আগে যদি বেরী বাধ নির্মানের প্রক্রিয়া শুরু করা না হয়, তাহলে আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা পদ্মা পাড়ের মানুষেরা আমরণ অনশণ ও স্বেচ্ছায় কারা বরণের মত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কোন টেন্ডার কল করা হবেনা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) এর মাধ্যমে কাজ করা হবে। আর এ কাজটি করার জন্য বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী পরিচালিত খুলনা শীপ ইয়ার্ড লিমিটেডএর মাধ্যমে কাজটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রনালয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সে মোতাবেক প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছি। আর এ কাজের জন্য কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের অনুমোদন নিতে আরো অন্তত ৬ মাস সময় লাগতে পারে। তাই, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শুরু করা সম্ভব হবেনা।

(কেএসআই/এসপি/এপ্রিল ০৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test