E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যদি একটি সেতু থাকতো....!

২০১৮ এপ্রিল ০৫ ১৬:১৩:৩০
যদি একটি সেতু থাকতো....!

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : দ্যাহেন না কত্ত লম্বা হাক্কা (বাঁশের সাঁকে)। এই দিয়া যাইতে হয় আমাগো স্কুলে। রোজ কেউ না কেউ পইড়্যা যায় খালে। কয়বার যে বইখাতা পইড়্যা গ্যাছে হ্যার (তার) হিসাব নাই। খালি আমরা না, অনেক বড় মাইনষেও (মানুষ) খালে পড়ে। ইস ! এইহানে যদি একটা সেতু থাকতো। এ কথাগুলো তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. মিরাজের (৯)।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার ও ডালবুগজ্ঞ এবং মহীপুর ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত খাপড়াভাঙ্গা নদীর শাখা খালের এই বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো এখন শতশত শিক্ষার্থী ও ২০ সহস্রাধিক মানুষের দুর্ভোগ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এই সাঁকোর দুই পাড়ে রয়েছে নয়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তারিকাটা দাখিল মাদ্রসা, মিশ্রিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজ। এই শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই পথেই চলাচল করতে হয়। এছাড়া তারিকাটা, নয়াকাটা, নয়াকাটাদিওর, বেীলতলী, বেীলতলীপাড়া, মুসলিমপাড়া, বেতকাটা, বেতকাটা পাড়া, সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া,
কাজিকান্দা, সুরডগি, বরকুতিয়া, খাপড়াভাঙ্গা,মনসাতলী, খোচাউপাড়াসহ ১৫ গ্রামের মানুষকে পার হতে হয় এ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে। ফলে এসব গ্রামের স্কুল ,মাদ্রাসা ও কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের
বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে চরম ঝুঁকি নিয়ে।

জানা যায়, ২০০৫ সালে গ্রামবাসীদের উদ্যেগে বিকল্প সড়ক হিসেবে তারিকাটা পয়েন্টে বাঁশের সাঁকো নির্মান করা হয়। নির্মানের কয়েক বছরের মধ্যে বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর সাঁকো মেরামত করা হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেতুটি সংস্কারের জন্য তিন টন চাল বরাদ্দ দিলে সেতুটি আবার মেরামত করা হয়। কিন্তু গত চার বছরে সেতুর বাঁশ পঁচে নষ্ট হয়ে গেলেও আর সংস্কার হয়নি। এ কারণে সেতুটি দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তারিকাটা দাখিল মাদ্রসার ছাত্র মো. ইসমাইল জানায়, আমিতো তিনবার পইড়্যা গেছি এই সাঁকো দিয়া।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র নিজাম হোসেন জানায়, গতবার আমার স্কুল ব্যাগ খালে পইড়্যা যাওয়ায় আমি আর বই পাই নাই।

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মিমি জানায়, আগে তো আব্বার কোলে কইড়্যা স্কুলে যাইতাম। এ্যাহন এ্যাকলাই যাই। গত ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমার এডমিটকার্ড পইড়্যা গ্যাছে। পড়ে স্যারেরা আমারে আরেকটা
কার্ড দিচ্ছে। কলেজ ছাত্র আশরাফ হোসেন জানায়, সব জায়গায় রাস্তা হয়। ব্রিজ হয়। আর আমাদের জন্য এখানে একটা সেতু হয় না। এখানে সেতুটি হলে কতো মানুষ যে উপকার পেতো।

তারিকাটা গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্কুলের পোলাপান (শিক্ষার্থী) ছাড়াও বয়স্করা,গর্ভবতী মায়েরা এটার (সাঁকো) উপর দিয়ে যেতে বিপদে পড়ে। গত কয়েক বছরে অন্তত অর্ধশত মানুষ সাঁকোর উপর দিয়ে পড়ে আহত হয়েছে। খুইয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্র।

স্থানীয়রা একাধিক গ্রামবাসীর দাবি জরুরী ভিত্তিতে এই বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক। এতে অন্তত ২০ সহস্রাধিক মানুষ দূর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু তিন ইউনিয়নের মানুষ এখান দিয়ে চলাচল করলেও কোন জনপ্রতিনিধিই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাই তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

(এমকেআর/এসপি/এপ্রিল ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test