E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫৫ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক!

২০১৮ এপ্রিল ০৮ ১৫:২৯:৫২
১৫৫ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক!

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : হাজিরা খাতায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৫ জন হলেও ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ১২২ জন। এই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক উপস্থিত একজন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের (৭ এপ্রিল) এ চিত্র। এই একজন শিক্ষক দিয়ে এ বছরের শুর থেকেই পাঠদান চলছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের ছয়টি পদ থাকলেও চারজন শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন গত এক বছর ধরে সাময়িক বরখাস্ত। সহকারি শিক্ষক আরিফুর রহমানও মামলা জনিত কারণে গত চার মাস ধরে সাময়িক বরখাস্ত। অপর সহকারি শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম জানুয়ারি মাস থেকে প্রশিক্ষণে পিটিআইতে। তাই গোটা স্কুলের দায়িত্বে এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম।

স্কুলে শিক্ষার্থীদের বই বিতরণ থেকে শুরু করে ক্লাস নেওয়া, বিস্কুট বিতরণ সবই করতে হচ্ছে একজন শিক্ষককে। সেই সাথে শিক্ষা অফিসের মাসিক সভা ও বিভিন্ন সরকারি ও জাতীয় অনুষ্ঠানেও তাঁকে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এ কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের লেকাপড়া বন্ধের পথে। শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও একজন শিক্ষকের পক্ষে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় শুথুমাত্র শিক্ষার্থীরা হাজিরা কল করেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে তাঁর।

শনিবার বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিকে ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ১৭ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ২৮ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ২০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৬ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।

বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষায়, ‘আমরা তো হেই খাল, কাঁদা ভাইঙ্গা স্কুলে আই। কিন্তু একজন স্যার আমাগো রোল ডাইক্কাই পড়া দিয়া দেয়। এইভাবেই আমাগো ক্লাস হয় শুরু থেইক্কা (বছরের প্রথম দিন থেকে)। স্কুলে স্যার না থাকায় একজন স্যারে আর কি করবে।’

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া জানায়, চরপাড়া দিয়া খেয়া পার হইয়া রোজ স্কুলে আ্ই। কিন্তু ভালো করে ক্লাস হয় না। কোনদিনও সব বিষয় পড়ানো হয় না। রোল ডাকে, আর বাসার পড়া দেয়। ক্লাসে বোঝানোও হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীরা নতুন বছর স্কুলে ভর্তি হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত অ আ ক খ ও শিখতে পারেণি অধিকাংশ শিশু। এ কারণে এ স্কুলে সন্তান ভর্তি করে বিপাকে পড়েছে অনেক অভিভাবক।

স্থানীয় মো. রমজান হোসেন জানান, এই গ্রামে একটাই স্কুল। কিন্তু শিক্ষক নাই। তাহলে আমাদের সন্তানদের কি হবে। সকাল হলেই বই-খাতা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শিশুরা স্কুলে আসে। কিন্তু তারা কিছুই শিখতে পারছে না। এভাবে কি একজন শিক্ষক দিয়ে একটা স্কুল চলতে পারে। তার মতো এ প্রশ্ন রসুলপুর গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের।

একাধিক অভিভাবক ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলেন, এভাবে আর বেশিদিন চললে তারা তাঁদের সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে ভর্তি করবেন। বছরের তিন মাস শেষে চার মাসে পড়লো। এখনও অনেক শিক্ষার্থী পাঠ্য বইয়ের প্রথম-দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ করতে পারেনি। তাহলে তারা পরীক্ষা দিবে কিভাবে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম বলেন, তিনি একা আর কি করবেন। তারপরও চেষ্টা করছেন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নিতে। এ বছর জানুয়ারি থেকে তিনি একদিনও সরকারি ছুটিও নিতে পারেণ নি শুধু একার ওপর গোটা স্কুলের দায়িত্বের কারণে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া, বিস্কুট বিতরণ, হোমওয়ার্ক দেয়া ও নেওয়া ছাড়াও সরকারি ও জাতীয় দিবসও তাঁকে একাই পালন করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন মোল্লা জানান, দুইজন শিক্ষক বরখাস্ত থাকায় শিক্ষক সংকটের কথা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক পদায়ন হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে বলে জানান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনি লাল সিকদার বলেন, তিনি এ বিষয়টি অবগত আছেন। তবে অগামী দু’একদিনের মধ্যে ডেপুটেশনে শিক্ষক দিয়ে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

(এমকেআর/এসপি/এপ্রিল ০৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test