E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘অনুমোদনহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা’

২০১৮ এপ্রিল ২০ ১৮:৪২:৩৫
‘অনুমোদনহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা’

জোটন চন্দ্র ঘোষ : হালুয়াঘাটে অনুমোদনহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরোধে শিঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন। নিয়মনীতি ব্যাতীত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই যে সমস্ত ব্যবসায়ী গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে শিঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিয়মনীতি ব্যাতীত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই হালুয়াঘাটের পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক মুদি দোকান, প্লাষ্টিক সামগ্রীর দোকান, ফার্নিচারের দোকান, ফোন-ফ্যাক্সের দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান, এমনকি ঔষধের দোকানেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে তরলকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস।

জানা যায়, উপজেলার অধিকাংশ এসব দোকানীর এলপি গ্যাস বিক্রির অনুমোদন নেই। আইন কানুন না মেনেই ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির ব্যবসা চলছে অহরহ। এসব দোকানে নেই আগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে জানা নেই প্রতিকারের ব্যবস্থা। ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্যবসার কারণে দুর্ঘটনার আসংখ্যা রয়েছে উপজেলার সর্বত্রই। অধিকাংশ দোকানীর নেই পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির ট্রেড লাইসেন্সটিও। মুদি দোকান, প্লাষ্টিক সামগ্রীর দোকান, ফার্নিচারের দোকান, ফোন-ফ্যাক্সের দোকান, হার্ডওয়ারের দোকান, এমনকি ঔষধের দোকানের নামে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পৌরশহর সহ প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে অবাদে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। নজরধারি নেই স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের।

সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণ রুমের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক অধিদপ্তর কর্তৃক বিস্ফোরক লাইসেন্স এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নিতে হয় কিন্ত অধিকাংশের নেই প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি। তথাপি চলচ্ছে বানিজ্য। সাধারণত ঠান্ডা জায়গায় সিলিন্ডার গ্যাস রাখতে হয়। কিন্তু উপজেলার পৌরশহরের ব্যস্ততম সড়ক হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে নিজেদের দোকানের সন্মুখে প্রচন্ড রুদ্ধেও সিলিন্ডার গ্যাস রেখে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি কাচারী রোডের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে শহরের প্রাণ কেন্দ্রের রাস্তায় প্রচন্ড রুদ্ধেও সিলিন্ডার গ্যাস রেখে বিক্রি করছেন দোকানী। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা। মেয়াদ উত্তির্ণ স্টীকার কিংবা কোন প্রকারের লিখিত কোন বিষয় নেই যে সিলিন্ডার গ্যাসটির মেয়াদ কতদিন পর্যন্ত রয়েছে। ফলে দিনদিন ঝুকি বাড়ছে জনসাধারনের।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, অদ্যবদী পর্যন্ত পৌরসভা থেকে কোন গ্যাস বিক্রেতা ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন নি। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ষ্টাশন সূত্রে জানা যায়, অত্র উপজেলায় একজন গ্যাস ব্যবসায়ী গ্যাস বিক্রির লাইসেন্স নিয়েছেন।

আইন অনুযায়ী যেকোনো ব্যবসায়ী নুন্যতম দুই বছর এবং অনধিক পাঁচ বছরের জেল এবং অনধিক ৫০ হাজার টাকায় দন্ডের বিধান রয়েছে। তবে অধিকাংশ দোকানীর এলপি গ্যাস বিক্রির অনুমোদন নেই। এতে করে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে। তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়া এসব দোকানে বিভিন্ন সাইজের এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য তালিকাও নেই। দোকানীদের অনেকেই জানেন না এলপি গ্যাস ব্যবহারের নিয়ম কানুন । বাসা-বাড়িসহ হোটেল ,চায়ের দোকানে দিন দিন জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। এই চাহিদাকে সামনে রেখে সস্তায় নিম্নমানের রেগুলেটর, গ্যাস সরবরাহ পাইপ ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন কোম্পানির ঝুঁকিপূর্ণ চুলা বিক্রির হিড়িক পড়েছে উপজেলার সর্বত্র।

সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা নাম মাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে যথাযথ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন না নিয়েই যেখানে সেখানে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা শুরু করেছেন। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এসব দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসবোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। অবৈধভাবে সিলিন্ডার গ্যাস ও নিম্নমানের রেগুলেটর, গ্যাস সরবরাহ পাইপ ও অনুমোদনহীন বিভিন্ন কোম্পানির ঝুঁকিপূর্ণ চুলা বিক্রির হিড়িকের কারণে বাসা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ঘটছে প্রায় দুর্ঘটনা।

খুচরা এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশির ভাগই আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে অবগত। তারপরও তদারকির অভাবে ঝূঁকি জেনেও তারা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইসেন্সপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এবং বিভিন্ন কোম্পানির ডিলারদের বিপণন কৌশলে প্ররোচিত হয়ে তার এই ঝুকিপূর্ণ্য ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ৮৮০ টাকা থেকে ৮৯০ টাকায় সিলিন্ডার ক্রয় করে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানীরা। প্রতিদিন মেসার্স শাওলী এন্টারপ্রাইজের একটি মিনিপিকাপ তাদের নিকট মেয়াদ উত্তিণের্র স্টীকারহীন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেন। বিক্রেতা কোম্পানী মেয়াদ উত্তিণের্র স্টীকার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেনা বিদায় বিষয়টি অবগত নন। কোন সিলিন্ডারে মেয়াদ উত্তিণের্র স্টীকার কিংবা লিখা নেই বলে জানান।

হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিস ষ্টাশনের লিডার ইনর্চাজ শফিকুল ইসলাম বলেন, অত্র উপজেলায় প্রায় শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে তার মধ্য একটি মাত্র দোকনের লাইসেন্স নিয়েছে তাদের নিকট থেকে। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সনদ, পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, জনবসতি পূর্ণ্য এলাকায়, ফায়ার সার্ভিস ষ্টাশনের সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়া কোন ব্যবসায়ী এ সমস্ত ব্যবসা করতে পারেন না। প্রতিটি সিলিন্ডার গ্যাসে মেয়াদ উত্তীর্ণ্য স্টীকার ব্যাধ্যতামুলক ভাবে নিয়ম অনুযায়ী দিতে হয়। তথাপি কিছু ব্যক্তি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শত ভাগ দোকান অনোমুদনহীন ভাবে অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ঝূঁকি জেনেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স, পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স, জনবসতি পূর্ণ্য এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, ফায়ার সার্ভিস ষ্টাশনের সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও সিলিন্ডার গ্যাসে মেয়াদ উত্তীর্ণ্য স্টীকার ছাড়াই অনুমোদন বিহীন ভাবে যে সমস্ত ব্যক্তিগণ যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন শিঘ্রই তাদের বিরোধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।

(জেসিজি/এসপি/এপ্রিল ২০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test