E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কের বেহাল দশা

২০১৮ এপ্রিল ২১ ১৭:০১:৩২
গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কের বেহাল দশা

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : গৌরীপুর-বেখৈরহাটির সড়ক নির্মানের পরপরই ভেঙ্গে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। রাস্তার গর্ত আর খানাখন্দক দেখে মনে হয় যেন এটা কোন সড়ক নয়, খাল! নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১৬ মাসের মধ্যেই ১৪ কিলোমিটার সড়কের শতাধিক জায়গায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দু’পাশে মাটি ভরাট না করায় ব্রীজের গার্ডপোস্টও ভেঙ্গে গেছে।

সড়কটি নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরপরই অনিয়ম শুরু হলে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘গৌরীপুর-লংকাখোলা সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরও প্রশাসন ও তদারকি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নামকাওয়াস্তে দায়সারাভাবে কাজ সম্পন্ন করে চলে যায় বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন।

এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, ৭ কিলোমিটার দূরে বিটুমিন আর পাথর মিশ্রণ করে রাস্তা পাকাকরণের কারণে সেই সময়েই রাস্তায় পাথর খসে পড়ে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দায়ী প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তার। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

সরজমিনে গৌরীপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ২০গজ দূরে গৌরীপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে পুকুরপাড়ে মাটি ভরাট না করায় রাস্তা ধসে পড়েছে। একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে পূর্বদাপুনিয়ার সাইফুল ইসলামের চায়ের দোকানের সামনে।

বালুয়াপাড়া বাজার ও মমিনপুরে সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। গোলকপুর পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুরাতন জেলখানার পাশে নূতন সড়ক ভেঙ্গে খালে পরিণত হয়েছে। রসুলপুর, দারিয়াপুর ও অচিন্তপুর এলাকায় মেরামতকৃত রাস্তার খানাখন্দকে ভরপুর। বীরআহাম্মদপুর ফুটব্রিজের দু’পাশের রাস্তা দেবে গেছে। মেরামতকৃত রাস্তায় ও রাস্তার দু’পাশে শতাধিক জায়গায় ভাঙ্গন দেখা গিয়েছে।

এ ভাঙ্গনের ফলে বেড়িয়ে এসেছে দুর্নীতির আরেকচিত্র। এ উপজেলায় বরাদ্দকৃত রাস্তার দু’পাশে মাটি ভরাট না করেই গত অর্থবৎসরে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২৭টি সড়ক সংস্কার ও মেরামত প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গৌরীপুর মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, সরকারি অর্থ লুটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, টেকসই উন্নয়ন হবে না। সড়কটি মেরামতের পর কাঙ্খিত সময় অতিক্রমের আগে আবারও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে ১৪.০৮৮ কিলোমিটার মেরামত কাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় কিশোরগঞ্জের স্টেশন রোডের মেসার্স শাহিল এন্টারপ্রাইজ। সড়কটি নির্মাণে বরাদ্দ ছিলো ৪ কোটি ২৭লাখ ৬৪হাজার ৬১৬টাকা।

এ দপ্তর সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৫সালের ২৬ এপ্রিল এ সড়কের মেরামত কাজ শুরু হয়। কাজটি সম্পন্ন করে ২০১৬সালের ৬ ডিসেম্বর। কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান। তিনি বর্তমানে নেত্রকোনা এলজিইডি অফিসে কর্মরত আছেন।

তিনি জানান, সড়কটি মেরামতের জন্য কাজ তদারকিতে কোন গাফিলতি ছিলো না। গৌরীপুর হইতে বেখৈরহাটি জিসি সড়ক (গৌরীপুর অংশ) মেরামত কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি ও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আরটিআইপি-২ প্রকল্পের অধিনে ২০১৫সালের ৩১ জুলাই এ কাজের উদ্বোধন করেন। সড়কটি নামকরণ করা হয় আব্দুস সামাদ সড়ক।

এদিকে রাস্তার ভাঙ্গন মেরামত ছাড়াই প্রকৌশল বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সিকিউরিটি মানিও প্রদান করেছে। রাস্তার বেহাদল দশা প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী চলতি দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবো।

(এসআইএম/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test