E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

তবুও পা হাড়ানো সেতু রাণীর উপর মামলার খরগ

২০১৮ এপ্রিল ২২ ১৬:৪০:৩১
তবুও পা হাড়ানো সেতু রাণীর উপর মামলার খরগ

আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : ঋণ নিয়েছেন চল্লিশ হাজার টাকা, যথারীতি ঋণের কিস্তির টাকা নিয়মমাফিক প্রতি সাপ্তাহে একহাজার টাকা করে বিশটি কিস্তি জমাও দিয়েছেন। এরপর তার জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। পায়ে রড ঢুকে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকরে পরামর্শে সম্পূর্ণ ডান পা’টি কেটে ফেলতে হয়, থেমে যায় জীবনের  সপ্ন। অবশেষে সেই ঋনের অবশিষ্ট টাকা না দেয়ার অপরাধে পা হাড়ানো সেতু রানী নামের অসহায় এক নারীর উপর নেমে আসে মামলার খরগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজারে নিুবিত্ত পরিবারের নিস্ব অসহায় নারী ও এক পা হাড়ানো সেতু রাণীর (৪৫) উপর ঋণের টাকা পরিশোধ না করার অপরাধে মামলা করেছে বেসরকারী এনজিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) মৌলভীবাজার সদর ব্রাঞ্চ। মামলা নং সি.আর: ৭৪/১৮ (সদর) সেতু রানীর স্বামীর নাম মিন্টু দাস, তিনি মৌলভীবাজার শহরের পৌর এলাকার ফরেষ্ট অফিস সড়কের সৈয়ারপুরের বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ী সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের মাতারকাপন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের দিকে স্থানীয় সমাজকর্মী শ্যামলী সূত্রধরের সহায়তায় দেশের বৃহত্তম বেসরকারী এনজিও টিএমএসএস মৌলভীবাজার সদর ব্রাঞ্চ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন সেতু রানী। এরপর যথারিতি একহাজার টাকা হারে সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে থাকেন, এভাবে প্রায় ২০টি কিস্তি পরিশোধ করেন তিনি। কিস্তি চলাকালিন সময়ে সেতু রানীর পায়ের ভিতর লোহার রড ঢুকে যায়, সঙ্গে সঙ্গে স্বজনেরা তাকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে, সেখানে দীর্ঘদিন তার পায়ের চিকিৎসা চললেও হটাৎ করে পায়ের পঁচন ধরে যাওয়ায় ক্রমাগত পায়ের অবস্থার অবনতি হতে থাকে ।

এক পর্যায়ে রেফার্ড করা হয় সিলেট এম.এ.জি উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানে চিকিৎসা চললেও অপরিবর্তিত হতে থাকে তার পায়ের অবস্থা। তার ডান পায়ের পচঁন বেড়ে গিয়ে তীব্র আকার ধারণ করায় সেখানের চিকিৎসকরা তার সম্পূর্ণ পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিলে হাটু উপর পর্যন্ত চিকিৎসকরা কেটে ফেলেন। এর পর দীঘ চিকিৎসা শেষে সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় তার নিজ বাসায়। এরই মধ্যে এনজিওটির পক্ষ থেকে ঋনের টাকা পরিশোধের জন্য সেতু রানীর বরাবর উকিল নোটিশ পাঠায় সংস্থাটি।

সেতু রানী দাবী করে বলেন, যখন উকিল নোটিশ পাঠানো হয় তখন তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আর উকিল নোটিশ তিনি পাননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের ফরেষ্ট অফিস সড়কের বাসিন্দা শ্যামলী সূত্রধরের মালিকানাধীন টিনসেডের বাসের বেড়ার একটি ছোট্র ঘরে ভাড়া করে বাস করেন সেতু রানী নামের ঐ নারী । সংবাদকর্মী পরিচয় শুনে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে কি যেনো বলতে চাচ্ছিলেন তিনি, তবে কোন কিছু না বলেই লুঙ্গি দিয়ে পেঁছানো কাটা পা কাপর খুলে দেখান।

এসময় দেখা যায় সেতু রানীর পায়ের যে অংশটি কেটে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে পুজ বেড় হচ্ছিল। বাসার মালিক ও স্থানীয় সমাজকর্মী শ্যামলী সূত্রধর জানান, সেতু রানী দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসাধীন ছিলেন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও সিলেটের এম.এ.জি উসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানে ডাক্তাররা তার এক পা কেটে ফেলেন। এর পর তার অবস্থা সাভাবিক হলে সেখান থেকে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়।

তিনি বলেন, বর্তমান সম্পূর্ণ অসহায় সেতু রানী ভরণপোষন ও খাবারদাবার সবই আমি এবং আমাদের প্রতিবেশীরাই চালাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, মামলা দায়ের হবার পর ভেঙ্গে পড়েন সেতু রানী। বর্তমানে তার এই দুঃসময়ে পাশে দাড়িয়েছেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান ও নিজ ওয়ার্ডের কাউন্সিলার স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী সহ সমাজের বিশিষ্ট জনেরা ।

এবিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমি জানতে পেড়েছি এই মহিলাটির একটি পা নেই, সুতরাং বিষয়টি সম্পূর্ণ অমানবিক। তিনি বলেন , এরকম পা হাড়ানো অসহায় একজন মহিলার উপর ঋনের টাকা পরিশোধ না করার অপরাধে মামলা হয়েছে, তাদের কাছে আমার অনুরোধ ছাড় দিয়ে হলেও তারা যেনো মানবিক কারনে এই মহিলার পাশে দাঁড়ায়।

এবিষয়ে মুঠোফোনে টিএমএসএস এর ডিষ্ট্রিক্ট ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাজহারুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তার অফিসে এসে কথা বলতে বললেও এক পর্যায়ে তিনি মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অফিসিয়ালি অনেকবার বলার পরও তিনি কিস্তি না দেয়ার কারনে আমরা আর কোন উপায় না দেখে আইনগতভাবে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেই।

তিনি দাবি করে বলেন, যখন আমরা মামলা করেছি তখন সেতু রানী সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন , সেতু রানীর পা কাটার বিষয়ে তারা কোন চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র পাননি তবে শুনেছেন সেতু রানীর পা কেটে ফেলা হয়েছে,তবে যেহেতু মামলা হয়েছে তাই এ বিষয়ে আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন।

(একে/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test