E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে কিশোরী ধর্ষণ ব্যাপক তোলপাড়!

২০১৮ এপ্রিল ২৬ ১৬:৪১:৩৪
দিনাজপুরে কিশোরী ধর্ষণ ব্যাপক তোলপাড়!

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বিরলে এক কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। মূল ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে আরেক ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে জেল-হাজতে প্রেরণের ঘটনায়  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিন্দার ঝড় বইছে। মুলহোতা ধর্ষক ইমরানেরর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে খোদ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ অনেকে। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতাদের চাপে আর ৪৫ হাজার টাকার পেয়ে ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবার মূল ঘটনা এগিয়ে গেছে। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মূল ধর্ষকের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ সরকার।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মুলহোতা ধর্ষক ইমরান (২২)কে ছাড়িয়ে নিতে তার পিতা আহসান আলী ঘটনার (মঙ্গলবার) রাতেই থানা চত্বরে ক্ষমতাসীন দলের কথিত নেতাকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ভাগ-বাটোয়ারা শেষে ধর্ষিতা কিশোরীর পিতা পেয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা।

লম্পট ইমরান (২২) বিরল উপজলোর ৫ নং বিরল ইউপি’র সাবইল গ্রামের আহসান আলীর ছেলে। ইমরান ভবঘুরে বেকার। আহসান আলী কাঁচা সব্জি তরি-তরকারির দোকান করেন বিরল বাজারে। সে সুবাদে নেতা-খেতাদের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা। আর এ কারণে মাত্র দেড় লাখ ( ধর্ষিতা পরিবার পেয়েছে ৪৫ হাজার) টাকার বিনিময়ে লম্পট ইমরানকে একটি জঘন্যতম ঘটনা থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।

আর ধর্ষিতা কিশোরীর অসহায় দরিদ্র পিতা ভ্যান চালক। বাড়ি বিরল উপজলোর ২ নং ফরক্কাবাদ ইউপি’র দামাইল সেনিয়াপাড়া গ্রামে। দু’ মেয়ে এক ছেলেও মধ্যে যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়েছে সেই বড়।

বিরলের ৮ নং ধমপূর ইফপি’র ধর্মপুরস্থ রয়েছে বন বিভাগের বিশাল শালবন। দুরসম্পর্কের চাচা লম্পট ইমরান মঙ্গলবার দুপুরে ওই কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় সেখানে। ধর্ষন করে। সে দৃশ্য দেখে ফেলে স্থানীয় আরেক লম্পট বাবুল (৪০)। পেশায় ভ্যান চালক। সে র্ধমপুর নয়াপাড়া গ্রামের সফির মোহাম্মদরে ছেলে। ধর্ষনের ঘটনা দেখার পর লম্পট বাবুল ধর্ষক ইমরানের মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেয়। এর পরেও ক্ষান্ত না হয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষক ইমরানকে তাড়িয়ে দিয়ে পাশ্ববর্তী একটি ভুট্রা ক্ষেতে ধর্ষণ করে লম্পট বাবুল (৪০)।

অন্যদিকে ধর্ষক ইমরান পালিয়ে এসে ছিনতাই এবং কিশোরীকে কেড়ে নেয়ার ঘটনাটি আশপাশের লোকজনকে জানায়। পর্যায়ক্রমে ওই কিশোরীকে ২য় বার ধর্ষনের সময় স্থানীয় যুবক হেলাল, সাগর, রাসেল, গোলাপ, মোমনিুল, সানোয়ারকে নিয়ে ইমরান হাতে নাতে ধরে ফেলে লম্পট বাবুলকে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্রের কাছে নিয়ে আসে বিচারের জন্য। ঘটনাটি জেনে ওই ধর্ষিত কিশোরীর পরিবারের লোকজন ও এলাকার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নারী নেত্রী শিরিন আকতার ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। ছুঁটে যার ধর্ষক ইমরানের পরিবারের লোকজনও।

ধর্ষক ইমরান শত শত লোকের সামনে তার দোষ স্বীকার করে ওই কিশোরীকে বিয়ে করার সম্মতি দেয়। কিন্তু ইমরান বেকার ভবঘুরে ইমরানের সাথে ধর্ষিত কিশোরীকে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তার পরিবারের লোকজন। এনিয়ে দেন-দরবার চলতে থাকে দিন গড়িয়ে রাত ৯টা বেজে যায়। এদিকে এলাকার বিক্ষুদ্ধ লোকজন দু’ধর্ষকে মারধরের জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে বিরল থানায় নিয়ে আসা হয় তাদের।

থানায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক নেতাদের চাপে আর ৪৫ হাজার টাকার পেয়ে ধর্ষিতা কিশোরীর পরিবার মূল ঘটনা এগিয়ে যায়। শুধু মামলা করা হয় লম্পট বাবুলের বিরুদ্ধে। মুলহোতা ধর্ষক ইমরানকে ছেড়ে দিয়ে আরেক ধর্ষক বাবুলকে বুধবার সকালে ওই কিশোরীকে ধর্ষনের মামলায় চালান দেয়া হয় জেল-হাজতে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, মুলহোতা ধর্ষক ইমরান (২২)কে ছাড়িয়ে নিতে তার পিতা আহসান আলী ঘটনার (মঙ্গলবার) রাতেই থানা চত্বরে ক্ষমতাসীন দলের কথিত নেতাকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু ভাগ-বাটোয়ারা শেষে ধর্ষিতা কিশোরীর পিতা পেয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা।

বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ সরকার জানান, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মূল ধর্ষকের বিরুদ্ধে থানা-পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যেহেতু ভিকটিম পরে ইমরানের নাম উল্লেখ করেনি।
এঘটনায় বুধবার সকালে ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে র্ধষক বাবুলকে আসামী করে বিরল থানায় একটি র্ধষণ মামলা (মামলা নং ৩০) দায়রে করেছে।

এ কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। মূল ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে আরেক ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে জেল-হাজতে প্রেরণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও নিন্দার ঝড় বইছে। মুলহোতা ধর্ষক ইমরানেরর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তুলেছে খোদ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ অনেকে।

বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি আব্দুল কুদ্দুসের ফেইসবুকে দেয়া এক সংবাদের প্রেক্ষিতে ফইসবুকে এক স্টেটার্স এ দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বিরল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডঃ মোঃ রবিউল ইসলাম রবি জানিয়েছেন, “প্রেমিক ছেলেটির কি হলো,সেও তো ধর্ষন করেছে।তার নামে মামলা হলো না কেন? থানার ওসি আমাকে বলেছে মেয়েটি স্বীকার করেছে যে, প্রথমে প্রেমিক ছেলেটি ধর্ষন করেছে,তারপর লম্পট বাবুল ধর্ষন করেছে।আমার মনে হয় ঐ প্রেমিকের ফাসি হওয়া উচিত,যে নিজের প্রেমিকাকে নিজে ধর্ষন করে আবার পরে কৌশলে অন্যকে ধর্ষন করার সুযোগ দেয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকানো হলো কি করে?”

বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি আব্দুল কুদ্দুস তার জবারে বলেছেন, “ আমরা মামলার সূত্র ধরে লিখেছি। ভিকটিম নিজে বাদী। তার স্বাক্ষরে মামলা। এখন বলছে ছেলেকে বিয়ে করার জন্য এ কথা বলেছিল। সব বুঝছি। কিছু করতে পারছিনা। আইন তো ----- পক্ষে------।”

পরে বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি আব্দুল কুদ্দুসের জবাবে এ্যাডঃ মোঃ রবিউল ইসলাম রবি জানিয়েছেন, “তাহলে ওসি সাহেব কালকে আমাকে কেন বললো দুজনের নামেই মামলা হবে।কেন শুধু গরীব মানুষটা মরবে। ”

এমনি অসংখ্য স্টেটার্স ফেইসবুকে দিয়েছে অনেকেই। মুলহোতা ধর্ষক ইমরানেরর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছে খোদ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতাসহ অনেকে।

(এসএএস/এসপি/এপ্রিল ২৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test