E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মানসিক ভারসাম্যহীন তৌহিদুলের শিকলে বাঁধা জীবন

২০১৮ এপ্রিল ২৯ ১৯:০২:৫৭
মানসিক ভারসাম্যহীন তৌহিদুলের শিকলে বাঁধা জীবন

সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া (গাজীপুর) : বনের কিংবা গৃহপালিত পশু পাখিরা যেখানে রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে ঘুমানোর সুযোগ পায় সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীন তৌহিদুলের  প্রায় ২ বছর যাবৎ রাত কাটে ঘরের পাশের একটি কাঁঠাল গাছের সাথে শিকল বাঁধা অবস্থায়। তার উপর দিয়ে  বয়ে যাওয়া ঝড়-বৃষ্টি, প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহসহ নানা রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ । 

এক মুহূর্তের জন্যেও ২২ বছর বয়সী এই যুবককে ঘরে নিয়ে রাখা হয়নি। এই অবস্থা থেকে আর কোনো দিন তার মুক্তি হবে কিনা তারও নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা কেউ। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের পাঁচুয়া গ্রামের হাজার হাজার গ্রামবাসীর চোখের সামনে এই অমানবিক ঘটনা ঘটলেও তাকে সহযোগিতায় করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না । এলাকার মেম্বার বা চেয়ারম্যান ও এদের কোন খোজ খবর রাখেনি, হাজারো মানুয়ের সামনে এমন একটি অমানবিক ঘটনায় এলাকার মানুষের মনে দাগ কেটেছে।

তৌহিদুলের বাবা জজ মিয়া (৫২) জানান, মাত্র ১০ কাঠা ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমিজমা না থাকায় অনেক কষ্টে দিন কাটে তার পরিবারের সদস্যদের। তাই দারিদ্র্যের কারণে ডানপিটে স্বভাবের তৌহিদুলের ৫ম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন দুই ছেলে আর বাবা মিলে অনেক পরিশ্রম করে প্রায় এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেন । পরে ২০১৫ সালের শেষ দিকে স্থানীয় ব্রাক ব্যাংক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবং বাকী টাকা সুদের মাধ্যমে গ্রহণ করে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে তৌহিদুলকে মধ্য প্রাচ্যের দেশ কাতারে পাঠায় । কিন্তু সেখানে গিয়ে অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ করতে সে আপত্তি জানিয়ে মালিক পক্ষের সাথে মারামারি করে। ৪/৫ মাস পরে একেবারে শূন্য হাতে কাতার থেকে দেশে ফিরে আসে সে ।

তৌহিদুলের বড় ভাই রুহুল আমিন (২৫) জানায়, দেশে আসার কয়েক মাস পরেই তৌহিদুল মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণের বোঁজা মাথায় নিয়েও তাকে কাপাসিয়ার একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা আর চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

গাছের সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার কারণ জানতে চাইলে সে জানায়, তাদের একটি মাত্র ঘরে পরিবারের সকল সদস্যদের থাকতে হয়। রাতের বেলা সে কখন ঘর থেকে বের হয়ে যায় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঘরের ভিতরে এমন কিছু নেই যার সাথে তাকে শিকল দিয়ে আটকে রাখা যায়। তাছাড়া সে ছাড়া পেলেই সামনে যাকে পায় তাকেই প্রচুর মারপিট করে। তাই ঘরের সামনে একটি টিনের চাল তৈরি করে তাকে ঐ গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সে ঐ চাল ও খুটিগুলো উপড়ে ফেলে দেয়। টাকার অভাবে একটু ভালভাবে বারান্দা করে দেয়ারও সুযোগ হচ্ছেনা।

সে আরো জানায়, মানুষের ধারদেনা শোধ করতে নিরুপায় হয়ে তার মাকে চলতি মাসের ১ তারিখে বিনা খরচে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে কোনোভাবেই ভাইয়ের চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছেনা।

তৌহিদুলের চাচি আকলিমা জানায়, সে প্রায় সময়ই ভাল আচরণ করে। হঠাৎ করে যখন পাগলামী উঠে তখন তাকে কেউ ধরে রাখতে পারেনা। সে এক রাত ঘুমালে পরের রাত জেগে থাকে। তাই তার অশ্লীল গালিগালাজ আর চিৎকার চেচামিতে আমরা অনেক রাতেই ঘুমাতে পারিনা।

টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পারার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন পিতা জজমিয়া। চোখের সামনে ছেলের এমন কষ্টের জীবন চেয়ে দেখা ছাড়া তার যেন আর কোনো উপায় নেই। তাই ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

এ ব্যাপারে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর টি এইচ ও ডা: সালাম সরকার বলেন, এমন রোগীদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা করে ভাল করা যায়।

তিনি বলেন, গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন মেডিকেল হাসপাতাল অথবা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে এদের উন্নত মানের চিকিৎসা দেয়া যায়।

(এসকেডি/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test