E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলাপাড়ায় এক শিক্ষক বদলি নিয়ে তোলপাড়

২০১৮ মে ০৩ ১৫:৩২:০৫
কলাপাড়ায় এক শিক্ষক বদলি নিয়ে তোলপাড়

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : এক প্রতিবন্ধী শিক্ষিকার বদলি নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শিক্ষক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রী ‘ব্যবস্থা নিন’ নির্দেশ দেয়ার পর তা না মেনে শিক্ষক বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা রমা রানী রায়কে বদলী না দিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অন্য শিক্ষককে বদলী করা হয়েছে। তবে পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দাবি, এ বদলির সিদ্ধান্ত উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং নীতিমালা মেনে করা হয়েছে। 

উপজেলা শিক্ষা কমিটির ছয় সদস্য অভিযোগ করেন, শিক্ষা কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করা হয়েছে। তাঁরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনি লাল সিকদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন।

জানা যায়, কলাপাড়ার নীলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রমা রানী রায় গত ১৪ জানুয়ারি রহমতপুর কেজিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূণ্য পদে বদলির জন্য আবেদন করেন। শারিরীক প্রতিবন্ধকতা থাকায় প্রতিদিন নদীতে খেয়া পার হয়ে স্কুলে যাওয়া কষ্টসাধ্য। বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও নদী উত্তাল থাকায় প্রায়ই তাঁকে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। বিষযটি মানবিক হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পৌর মেয়র তাঁর এই আবেদনে সুপারিশ করেন।

এ আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সরকারি পরিপত্র ও মানবিক কারনে শিক্ষিকা রমা রানী রায়কে পৌর শহরের রহমতপুর কেজিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূণ্য পদে বদলির সুপারিশ করেন। কিন্তু শিক্ষা কমিটির নির্দেশ উপেক্ষা করে গত ২২ মার্চ দক্ষিন চাকামইয়া গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোফাজ্জেল হোসেন কে রহমতপুর কেজিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূণ্য পদে বদলী করা হয়। যার স্মারক নং জে প্রা শি অ / পটুয়া / কলা /(বদলী) / পার্ট-৩/১৩৫/২০১৫/৪৬৬।

এ বদলির বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী শিক্ষিকা রমা রানী রায় আবেদন করলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি গত ৪ মার্চ পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং ২৭ মার্চ ও ১২ এপ্রিল পৃথক আবেদনে ডি ডি প্রাথমিক শিক্ষা, বরিশাল কে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর নির্দেশে গত ২৫ মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কলাপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। যার স্মারক নং জেপ্রাশিঅ/পটুয়া/২০/৪৮৬। কিন্তু এ নির্দেশ উপেক্ষা করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, ডিডি প্রাথমিক শিক্ষা বরিশাল, ডিপিইও এবং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিপরীত অবস্থান নেয়ায় গত ৩ এপ্রিল চাকামইয়া নিশানবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা রেজভী সুলতানা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়মের বিরুদ্ধে অবেদন করেন।

আবেদনে তিঁনি উল্লেখ করেন, শুণ্যপদে বদলির হওয়ার জন্য তিঁনি গত ২১ জানুয়ারি আবেদন করেছেন ( যার ডকেট নং ২২)। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদলী নীতিমালা অনুযায়ী সর্ব জ্যেষ্ঠ হিসেবে তাঁর নাম উপস্থাপনই করেন নি। এমনকি চলতি দায়িত্বের তালিকায় মন্তব্যের ঘরে তাঁকে অযোগ্য দেখানো হয়েছে। শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তে রমা রানীকে বদলির সুপারিশ করা হলেও সেই সুপারিশ উপেক্ষা এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে অন্য শিক্ষককে রহমতপুর কেজিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছে যা নিয়মবর্হিভূত।

শিক্ষিকা রমা রানী রায় বলেন, প্রতিবন্ধকতার কারনে তিনি শূণ্যপদে বদলির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার জেদের কারণে সকল নিয়ম উপেক্ষা করে তাঁকে বদলী না করে শুণ্য পদে অন্য শিক্ষককে বদলী করেছেন। কারও নির্দেশ কিংবা সিদ্ধান্ত কিছুই মানছেন না শিক্ষা কর্মকর্তা মনি লাল সিকদার।

এ ব্যাপারে শিক্ষা কমিটির সদস্য ও কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষা কমিটির অধিকাংশ সদস্যের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে অনিয়মের মাধ্যমে অপর শিক্ষক মোফাজ্জেল হোসেনকে রহমতপুর কেজিএ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুণ্য পদে বদীর করেছেন।

শিক্ষা কর্মকর্তা এতে সরকারি পরিপত্র লঙ্ঘনসহ প্রতিবন্ধী শিক্ষিকার অধিকার ক্ষুন্ন করেছেন। শিক্ষা কমিটির সদস্যরা শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রাথমিক ও গসশিক্ষা মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানান।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনি লাল সিকদার বলেন, তিঁনি বিধি মোতাবেক শিক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বদলি করেছেন। কোন অনিয়ম করেন নি।

পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে তিঁনি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা কমিটির সভায় রমা রানীর বদলির আবেদন ছিলো নয় নম্বরে।

এছাড়া বর্তমানে শিক্ষিকা রমা রানী রায় প্রতিবন্ধী হলেও তিঁনি প্রতিবন্ধী কোঠায় চাকরি হয়নি এবং তিঁনি স্বীকৃত প্রতিবন্ধী নয়। এ কারণে সরকারি বদলি নীতিমালার ৩.১৩ ধারার আওতায় তাঁকে রাখা হয়নি।

(এমকেআর/এসপি/মে ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test