E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এবারও বন্যার শঙ্কায় লক্ষাধিক মানুষ

নির্মাণের ৩৫ বছরেও সংস্কার হয়নি আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

২০১৮ মে ০৩ ১৮:০১:৫২
নির্মাণের ৩৫ বছরেও সংস্কার হয়নি আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় নির্মাণের ৩৫ বছরেও সংস্কার করা হয়নি আত্রাই নদীর ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। দীর্ঘ সময়ে সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্নস্থানে খানাখন্দ ও ইঁদুরের গর্তে বাঁধটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আসন্ন বর্ষা মওসুমে এবারও বন্যার শঙ্কায় রয়েছে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের অন্তত: লক্ষাধিক মানুষ।

জানা গেছে, ১৯৮৩-৮৪ অর্থ বছরে জমি অধিগ্রহণসহ আত্রাই নদীর ডান তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বাঁধটি আর সংস্কার করা হয়নি।

বর্তমানে রাস্তাটি ভঙ্গুর অবস্থায় পরিণত হয়েছে। দুই ধারের মাটি ভেঙে অসংখ্যস্থানে ছোটবড় খানখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বার্ম কেটে জমি তৈরি করায় বাঁধটি সংকুচিত হয়ে গেছে। বর্ষা মওসুমে ইঁদুররা এই বাঁধে এসে আশ্রয় নেয়। আবাসস্থল হিসেবে তৈরি করে অসংখ্য গর্ত। বর্তমানে বাঁধটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

গতবছরের আগস্ট মাসে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে মান্দা ফেরিঘাট থেকে জোতবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বাঁধের কয়াপাড়া, আলহেলা ইসলামি একাডেমি, পালপাড়া, কৃষ্ণচুড়া, নমশুদ্রপাড়া, সুজনসখী, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, বাগাতিপাড়াসহ অন্তত: ১৫টি স্থান চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সুজনসুখী খেয়াঘাট নামকস্থানে ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ঝুঁকিপূর্ণ অন্য স্থানগুলো বাঁশের খুঁটি ও বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকিয়ে রাখে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৪ সালে বাঁধটি নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি। ১৯৯৯ সালে বাঁধটিতে পাকাকরণের কাজ করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পরে এটি সড়ক ও জনপদ বিভাগে হস্তান্তর করে বিএমডিএ। কিন্তু বাঁধের দুইধারে আর মাটির কাজ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে বাঁধের দুইধারের মাটি কেটে গিয়ে সরু রাস্তায় পরিণত হয়েছে।

বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন মোল্লা, আলহাজ্ব মনসুর রহমান, আলহাজ্ব লুৎফর রহমান নবীসহ আরও অনেকে জানান, নদীর গভীরতা আগের মত আর নেই। তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকবার এটি শুকিয়ে যায়। গভীরতা না থাকায় অতিরিক্ত বর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পানিতে দুইকুল উপচিয়ে নদীর পানি সহজেই বাঁধে এসে আঘাত হানে। নদীর পানি বাড়তে শুরু করলে এলাকার লোকজন রাত জেগে বাঁধ পাহারা দেওয়ার কাজ করেন। প্রত্যেক বর্ষা মওসুমেই তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়।

পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের আব্দুল মতিন, আসলাম হোসেন ও নজির উদ্দিন প্রামানিক, নাড়াডাঙ্গা গ্রামের তৃপ্তিশ কুমার মন্ডল, দ্বারিয়াপুর গ্রামের আমেদ আলী ও আজাদ আলীসহ আরও অনেকে জানান, গতবছরের আগস্ট মাসে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে আত্রাই নদীর পানি হু-হু করে বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে আঘাত হানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। অতিরিক্ত চাপে বাঁধের বিভিন্নস্থানের গর্ত দিয়ে পানি বাঁধের ওপর পারে বের হতে থাকে। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় কয়েকটিস্থান আটকানো সম্ভব হলেও ভেঙে যায় সুজনসখী খেয়াঘাট এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

তারা অভিযোগ করে বলেন, ভাঙনস্থানে বাঁধটি মেরামতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। মাটির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বালু। হঠাৎ বৃষ্টিতে মেরামতস্থানে বাঁধের বালু ধসে গিয়ে বেশকিছু গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেবে গেছে নদীর ধারের অংশ। বর্ষা মওসুমের আগেই মেরামতস্থানে সিসি ব্লক স্থাপনসহ পুরো বাঁধ সংস্কারের দাবি জানান তারা।

বাঁধ মেরামত কাজের মান নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রসাদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন খান, কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল ও নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল। তারা জানান, বাঁধটি যেভাবে মেরামত করার দরকার ছিল সেটি করা হয়নি। চরম অবহেলা ও গাফলতির মধ্য দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পুরো বাঁধটি সংস্কারের দাবি করেন তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনস্থানটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি অবহিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেওয়া হয়েছে। বন্যার আগেই বাঁধের মেরামতস্থানে এসবিবি রাস্তা নির্মাণসহ সিসি ব্লক স্থাপন করা হবে।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, সুজনসখী খেয়াঘাটের ভাঙনস্থানে সিসি ব্লক স্থাপনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে, বর্ষা মওসুমের আগেই সেখানে সিসি ব্লক স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(বিএম/এসপি/মে ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test