E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাগেরহাটে সর্ববৃহৎ কৃষানের হাট 

২০১৮ মে ০৬ ১৭:১৫:৪৫
বাগেরহাটে সর্ববৃহৎ কৃষানের হাট 

বাগেরহাট প্রতিনিধি : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কৃষানের হাট বসেছে বাগেরহাটের ফকিরহাট পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে। যা ছাড়িয়ে গেছে ফকিরহাট ডাকবাংলো মোড় পর্যন্ত। প্রায় ৭/৮ হাজার শ্রমিক গতকাল সমাবেত হয় ঐ হাটে। 

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়- প্রায় ৫৫-৬০ বছর ধরে ফকিরহাটে এই কৃষানের হাট বসে।

এ ব্যাপারে ফকিরহাট এলাকার ধান চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, আগে বাবার সাথে হাটে আসতাম জন নিতে এখন নিজে আসি ফকিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে এই কৃষানের হাটে আসতাম জন নিতে বাড়িতে ধান তোলার জন্য এখানে হাট বসার জায়গা খুবই কম ছিল। সেখানে জায়গার স্বল্পতার কারনে বর্তমানে রেল স্টেশন চত্বরে এই হাট বসে। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে এই খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য নির্দিষ্ট একটি জায়গা নির্ধারনের দাবি জানান।

রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, নওগা, নীলফামারী, সৈয়দপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষিরা, খুলনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ি এবং বরগুনা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজের সন্ধানে ছুটে আসে ফকিরহাটের এই কৃষানের হাটে। রবিবার ও বুধবার এখানে হাট বসে। দূর-দুরন্ত খেকে কাজের সন্ধানে আসা খেটে খাওয়া মানুষেরা হাটের ১/২ দিন আগে দল বেধে ফকিরহাটে এসে ফকিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে অবস্থান নিয়ে রাত্রি যাপন করে।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৫০০গজ দূরে পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে দলে দলে লোক সমাবেত হতে থাকে। আশ-পাশের জেলা থেকে কাজের সন্ধানে আসা লোকেরা নসিমুন, করিমুন, ভডভটি, মাহেন্দ্রা, পিকআপ, মিনি ট্রাক, লোকাল বাসে করে দলে দলে লোক সমাবেত হয় এই কৃষানের হাটে। বিভিন্ন জেলা থেকে মটর সাইকেল যোগে মহাজনেরা জন কিনতে এই কৃষানের হাটে ছুটে আসেন।

সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জন কেনা-বেচা হয়। মোরেলগঞ্জ থেকে জন বিক্রি করতে মিজানুর রহমান শেখ(৩৫) জানান- আমাদের দলে ৮জন আছি, জন প্রতি ৭০০ টাকা মজুরিতে গোপালগঞ্জের জনৈক শারাফাত হোসেন ও জালাল হোসেন আমাদের কাজের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।

এত দূরে কেন জন বিক্রি করতে এসেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আলম শেখ জানান, ফকিরহাটে জন প্রতি মজুরি আমাদের অঞ্চল থেকে দ্বিগুনেরও বেশি হওয়ায় সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে আমরা এখানে এসেছি। ২/৩ বছর পূর্বে ২শত টাকায় জন পাওয়া যেত। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামের কারণে ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় জন বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে তিন বেলা খাবারের মূল্য যুক্ত করলে একজন কৃষানের দর পড়ে ৮০০ টাকা। এ অঞ্চলের জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারনে মহাজনেরা ফসল ঘরে তুলতে কোন উপায় না পেয়ে অধিক মজুরিতে জন কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মাঠের ফসল ঘরে তুলতে হবে এ কারনে অর্থের দিকটা তারা চিন্তায় আনছেন না।

এদিকে বর্গাচাষীরা পড়েছেন মহা বিপাকে। জমির হারি, চাষাবাদের খরচ এবং ফসল কাটার খরচ সব মিলিয়ে বর্গাচাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সব খরচ মিটিয়ে ঘরে খাবার ফসল টুকু উঠবে কিনা তা বর্গাচাষিরা জানেন না। কৃষানের হাটের কারনে এখানকার চায়ের দোকান, বেকারি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পান-সিগারেটের দোকান গুলোতে বেচা-কেনা বেড়েছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চায়ের দোকানদার আঃ জলিল জানান, অন্য দিনের তুলনায় কৃষানের হাটের দিন কেনা-বেচা দ্বিগুন হয়। রবিবার ও বুধবার হাটের দিন হওয়ায় জন সমাগম অধিক হওয়ার কারনে ফকিরহাট ডাকবাংলো মোড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে এলাকার সুশীল সমাজ ঐ ২ দিন ডাকবাংলো মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে ।

(এসকে/এসপি/মে ০৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test