E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

বাগেরহাটে নারী চিকিৎসককে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা

২০১৮ মে ১০ ১৭:৫২:০৯
বাগেরহাটে নারী চিকিৎসককে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের ফকিরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে চিকিৎসা দিতে দেরী হওয়ার কথিত অভিযোগে উপজেলা হাসপাতালের নারী চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনকে প্রকাশ্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। 

এসময় ওই আওয়ামী লীগ নেতার এক সহযোগি হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক অভিজিৎ মৃধাকে মারপিটও করেছেন। ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাহিরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

ফকিরহাট হাসপাতালের কর্তব্যরত দুই চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা জানার পর বৃহষ্পতিবার বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ছুটে যান ফকিরহাট উপজেলা হাসপাতালে। এই ঘটনার পর ফকিরহাট উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। দেখা দিয়েছে চিকিৎসকদের নিরাপত্তাহীনতা। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফকিরহাট উপজেলা হাসপাতালের নারী চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিন বলেন, বুধবার দুপুর দুইটার দিকে মানসা বাহিরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিমের স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের শ্বাসকষ্ট বাড়লে তাকে নিয়ে তার সহযোগী আনোয়ার হোসেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসেন। আমি এসময়ে মারপিটে আহত অপর এক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ছাড়পত্র লিখছিলাম। আমি ছাড়পত্র লেখা বন্ধ রেখে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন দেই। একটু পরে আমার আরেক কলিগ ডা. অভিজিৎ মৃধা এসে ওই রোগীর পেশার মেপে কম পায়।

আমরা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে তার চিকিৎসা শুরু করি। এর কিছুক্ষণ পরে রোগীর স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা ফকির রেজাউল করিম সেখানে পৌছে কোন কথা ছাড়াই আমার গলায় থাকা ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে রাখে এবং হাত চেপে ধরে। অনেক জোরাজুরির পর আমি তার হাত থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে রক্ষা পাই। আরেকটু সময় গলায় ওড়না পেচানো থাকলে নিশ্চিত আমার মৃত্যু হতে পারত। পরে আমি থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এই ঘটনা পর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।

মারধরের শিকার আরেক চিকিৎসক অভিজিৎ মৃধা অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিমের অসুস্থ স্ত্রী ঝর্ণা বেগমকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে আসেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি গত দশ বছর ধরে এই হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছিলেন। চলতি অর্থ বছরে তার ঠিকাদারি চলে যায়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর ক্ষুব্দ ছিলেন।

ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম প্রথমে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনকে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। এই দেখে তার সহযোগি আনোয়ার হোসেন উৎসাহি হয়ে আমার উপর চড়াও হয়ে চড় কিল ঘুষি মারে। আমরা এখানে মানুষের সেবা দিতে এসে অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রকাশ্যে এভাবে আমাদের মারলে এখানে কিভাবে চিকিৎসা দেব প্রশ্ন তার।

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. অরুণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিম চিকিৎসক মৌসুমী ইয়াসমিনকে বিনা অপরাধে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেছেন। অপর চিকিৎসক অভিজিৎ মৃধাকে মারপিট করেছে। যা ক্ষমার অযোগ্য। আমার চিকিৎসারা আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। তার চিকিৎসায় কোন অবহেলা ছিলনা। ওই ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের কর্মরত সকল চিকিৎসক নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। আমি বিষয়টি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে আমরা চিকিৎসকরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব বলে জানান সিভিল সার্জন।

ফকিরহাট উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল বলেন, চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা দু:খজনক। বৃহষ্পতিবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় এই ঘটনাটি আলোচ্যসূচিতে ছিল। সবাই এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে। যিনি এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি তাই আমি এই ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনকে অবহিত করেছি। ঘটনা শুনে তিনি বলেছেন আগামী ১২ মে তিনি ফকিরহাটে আসবেন। তিনি পরবর্তি করণীয় ঠিক করার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ঘটনা জানার পর পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম এক নারী চিকিৎসককে গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টার ঘটনার সত্যতা মিলেছে। হাসপাতালের চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ এখনো কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে মামলা নিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা জানতে ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাহিরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফকির রেজাউল করিমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তার মুঠোফোনটি (০১৭১৯-১৩৯৪৮১) বন্ধ পাওয়া যায়।

(এসএকে/এসপি/মে ১০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test