E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর বাঁধে ধস

দায়সারা কাজ করে বাঁধের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

২০১৮ মে ২১ ১৬:০৫:৪৮
দায়সারা কাজ করে বাঁধের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল ও বনগাঁও গ্রামের উত্তর পাশে বয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারা নদী। প্রতি বছরই নদীর তীরবর্তী বাঁধে কোন না কোন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। নেয়া হয় বাঁধ নির্মান প্রকল্প। এবারও একই অবস্থা। বাঁধ রক্ষায় নেয়া হয়েছে ‘কুশিয়ারা রিভার প্রজেক্ট’ নামে ১০ লক্ষ ৭৮ হাজার ১ শত ৯৪ টাকার প্রকল্প। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাঁধ নির্মাণের পিআইসি সভাপতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার যোগসাজসে বাঁধ নির্মানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দাঁয়সারা কাজ ও বাঁধ মেরামতে দুর্নীতির কারণে একদিকে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকার লোকজনদের গাফিলতি না ফিফটি-ফিফটি দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়েও এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন।

সুত্রে প্রকাশ, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল ও বনগাঁও গ্রামের উত্তর পাশে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারা নদী। ওই নদীর তীরবর্তী পাহাড়পুর নামক স্থানে কয়েক যুগ থেকে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মাঠি নদীতে ধ্বসে শাখা নদীর নমুনা ধরে। ইতিপুর্বে কয়েক বার ওই বাঁধ ভেঁঙ্গে নবীগঞ্জ, বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ উপজেলাসহ ও হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের ফলানো ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একমাত্র ওই বাঁধ কাল হয়ে দাড়িয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলা তথা হবিগঞ্জ বাসীর জন্য। কারণ বিগত দিনে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে কৃষকদের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গিয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু স্থায়ীভাবে বাঁধ গড়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

সম্প্রতি হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ওই বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১০ লক্ষ ৭৮ হাজার ১ শত ৯৪ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পান স্থানীয় ইউপি সদস্য পারকুল গ্রামের মৃত সুলেমান মিয়ার পুত্র হাজী মোঃ দুলাল মিয়া। কাজটি চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ করার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছিল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা হয়নি। মেয়াদ পেরিয়ে যাবার পর কাজের হিসেব নিকেশ দাখিল করে চল-ছাতুরি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে এক ভয়াবহ দৃশ্য। কাজের পিআইসি সভাপতি ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া চল-ছাতুরি করে বাঁধের সংলগ্ন স্থান থেকে শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র মাঠি ভরাট করে বেশিরভাগ টাকাই তার পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে যেভাবে ছিল সেভাবেই রয়ে গেল বাঁধের চিত্র। গত এক সপ্তাহের বর্ষনের ফলে পলি মাটির বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাঁটল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাজের আদেশে সাতটি শর্ত ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাজের সাইটে প্রকল্পের নাম, দৈর্ঘ্য, পরিমান, বরাদ্ধ, কমিটির সভাপতির নামসহ ৫ ফুট ও ৩ ফুট বিল বোর্ড স্থাপন করে রাখা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্নীতি প্রকাশ পাবে বলে এর জন্য তা রাখা হয়নি। সচেতন মহল মনে করেন সেই শর্তাবলির কোন একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এর জন্য সরকারের টাকার কোন সফলতা হলো না। বন্যা হলে সর্ব প্রথম ওই স্থানই ভেঁঙ্গে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যে মাটি দেয়া হয়েছে কয়েক দিনের বর্ষনের কারণে মাটি ছিটকে পড়ে পুর্বের ন্যায় হয়ে যাওয়ার আশংকা করেছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য দুলাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কাজ সঠিক মত হয়েছে এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। যেহেতু তিনি ওই এলাকার এবং ইউপি সদস্য যত দিন বাধঁ ভাঙবে তত দিন সংস্কার করবেন বলেও জানান।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, এটা ফসল রক্ষা বাঁধ। আগাম বন্যায় যাতে ফসলের কোন ক্ষতি না হয় সে জন্য এই বাঁধ নির্মান করা হয়েছে। তবে প্রজেক্টে কোন ধরণের দুর্নীতি হয়নি।

তিনি আরো বলেন, নদী রক্ষার জন্য নয়, শুধু ফসল রক্ষার জন্য নির্মান করা হয়েছ এ বাঁধ। এদিকে সচেতন মহল মনে করেন বাঁধ নির্মানে যেভাবে দাঁয়সারা কাজ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিবিড় পর্যবেক্ষন ও গুরুত্ব সহকারে যাছাই-বাছাই করলে বাঁধ সংস্কারের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাবে। এলাকাবাসী দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

(এমআরএম/এসপি/মে ২১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test