E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত শত শত ছাত্র-ছাত্রী

কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বছরে সাত মাসই ক্লাশ হয়না

২০১৮ মে ২৪ ১৭:০৬:০৫
কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বছরে সাত মাসই ক্লাশ হয়না

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : একটি বছরের গড়ে সাত মাসই ক্লাশ হয়না নেত্রকোনার কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই বিদ্যালয়টি। 

ফলে সুষ্ঠু পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ বিদ্যালয়ের সাত শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: জুলফিকার হোসেন জানান, এই বিদ্যালয়টিতে পি.এস.সি, জে.এস. সি, এস. এস. সি, এইচ.এস.সি, ডিগ্রী পাসকোর্স (পার্ট-১ ও ২) এবং ডিগ্রী চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ফেব্রুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চলে এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, ডিগ্রী পাসকোর্স (পার্ট-১ ও ২) এবং ডিগ্রী চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা। এর পর নভেম্বরে আবার শুরু হয় জে.এস.সি ও পি.এস. সি পরীক্ষা। এর ফলে বছরে ৬/৭ মাসই ক্লাশ করতে পারেনা ছাত্র-ছাত্রীরা। ফলে তাদেরকে বাদ্য হয়েই কোন না কোন কোচিং সেন্টার, ও প্রাইভেট পড়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করে সিলেবাসের পাঠগ্রহনের কাজ কোনমতে শেষ করতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের যে রকম মান সম্মত ফলাফল হওয়া দরকার ছিল তা হচ্ছেনা বলে জানান ছাত্র অভিভাবক সম্পা ভট্টাচার্য। ১৮৩২ সালে বিদ্যায়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিদ্যালয়টি।

প্রতিষ্ঠার পর জাতীয়করণের আগ পর্যন্ত অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ভাল ফলাফল অর্জন করে সমাজে মাথা উঁচু করে দাড়াঁয় সে সময়ের শিক্ষার্থীরা। ১৯৯১ সনের ৩ মার্চ সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়।

ছাত্র অভিভাবক আশরাফ উদ্দিন ভূঞা জানান, জাতীয়করণের পর থেকেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট সহ নানামুখি সমস্যা লেগেই আছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরো জানান, বর্তমানে বিদ্যালয়টির মোট ছাত্র-ছাত্রী ৭৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ২০৬ জন। এই ২০৬ জন ছাত্রীর জন্য বিদ্যালয়ে একটি ঋতু প্রকল্প চালু আছে, কিন্তু কোন নারী শিক্ষক না থাকায় সিনিয়র শিক্ষক কামরুজ্জামান এ ঋতু প্রকল্পের দেখভাল করছেন। তবে পুরুষ শিক্ষকের কাছে ছাত্রীদের ঋতুকালীন সময়ের বিষয়টি খোলামেলা ভাবে তুলে ধরতে পারছেনা বলে জানান তিনি। এতে ছাত্রীরা ভীষন বেকায়দায় আছে।

তিনি জানান, ২১ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষক আছেন মাত্র ১২ জন। গত কিছুদিন আগে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মো: মঈনউল ইসলাম উপজেলা পরিষদ মিলনায়াতনে কেন্দুয়ার সুধিজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এই সভায় জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো: জুলফিকার হোসেন সহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক বিদ্যালয়টির শিক্ষক সংকট, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু সমস্যা এবং মহিলা শিক্ষক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।

এ প্রেক্ষিতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (পদাধিকারবলে কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি) মো: মঈন উল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিক্ষক সংকট ও মহিলা শিক্ষক জরুরী ভিত্তিতে এ বিদ্যালয়ে দেয়ার জন্য ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, আশাকরি নারী শিক্ষকের বিষয়টি খুব তারাতাড়ি সমাধান হবে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের অন্য সব সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।

কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন, এই বিদ্যালয়টি কেন্দুয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আমরা এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদ্যালয়টি জাতীয়করনের আগে যে লেখাপড়া হতো তা এখন আর হয়না। এখন বিদ্যালয়টিতে সারাবছরই শিক্ষক সংকট এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের ভ্যানু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসার ফলে ৬/৭ মাস ক্লাশ হয় না। এটা ওই বিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খুব কষ্টের বিষয়।

তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট সহ সব সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কর্তাব্যাক্তিদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

(এসবি/এসপি/মে ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test