E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অপমানের প্রতিশোধ নিতেই খাসিয়া দা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা!

২০১৮ মে ২৫ ১৫:০৮:০২
অপমানের প্রতিশোধ নিতেই খাসিয়া দা দিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা!

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখার বহুল আলোচিত স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান (১৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) । 

বৃহস্পতিবার (২৪মে) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, মূলত অপমানের প্রতিশোধ নিতেই অত্যান্ত ঠান্ডা মাথায় হাসানের বাবার গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাসানকে খাসিয়া দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

তিনি জানান, গত বুধবার (২৩ মে) এঘটনায় জড়িত হাসানের বাবার ব্যাক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায় মোট চার পৃষ্ঠার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. হাসান জামানের আদালতে জবানবন্দি দেন ।

ঘটনার প্রায় পৌনে চার মাস পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করলো পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, পুলিশ বিভিন্ন ভাবে ইনেভেস্টিগেশনের পাশাপাশি আসামীর ব্যবহৃত জ্যাকেট ও মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে লোহমর্ষক এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে।

জানা যায়, হত্যাকান্ডের প্রায় তিন মাস পূর্বে গাড়ি চালক এরশাদ হাসানকে সিলেটের মোগলাবাজারের মনির আহমদ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় গোলাপগঞ্জ থানার চন্দরপুর পেট্রোলপাম্পের নিকটে একটি দোকান থেকে কেক ও ঠান্ডা কেনার জন্য চালক এরশাদকে গাড়ি থামাতে বলে হাসান। তখন গাড়িটি পার্ক করার সময় হাসানের ডান পায়ের উপর গাড়ির চাকা উঠে গিয়ে হাসানের পা পিছলে যায়। এঘটনায় ক্ষোব্দ হাসান গাড়ি চালক এরশাদকে গালিগালাজ করে এবং একপর্যায়ে চড় থাপ্পর মারে। অবশ্য এ ঘটনায় হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চেয়েছিলো। অবশেষে এই ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে এ অপমানের প্রতিশোধ নেন হাসানদের বিশ্বস্থ গাড়ি চালক এরশাদ।

আলোচিত এই হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআইতে) স্থানান্তরের প্রায় তিন মাসের মাথায় চৌকস তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শিবিরুল ইসলাম এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাতে আব্দুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। সে উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুর রহিমের ছেলে এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন হাসানের পিতা আব্দুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ৩০ ফুট নিচে থেকে আব্দুল্লাহ হাসানের খন্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহতের বাবা প্রবাসী আব্দুর রহিম পূর্ব সত্র“তার জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে এমন ধারণা থেকে ৬ জনকে আসামি করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শিবিরুল ইসলাম জানান, গাড়ি চালক এরশাদ ঠান্ডা মাথায় পূর্ব পরিকল্পনা মতে এ হত্যাকান্ড ঘটালেও এতদিন থেকেছিল সন্দেহের উর্ধ্বে। তার তিনটি কর্মকান্ডের উপর ভিত্তি করে আমরা তদন্ত করি। এর মধ্যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুখে দাড়ি রেখে আত্মগোপন করে। এতে সন্দেহ আরো বেড়ে ওঠে। এসব কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, গত শনিবার (১৯ মে) তাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু তিনি ৩ দিনের মধ্যেই লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।


(একে/এসপি/মে ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test