E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১০ লাখ টাকার প্রকল্পে ১ লাখ টাকার মাটি ক্রয়

নবীগঞ্জে পুরোনো বাঁধের মাটি দিয়েই নতুন বাঁধ নির্মাণ করলেন ইউপি সদস্য দুলাল

২০১৮ মে ২৮ ১৭:৪২:০৬
নবীগঞ্জে পুরোনো বাঁধের মাটি দিয়েই নতুন বাঁধ নির্মাণ করলেন ইউপি সদস্য দুলাল

মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুরোনো বাঁধ কেটেই নতুন বাঁধ নির্মাণ করে প্রকল্প সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য এবার বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। ওই বাঁধের মাটি ধরে রাখার জন্য দেয়া হয়নি কোনো দেয়াল কিংবা বাঁশের আঁড়া। ফলে বৃষ্টিতেই ধুয়ে যাচ্ছে বাঁধের মাটি। আর নদীতে পানির তোড়ে বাঁধ ভেসেই যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ বাঁধটি ভেঙে গেলে প্লাবিত হবে নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। আর নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়বে। এ দিকে বাঁধ সংস্কারে দায়সারা এমন কাজের তদারকিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতিরও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অনিয়মের অভিযোগে বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ দুলাল মিয়া জানান, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। বাঁধটি সংস্কারে তিনি ১ লাখ টাকার মাটি ক্রয় করেছেন। শ্রমিক ব্যয় খুব বেশি হয়নি। কারণ কাজটি নিজের এক্সেভেটরের (মাটি কাটার মেশিন) মাধ্যমে করা হয়েছে। প্রায় ১ মাস আগেই কাজ শেষ করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন বাকি টাকা গেল কই?

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তাওহীদুল ইসলাম জানান, যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তা মাটি কেনা বা জমি কেনার জন্য নয়। এটি কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের টাকা। শুধু শ্রমিক বাবদ। মাটি কোথা থেকে আনবে, জমি কীভাবে নেবে তা প্রকল্প সভাপতির দায়িত্ব। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তিনি প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, এটি স্থায়ী বাঁধ না। শুধু বোরো ফসল রক্ষার জন্য আপাতত একটি বাঁধ দেয়া হয়েছিল। স্থায়ী বাঁধের জন্য ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। কাবিটা প্রকল্পে শ্রমিকের মাধ্যমে কাজ করানোর কথা থাকলেও কেন এক্সেভেটরের মাধ্যমে করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান। বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে। নিজের তদারকিতেও কোনো গাফিলতি ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুসারে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নে কুশিয়ারা ডাইকের পাহাড়পুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের জন্য কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ১৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ২৫ জানুয়াররি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। শর্তাবলীতে বলা হয় কাজের প্রকল্পের নাম, দৈর্ঘ্য, পরিমাণ, বরাদ্দ, কমিটির সভাপতির নামসহ ৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্তের একটি বিলবোর্ড প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করতে হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পূর্বের বাঁধটি কেটে মাটি এনে পাশেই নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে বালু মাটিও। বৃষ্টিতে নবনির্মিত এ বাঁধের মাটি কিছুটা খয়েও যাচ্ছে। পুরোনো বাঁধটিও অবশিষ্ট অংশও দুর্বল হয়ে নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রকল্পের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় এপ্রিলের শেষে। প্রকল্পে কোনো বোর্ড নেই। যা দেখে বলার উপায় আছে যে এটি নতুন হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক ঘণ্টার জন্য বোর্ডটি স্থাপন করে ফটোসেশন করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরতরাও ঠিকমতো তদারকি করেননি।

(এমআরএম/এসপি/মে ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test