E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলাপাড়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ

২০১৮ মে ২৯ ১৭:৫১:৪৪
কলাপাড়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ। এ কারনে প্রায় দুই বছর ধরে অপারেশন থিয়েটারে ঝুলছে ডাবল তালা। তালা না খুলতে খুলতে তালায়ও মরচে ধরে গেছে। রোগী, ডাক্তার, নার্সদের পদচারনা না থাকায় অপারেশন থিয়েটারের বাইরে রোগী ও রোগীর স্বজনরা দিনে রাতে মূত্রত্যাগ করছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ৫০ শয্যা হাসপাতালের ওটি রুমের বাইরের চিত্র এটি। 

২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল থেকে কলাপাড়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় সীমাহীন দূর্ভোগে উপকূলীয় তিন লক্ষাধিক মানুষ। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশুরা।

দুই বছর আগে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় কলাপাড়া হাসপাতাল পুরস্কার পেলেও এখানে এখন চিকিৎসা হয় শুধু জ্বর, সর্দি ও কাশির। একটু গুরুতর জখম কিংবা হাত-পা ভাঙ্গার রোগী এলেই ঝুঁকি এড়াতে ডাক্তাররা চালু করেছে রেফার সিস্টেম। কেননা কোন টেষ্ট কিংবা এক্সরে সুবিধা ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি হাসপাতালে না থাকায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে পটুয়াখালী কিংবা বরিশাল হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। একজন দূর্ঘটনায় আহত রোগীর পিছনে “অতিরিক্ত সময়” ব্যয় করলে ডাক্তারদের প্রাকটিস বানিজ্যে সময় কম পাবেন এ জন্য রোগী রেফার প্রথা চালু করেছে বলে অভিযোগ রোগী ও এলাকাবাসীর। এ কারনে কলাপাড়া হাসপাতালে শুধু রুটিন চিকিৎসা সেবা। তাতেও গুনতে হচ্ছে ভিজিট।

হাসপাতালে গর্ভবর্তী মায়েদের চিকিৎসা সেবা ও সিজারিয়ান বন্ধ থাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে কলাপাড়ার ক্লিনিক মালিকরা। এইসব ক্লিনিকে গত এক বছরে একাধিক মা ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে সিজারিয়ান ডাক্তার না থাকায় জরুরী প্রয়োজনে রোগীরা ছুটছে ক্লিনিকগুলোতে।

সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার আশায় রোগীর স্বজনরা ২০-৩০ হাজার টাকা প্রতিটি অপারেশনে খরচ করলেও ক্লিনিকগুলো আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি না থাকায় এ রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই সব ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। উল্টো যারা ব্যবস্থা নিবেন তারাই ওইসব ক্লিনিকে দিনে রাতে প্রাকটিস করেন।

রোগীদের অভিযোগ, সব থাকতেও হাসপাতালে কিছুই নেই। অথচ ডাক্তাররা ক্লিনিকে বসলে সেখানে ভিজিট বানিজ্য চালু থাকায় টেকনেশিয়ান না থাকলেও সেই সব লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নাকি সব টেস্ট হয়। কলাপাড়ার হাসপাতালে সিজারিয়ান ডাক্তার ও অ্যানেসথিশিয়া (অবশকরণ) ডাক্তার না থাকায় সব ধরণের অপারেশন বন্ধ থাকলেও অজ্ঞাত কারণে হাসপাতালে এই দুই ডাক্তার পদায়ন করা হচ্ছে না।

২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কলাপাড়ায় দুদক ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অয়োজিত গনশুনানিতে কলাপাড়া হাসপাতালের বেহাল দশার চিত্র তুলে ধরা হয়। তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক ও দুদক বরিশালের পরিচালক আক্তার হোসেন এর সঞ্চালনায় ওই শুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ এক মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবার পরিবেশ ফিরিয়ে অনার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশের ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও স্বাস্থ্য সেবার মান আরও নিম্নমুখী হয়েছ বলে অভিমত সচেতন কলাপাড়া বাসীর।

সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা অনুসন্ধানে গিয়ে বের হয়ে এসেছে বর্তমান স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন করুণ চিত্র। ডাক্তার আছেন কিন্তু চিকিৎসা হয় ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররা একাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে প্রাকটিস করায় অফিস টাইমে রোগীরা নামমাত্র চিকিৎসা পাচ্ছে। ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অন্তত ২৫ জন দালাল রয়েছে। এরা আবার ডাক্তারদেরও পোষ্য। এ দালালদের কারণে রোগী হাসপাতালে আসলেই তাদের নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। এমনকি রোগীর স্বজনদের সাথে দালালদের ও দালালে দালালে মারামারির ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি পুলিশ তিন দালালকে আটক করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় এই দালালদের দৌরাত্ব বন্ধ হয়নি।

হাসপাতালে কোন টেস্ট,এক্সরে সুবিধা পায়না রোগীরা। অথচ সবকিছুই আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ডাক্তারদের পার্সেন্টিজ বানিজ্যের কারণে জ্বর,কাশি নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসলেও তাদের বিভিন্ন টেস্ট দিয়ে পাঠানো হয় ডাক্তাদের নির্দিষ্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। ৩০-৪০ ভাগ পার্সেন্টিজ প্রতি টেস্টে।

হাসপাতালে ফ্রি টেস্ট, তাই ভালো হয়না এই অজুহাত দেখিয়ে সব রোগীকেই পাঠানো হয় বাইরে ক্লিনিকে। অথচ অধিকাংশ ক্লিনিকে টেকনেশিয়ান নেই। তারপরও ভুলে ভরা টেস্টের রিপোর্ট দেখে রোগীদের দেয়া হচ্ছে ভুল চিকিৎসা। কোন কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়া ও ঝাড়–দারও নাকি টেস্ট করে এ কথা জানালেন একাধিক রোগীর স্বজন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য প্রশাসক ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, হাসপাতালে সিজারিয়ান ডাক্তার ও অ্যানেসথিশিয়া ডাক্তার না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ আছে। মেডিকেল অফিসাররা ছোট খাটো অপারেশন করছেন। তবে হাসপাতালে সব কিছুই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আছে। তারা স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে কাজ করছেন।

(এমকেআর/এসপি/মে ২৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test