E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গলাচিপায় খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব শতাধিক গরুর মৃত্যু

২০১৮ জুন ০৫ ১৫:৫৪:৩১
গলাচিপায় খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব শতাধিক গরুর মৃত্যু

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : গলাচিপায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক হারে খুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার গরুর খুরা রোগ দেখা দেয়ায় মালিকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সামনে তাদের চাষাবাদ মৌসুম তাই পশুগুলোর রোগ সারাতে না পারলে কৃষকদের বিপাকে পড়তে হবে। 

এদিকে কৃষকরা প্রাণী সম্পদ অফিসে গিয়ে শুধু পরামর্শ মিলছে কিন্তু মাঠ পর্যায়ে প্রানী সম্পদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ পর্যান্ত উপজেলায় খুরা রোগে প্রায় শতাধিক গরু মারা যাবার খবর পাওয়া গেছে। জনবল সঙ্কটের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গলাচিপা উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় মহিষের সংখ্যা ১১হাজার ৪৬৫টি, গরুর সংখ্যা ১লাখ ৩৬হাজার ৮১৮টি, ছাগলের সংখ্যা ৪৮হাজার ৬১৬টি ও ভেড়ার সংখ্যা ১৬হাজার ৪৮৮টি।

এদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পক্ষিয়া গ্রামের নুরুল হক গাজীর ৭টি গরুর ৪টিতে, হয়জল হক প্যাদার ৭টি গরুর ৫টিতে, চরখালী গ্রাামের ইদ্রিস হাং ৯টি গরুর ৫টিতে, রুবেল সিকদারের ৩টিতে খুরা রোগ দেখা দিয়েছে। দক্ষিন পানপট্টির খরিদায় আঃ মালেক প্যাদা ৩টি গরুও পক্ষিয়া গ্রামের চম্পার ২টি খুরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চম্পা বেগম আক্রান্ত গরুর জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে গিয়ে বিনামূল্যের ঔষুধ আনতে দেখা গেছে। উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন দুটি ইউনিয়ন চরকাজল ও চরবিশ্বাস।

উত্তর চর বিশ্বাস গ্রামের ফিরোজ দফাদার জানান, তার ৫টি গরুর ৪টিতে,বাবুল মুন্সির ৩টি গরুতে খুরা রোগ দেখা দিয়েছে। এমনকি এ এলাকায় খুরা রোগে গরু ও বাছুর মারা গেছে। মতলেব গাজী, পূর্ব চরবিশ্বাস গ্রামের মোসলেম হাং, বাচ্চু সিকদার, আহমেদ মৃধার প্রত্যেক জনের ১টি করে গরু খুরা রোগে মারা গেছে। মাস দুই আগে লিটন মোল্লার ৭০ হাজার টাকার দামের একটি মহিষ খুরা রোগে মারা যায়। আমখোলা ইউনিয়নের বাউরিয়া গ্রামের সিদ্দিক মৃধা ও আশ্রাব গাজীর ১টি করে বাছুর ও আবুল সিকদারের ১টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষক বাবুল জানান, উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে গিয়ে ক্ষুরা রোগের কোনো ঔষুধ পাই নি। শুধু মিলছে এ বিষয়ে পরামর্শ। খুরা রোগ সকল বয়সের গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়ার ভাইরাস জনিত একটি মারাত্মক অতি ছোঁয়াছে রোগ। শরীরের তাপমাত্রা অতি বৃদ্ধি পায় খুরা রোগের অন্যতম লক্ষন। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরার মধ্যভাগে ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে লালা ঝরে, সাদা ফেনা বের হয়। কখনোবা ওলানে ফোসকার সৃষ্টি হয়। পশু খোড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। খেতে না পেরে অল্প সময়ে পশু দুর্বল হয়ে পরে। এ রোগে গর্ভবর্তী গাভীর প্রায়ই গর্ভপাত ঘটে থাকে। দুধালো গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মক ভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়।

ফলে কৃষকদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হয়। তাই খুরা রোগ থেকে গরুকে বাঁচানোর জন্য আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ পশুর ক্ষত পটাশ ও আইওসান মিশ্রিত পানি দ্বারা ধৌত করে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০গ্রাম (২চা চামচ) ১লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখ পরিস্কার করে দিতে হবে। সোহাগার খৈ মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ে প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। পশুকে শুষ্ক মেঝেতে রাখতে হবে কোনো অবস্থায় কাদা মাটি বা পানিতে রাখা যাবে না। সুস্থ অবস্থায় গবাদি পশুকে বছরে দুইবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। খাবার সোডা ৪০ গ্রাম ১লিটার পানিতে মিশিয়ে পায়ের ঘা পরিস্কার করে সালফানাসাইড পাউডার লাগাতে হবে। সালফানামাইড/ টেট্রাসাইক্লিন অথবা উভয় ঔষধ ৫-৭দিন ব্যবহার করতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষকদের অভিযোগ গুলো সত্য নয়। ক্ষুুরা রোগের ভ্যাকসিন আছে যা কৃষকদের বিনামূলে সরবারহ করা হয়। এ মৌসুমে পশু মারা যাওয়ার সংখ্যা খুবই কম। তবে মারা যাওয়া সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবে কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কৃষকদের সচেতনতাই পারে এ রোগ প্রতিরোধ করতে।

(এসডি/এসপি/জুন ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test